রিংকি দাস ভট্টাচার্য: শনিবার না কি রবিবার? সরস্বতী পুজো ঠিক কবে? বাগদেবীর আরাধনার প্রাক্কালে এই লাখ টাকার প্রশ্ন ঘিরে চলছে তোলপাড়। শাস্ত্রীয় মতে, মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথির ঊষালগ্নে দেবী সরস্বতীর বন্দনা করতে হবে। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত ও গুপ্তপ্রেস-দুই পঞ্জিকা মতেই কাল শনিবার পঞ্চমী লেগে যাচ্ছে, যদিও একটু বেলার দিকে। কাটছে রবিবার সকাল পেরিয়ে। তাই শাস্ত্ররীতি মেনে রবিবার প্রাতঃকালই সরস্বতী পুজোর উপযুক্ত সময় বলে বিধান দিচ্ছেন শাস্ত্রজ্ঞরা। কিন্তু পেশাদার পুরোহিতদের অনেকে বলছেন, রবিবার সকালের সময়টি বড্ড কম। উপরন্তু পুরোহিতের আকাল। ফলে শনিবার পঞ্চমী লেগে যাওয়ার পর ধীরেসুস্থে পুজো সেরে নেওয়াই ভাল। ঊষালগ্ন না হয় না-ই হল।
[সমকামী সম্পর্কে বাধা পরিবার, সঙ্গিনীকে ফিরে পেতে কোর্টে তরুণী]
আর এই চক্করে আমজনতা পড়েছে আতান্তরে। একেবারে গেরস্থঘরের পুজো হলেও সরস্বতীর আরাধনার ঝক্কি কম নয়। উপচারের আয়োজনও বিস্তর। আগের রাত থেকে যার তোড়জোড় শুরু করতে হয়। বেশিরভাগ ক্যালেন্ডারও বলছে, ১০ ফেব্রুয়ারি রবিবার সরস্বতী পুজো। বাড়ি থেকে বারোয়ারি, স্কুল থেকে কলেজ, আয়োজকদের প্রস্তুতিও ছিল তেমনই। এখন পুজোর সময় বেমক্কা একটা দিন এগিয়ে এলে সামাল দেওয়া হবে কীভাবে? ভেবে ঘাম ছুটছে অনেকেরই। রবিবার ভোরে শাস্ত্রীয় খুঁটিনাটি মেনে নিখুঁত পুজো করব, নাকি শনিবার নিশ্চিন্তে রিল্যাক্সড মুডে অঞ্জলি দেব? প্রথম ক্ষেত্রে পুজোর জন্য হাতে সময় বাড়ন্ত। তার উপর পুরোহিত জোগাড়ের সমস্যা। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আচারনিষ্ঠায় ঘাটতি পড়বে বটে, তবে ঝক্কি পোহাতে হবে অনেক কম। সময় বেশি থাকায় পুরোহিত পেতেও খুব একটা মুশকিল হওয়ার কথা নয়। এত সব বিচার-বিবেচনা করে অনেক বাড়ি-ক্লাব শনিবারই পুজোর পাট চুকিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই পথে হাঁটছে কিছু স্কুলও। এক্ষেত্রে উপরি পাওনা হিসাবে থাকছে রবিবারের ছুটি।
[লাইনে ইন্টারলকিংয়ের কাজ, শিয়ালদহ মেন শাখায় বাতিল ১১৪টি লোকাল ট্রেন]
তবে শাস্ত্র-রীতি মেনে চলাদের সংখ্যাও কম নয়। বহু বাড়ি, স্কুল, ক্লাবে রবিবার ভোর ভোর সরস্বতীর বন্দনা হবে, যেমন হয়ে আসছে চিরকাল। হালকা শীত আর শিশিরের গন্ধ গায়ে মেখে অঞ্জলির ফুল মুঠোয় ভরবে পড়ুয়া কচিকাঁচার দল। