সৌরভ মাজি, বর্ধমান: কিছুদিন আগেও অনেকে গুগলির নাম শুনলে নাক সিঁটকাতেন। কিন্তু চিকিৎসকদের পরামর্শে অনেকেই এখন খাদ্যতালিকায় গুগলির পদ রাখছেন। ঠিক যেভাবে গ্রাম বাংলা থেকে হারাতে বসা চুনো মাছের কদর বেড়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র স্বাদের জন্য নয়, তার খাদ্যগুণের কারণেও। সেরকমই শহরের বাজারে গুগলির চাহিদাও নিত্যদিন বেড়ে চলেছে। আর সেই গুগলি (Shellfish) সংরক্ষণ, উৎপাদন ও বিপণনের মাধ্যমে বাজার গড়ে তোলা হচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী-১ নম্বর ব্লকে। রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের প্রচেষ্টায় খুব শীঘ্রই গুগলিকে কেন্দ্র করে একটা বড় অংশের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটতে চলেছে পূর্বস্থলীর গ্রামে গ্রামে।
এই ব্লকের কোবলার বাঁশদহ ও চাঁদের বিলকে সংরক্ষণ করতে দুই দশক আগে আন্দোলন শুরু করেছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা স্বপনবাবু। জল সংরক্ষণ, খাল-বিলে থাকা চুনো মাছ সংরক্ষণের সেই আন্দোলন এখন রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে গিয়েছে। গ্রামবাংলা থেকে হারিয়ে যেতে বসা বিভিন্ন ধরণের চুনোমাছকে সংরক্ষণ করে আবার উৎপাদন বাড়িয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে পূর্বস্থলী-১ নম্বর ব্লকের ওই দুই বিল থেকে। সেই বিলকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে পর্যটন কেন্দ্রও গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ওই বিলে শীতের মরশুমে পরিযায়ী পাখিরা ভিড় জমায় এই দুই বিলে। তার টানে প্রচুর পর্যটক আসেন এখানে। রাজ্য সরকারের তরফে পর্যটকদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন পরিকাঠামো গড়ে দিচ্ছে।
[আরও পড়ুন: কাশ্মীরি লাল আপেল এবার ফলবে ‘অরণ্য সুন্দরী’ বান্দোয়ানেও, চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের]
এবার এই বিলকে ঘিরে গুগলি সংরক্ষণের পরিকল্পনা নিয়েছেন মন্ত্রী। সেখানে গুগলির উৎপাদন বাড়ানো এবং তা বিক্রি করে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার ভাবনা রয়েছে। স্বপনবাবু জানান, সম্প্রতি তিনি এই বিল ও সংলগ্ন গ্রাম পরিদর্শনের সময় লক্ষ্য করেন কয়েকজন মহিলা গুগলি ধরে নিয়ে বাজারে যাচ্ছে। তাঁরা সেদিন প্রায় ১৫ কেজি গুগলি বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তা দেখেই স্বপনবাবু গুগলি সংরক্ষণ, উৎপাদন ও বিপণনের সিদ্ধান্ত নেন। স্বপনবাবু বলেন, “এই বিলের ধারেই গুগলির বাজার তৈরি করা হবে। পাইকারি ও খুচরো বাজার হবে। স্থানীয়রা খুচরো বাজারে কিনতে পারবেন। দূরের শহর থকে বিক্রেতারা এসে পাইকারি বাজার থেকে গুগলি নিয়ে যেতে পারবেন।” তার ফলে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নও ঘটবে। গুগলি উৎপাদন ও সংরক্ষণে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে। বিল থেকে প্রতিদিন কয়েক টন গুগলি কীভাবে উৎপাদন করা যায় তারও ভাবনা শুরু হয়েছে।