আমের মুকুল আসার সময় থেকেই বিভিন্ন রোগ-পোকার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সঠিক প্রতিকার ব্যবস্থা না নিতে পারলে ফলনে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। প্রতিকারের ব্যবস্থা জানাচ্ছেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুজিতকুমার রায় ও ড. সুব্রত দত্ত।
আমের নানা রোগের মধ্যে মুকুলের ঝলসা, গুটির ক্ষত ও ঝরা, চয়ন পরবর্তী পর্যায়ে ফল পচা, সাদা গুড়োচিতি, গুচ্ছ মুকুল বা ম্যালফরমেশন, আঁচিল/ক্যাংকার, পাতা ও ডগা ঝলসা, কাণ্ডের আঠা ঝরা ও ডাল শুকনো, পাতা, মুকুল ও ফলে আস্তরন এবং আমের বোঁটা পচা ও ফল পচা রোগ উল্লেখযোগ্য। জেনে নিন প্রতিকারের উপায়।
মুকুলের ঝলসা রোগ
প্রস্ফুটিত মুকুলে ফুল ফোঁটার সময় ঘন কুয়াশা, অতিরিক্ত আর্দ্রতা বা বৃষ্টি হলে ছত্রাকের আক্রমণে মুকুল ও ফুলগুলি কালো হয়ে যায়। পরে শুকিয়ে ঝেড় পড়ে। আক্রান্ত মুকুলে আমের গুটি হয় না।
প্রতিকার
ফুল ফোঁটার সময় ২৪-৪৮ ঘণ্টা কুয়াশা বা হঠাৎ বৃষ্টি হলে আগাম সাবধানতার জন্য কার্বেন্ডাজিম ও ম্যানকোজেব, থায়োফেনেট মিথাইল বা কপার অক্সিক্লোরাইড ছত্রাকনাশক আঠার (০.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে) সঙ্গে জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
গুটির ক্ষত দাগ
মটর দানার মতো আমের গুটিতে, কখনও বা মার্বেল আকৃতি আমের গায়ে অবতল আকৃতির ছোট ছোট কালো দাগ হয়। আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে গুটি বা বাড়ন্ত ফল ঝরে যায়।
প্রতিকার
ছত্রাক ঘটিত এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আমের গুটি ও বাড়ন্ত ফলে ছত্রাকনাশক কার্বেন্ডাজিম বা থায়োফেনেট মিথাইল-এক গ্রাম/ লিটার জলে আঠা-সহ গুলে এক-দু’বার স্প্রে করতে হবে।
সাদা গুঁড়িচিতি রোগ
ফুল ফোঁটা থেকে গুটি ধরার সময় ছত্রাকের আক্রমণে পুষ্পদণ্ড, পুষ্পমঞ্জরী ও ছোট আমের গুটিতে সাদা পাউডারের আস্তরণ পড়ে। ফুল ও গুটিগুলি শুকিয়ে কালো হয়ে ঝরে যায়।
প্রতিকার
এই রোগ প্রতিকারে ফুল ফোঁটার আগে পুষ্পমঞ্জরী দণ্ডের দৈর্ঘ্য যখন তিন-চার ইঞ্চির মতো হবে তখন জলে গোলা সালফার ঘটিত ছত্রাকনাশক (যেমন- সালফেক্স ৮০ শতাংশ পাউডার) ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে আঠার সঙ্গে গুলে স্প্রে করতে হবে। এছাড়াও ট্রাইডেমেফন ২৫ শতাংশ পাউডার এক গ্রাম বা কার্বেন্ডাজিম ৫০ শতাংশ পাউডার এক গ্রাম বা হেক্সাকোনাজল পাঁচ শতাংশ-০.৫ মিলি প্রতি লিটারে জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এই সময় শোষক পোকার উপস্থিতি বেশি মাত্রায় থাকলে ছত্রাকনাশকের সঙ্গে কীটনাশক ইমিডাক্লোপ্রিড ১৭.৮ শতাংশ ইসি ০.৩ মিলি প্রতি লিটার জলের সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। রোগের উপস্থিতি বুঝে ১০ দিন বাদে একবার এবং গুটি ধরার সময় আরও একবার অবশ্যই কার্বেন্ডাজিম ৫০ শতাংশ পাউডার দিয়ে স্প্রে করলে এই রোগ দমন করা যায়।
আমের গুচ্ছ মুকুল বা ম্যালফরমেশন
এ রোগের জন্য পুষ্পমুঞ্জরীর ফুলগুলি ঠাসাঠাসি ও ঘন সন্নিবেশিত হয়ে লম্বাটে বলাকৃতি মতো হয়, পুষ্পমঞ্জরী ফল ধারণে অক্ষম হয়। অনেক সময় ডালের আগায় বা শাখা-প্রশাখার মধ্যবর্তী অংশ থেকে অগ্রজ মুকুলগুলি ছোট ছোট গুচ্ছ পাতায় রূপান্তরিত হয়। এরূপ লক্ষণকে ‘ভেজিটেটিভ’ ম্যালফরমেশন বলে।
প্রতিকার
যে সমস্ত বাগিচায় রোগের তীব্রতা কম সেখানে আক্রান্ত গুচ্ছ মুকুলগুলি ভেঙে দিতে হবে। একই গাছ থেকে বেশি মাত্রায় মুকুল কলমের জন্য নেওয়া যাবে না। আক্রান্ত গুচ্ছ মুকুলগুলি ভেঙে দেওয়ার পর কার্বেন্ডাজিম ৫০ শতাংশ পাউডার (১গ্রা/লি) মাকড়নাশের সঙ্গে (যেমন ডাইকোফল ২.৫ গ্রা/লি বা ডায়াফেনথিউয়ন এক মিলি/লি) জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।