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে শনিবার অর্থাৎ ২৬ মাঘ, ৯ ফেব্রুয়ারি পঞ্চমী লাগছে বেলা ১২টা ২৬ মিনিটের পর। ছাড়ছে পরদিন, অর্থাৎ রবিবার দুপুর বেলা ২টো ৯ মিনিটে। অন্যদিকে গুপ্তপ্রেসের মত অনুযায়ী, শনিবার পঞ্চমী লাগছে সকাল ৯টা ২০ মিনিটে, ছাড়ছে রবিবার সকাল ১০টা ২৬ মিনিটে। বহুল প্রচলিত গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অরিজিৎ রায়চৌধুরি বৃহস্পতিবার বলেন, রবিবার সুর্যোদয় ৬টা ১৫ মিনিটে। আর পঞ্চমী ছেড়ে যাচ্ছে সকাল ১০টা ২৬ মিনিটে। ফলে রবিবার পুজোর জন্য মিলবে সর্বসাকুল্যে ৪ ঘণ্টা ১১ মিনিট। যেখানে সূর্যোদয় ধরে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে রবিবার সরস্বতী পুজোর জন্য বরাদ্দ আট ঘণ্টা। অরিজিৎবাবুর কথায়, “পূর্বাহ, অর্থাৎ সূর্যোদয়ের আগের সময় না মেলায় শনিবার দেবকৃত্য করা সম্ভব নয়। রবিবারই পুজো হওয়া উচিত।” শাস্ত্রজ্ঞ নিতাই পণ্ডিতও বলেন, “দেবীপূজার নির্ধারিত তিথি মেনেই পুজো করতে হবে।” কারও অসুবিধা থাকলে? সেক্ষেত্রে নির্ধারিত দিনের ‘ব্রাহ্ম মুহূর্ত’ অর্থাৎ সূর্যোদয়ের ৪ দণ্ড (১ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট) আগে পুজো শুরু করে তিথি-নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেরে ফেলার নিদান দিচ্ছেন অরিজিৎবাবু। যদিও শীতের শেষরাতে সে আয়োজন কতজনের পক্ষে করা সম্ভব, তা নিয়ে গুপ্তপ্রেসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিজেই সন্দিহান। শাস্ত্রীয় রচনাকার চৈতন্যময় নন্দ বলছেন, যে কোনও পুজোর অন্যতম শর্ত হল নির্ঘণ্ট অনুসরণ। সে শর্ত অক্ষুণ্ণ রেখে মন্ত্র সংক্ষিপ্ত করা যেতে পারে। একাধিক মন্ত্রের বদলে শুধু একটি মন্ত্র উচ্চারণ করেও পুজো হতে পারে। আর যাঁরা পুরোহিতের ব্যবস্থা করতে পারবেন না, তাঁরা ভক্তিভরে নিজের পুজো নিজেই সমাপন করতে পারেন। কারণ শাস্ত্রমতে, নিজের পুজো নিজে করাই সর্বোত্তম। বস্তুতই শাস্ত্র মেনে সরস্বতী পুজো সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময় লাগে৷ পুজো, অঞ্জলি, হাতেখড়ি, যজ্ঞ সব খুঁটিনাটি মিলিয়ে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক। তবে প্রচুর পুজো করতে হয় বলে পেশাদার পুরোহিতরা অনেকেই ‘শর্ট কাট’ করে নেন, বিশেষত বারোয়ারিতে। আয়োজকদেরও বিশেষ আপত্তি থাকে না।
[অনুব্রতর গড়ে তৃণমূল নেতার বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ, উড়ল বাড়ির চাল]
তবে যেদিনই পুজো হোক না কেন, সপ্তাহান্তে উৎসবের আমেজে বিলক্ষণ জোয়ার লাগছে। শনি-রবি এমনিই ছুটি। সরস্বতী পুজো উপলক্ষে সোমবারও রাজ্য সরকার ছুটি দিয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ। মেয়াদ বেড়ে বইমেলাও শেষ হচ্ছে সোমবার। সব মিলিয়ে শনি থেকে সোম পুরোদস্তুর ছুটির আবহ। পোয়াবারো জেনারেশন ওয়াইয়ের। তাদের কাছে এবার সরস্বতী পুজো দু’দিন। দু’দিনই হ্যাপি ভ্যালেনটাইন!
The post শনি না রবি, বাগদেবীর আরাধনার আগে পঞ্চমী তিথি নিয়ে আতান্তরে আমজনতা appeared first on Sangbad Pratidin.