শম্পালী মৌলিক: থ্রিলার ছবি, ইন্টারেস্টিং কাস্টিং, ‘ম্যাডাম সেনগুপ্ত’ নিয়ে আগ্রহ ছিল। ট্রেলারে আন্দাজ করেছিলাম ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, কৌশিক সেন, রাহুল বোসকে নিয়ে সায়ন্তন ঘোষাল থ্রিলারটা হয়তো মন্দ বানাবেন না। আন্দাজ মিলে গেল। হুডানইট-এর মেজাজেই বোনা ছবিটা। সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’ চিত্রনাট্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শহরে কয়েকটা খুন হয়। যেখানে দেখা যায় প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট অনুরেখা সেনগুপ্ত (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) আর নাট্যকার সাত্যকি সেনের (কৌশিক সেন) মেয়ে খুন হয়ে গিয়েছে। যে কারণে ম্যাডাম সেনগুপ্ত অর্থাৎ অনুরেখা কলকাতায় আসে। নিজের মেয়ের খুনের কিনারা করতে বদ্ধপরিকর সে। তাকে সাহায্য করে বন্ধু রঞ্জন (রাহুল বোস)। যে কিনা এক সংবাদপত্রের প্রধানমুখ। এই খুনের তদন্তে একের পর এক চরিত্র জড়ো হয়। আসে রঞ্জনের ছেলে নীল (রৌনক দে ভৌমিক), স্ত্রী (অনন্যা চট্টোপাধ্যায়), প্রভাবশালী বিলাস (সুদীপ মুখোপাধ্যায়), সাত্যকির পুরনো কানেকশন যদুবাবু (পরান বন্দ্যোপাধ্যায়) ও লাল্টুদা (খরাজ মুখোপাধ্যায়) এরকম আরও কয়েক জন। তারপর এক-একটা চরিত্র এক্সপ্লোর করতে করতে গল্প এগোয়। আসে ছাত্র- ইউনিয়ন, কলেজ রাজনীতির প্রসঙ্গ।
রাজনীতি ভীষণভাবে জড়িয়ে ছবির চিত্রনাট্যে। ‘আবোল তাবোল’-এর এক একটি চরিত্র ঘুরে ঘুরে আসে খুনের ক্লু হিসাবে। তবে সৌগত বসুর লেখা গল্প অহেতুক জটিল বোধ হয়। প্রথমার্ধ ম্যাডাম সেনগুপ্তর জীবনছবি তৈরি করে। কম বয়েসের ঋতুপর্ণা -কৌশিককে দারুণ মানিয়েছে। তাঁদের দাম্পত্যের দূরত্ব স্পষ্ট সেখানে। পরে কন্যার মৃত্যুতে গল্প অন্য মোড় নেয়। মেয়ের মৃত্যুর কারণ অন্বেষণে অনুরেখা শেষ অবধি যায়। এমনকী প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে দেখা করতেও পিছপা হয় না, যখন প্রাথমিক সন্দেহভাজনের তালিকায় সাত্যকি এসে যায়। সেখানে ঋতুপর্ণার অভিনয় অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য। তবে তাঁর বন্ধুর ভূমিকায় রাহুল বোসের অভিনয় আশাহত করে। তাঁকে দেখে মনে হয় না সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত, বরং তাঁর চেহারা যেন পুলিশ-সদৃশ। কৌশিক সেন শিক্ষক- নাট্যকারের চরিত্রে দুরন্ত। দুটো সময়কালেই তিনি নিখুঁত। পরান বন্দ্যোপাধ্যায় স্বল্প পরিসরে বেশ ভালো। পুলিশের চরিত্রে, যার সঙ্গে সাত্যকির বৈরিতা আছে, সেখানে সুব্রত দত্ত হালকা ওভার দ্য টপ হলেও, তাঁকে ভালো লাগবেই। দেবপ্রিয় মুখোপাধ্যায় নাট্যপ্রেমী ও প্রতিশ্রুতিমান অভিনেতার চরিত্রে অত্যন্ত ইন্টারেস্টিং। তাঁকে আরও ছবিতে দেখতে চাই। তাঁর আর অনন্যার যৌথ দৃশ্য মনে দাগ কেটে যায়। একটাই খটকা লাগে, একটা নাটকে সুযোগ পাওয়ার জন্য মানুষ কত দূর যেতে পারে?
যাই হোক সবথেকে ভালো লাগে দ্বিতীয়ার্ধে যখন এক ফ্রেমে ঋতুপর্ণা আর অনন্যা- উপভোগ্য বলতেই হয়। ঋতুপর্ণা আদ্যন্ত স্বাভাবিক অভিনয়ে মনোযোগ টানলেন, অনন্যা দেখালেন ওস্তাদের মার শেষ সিনে। অল্প স্ক্রিন টাইমেও তিনি নজরকাড়া। টেলিভিশন থেকে বড়পর্দায় আসা রৌনক দে ভৌমিককে চমৎকার লাগল। থ্রিলার ছবি তাই সবটা বলছি না প্রেক্ষাগৃহে দেখাই ভালো। ছবির শেষভাগে অনুপম রায়ের গানটা শুনতে ভালো লাগে। ঋতুপর্ণা কেন 'ম্যাডাম সেনগুপ্ত' ছবি দেখলেই বুঝবেন দর্শক।