শুকদেব গোস্বামী: প্রায় সব হিন্দু ঘরেই প্রতি বৃহস্পতিবার নিয়ম-নিষ্ঠা সহকারে লক্ষ্মীপুজো (Laxmi Pujo) করা হয়। পদ্মের উপর আসীন দেবী লক্ষ্মী আধ্যাত্মিক পবিত্রতা ও অনাসক্তির প্রতীক। লক্ষ্মীর হাতের প্রহরণ শুভশক্তির জাগরণ ঘটায়, অশুভশক্তির বিনাশ করে। মন দিয়ে মা লক্ষ্মীর পুজো ও প্রার্থনা করলে সবার কল্যাণ ও মঙ্গল বিধান হয়।
বৃহস্পতি হল লক্ষ্মীর প্রতীক। বৃহস্পতি শুভ গ্রহ। তাই বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর আরাধনা করলে সংসারের সকল দুঃখ দূর হয়। আর্থিক সমস্যারও সমাধান হয়। কোনও বৃহস্পতিবার যদি পূর্ণিমা পড়ে, সেদিন কোনও রমণী উপবাস করে লক্ষ্মীদেবীর পুজো করলে ধন-সম্পদে তাঁর গৃহ পূর্ণ হয় বলে শাস্ত্রে উল্লেখ আছে।
[আরও পড়ুন: বাঁকুড়া থেকে ফেরার পথে গাড়িতে ধাক্কা লরির, জখম তৃণমূল নেত্রী সায়ন্তিকা]
শুদ্ধ বসনে বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুজো করলে অর্থ লাভ হতে পারে, ব্যবসায় উন্নতিও হয়। মনের মতো চাকরি পাওয়া যায়, সুখ-সমৃদ্ধি লাভ হয়, শরীর-স্বাস্থ্য ভাল থাকে। দেবী লক্ষ্মীর বার হিসেবে বৃহস্পতি দিনটিকেই মান্য করা হয়। বৃহস্পতির উন্নতির জন্য হলুদ পোখরাজ, হলুদ সুতো হাতে ধারণ করার বিধানও আছে শাস্ত্রে।
শস্য ও সম্পদের দেবী লক্ষ্মী। তাই ভাদ্র সংক্রান্তি, পৌষ সংক্রান্তি ও চৈত্র সংক্রান্তিতে এবং আশ্বিন পূর্ণিমা ও দীপাবলিতেও অনেকে লক্ষ্মীর পুজো করেন। কথিত, এই দিনে লক্ষ্মীপুজা করলে হৃদয়ে ও গৃহে চঞ্চলা লক্ষ্মী হন অচলা। তবে লক্ষ্মী কেবলমাত্র সম্পদের দেবী নন, তিনি শুধু ধন-ই দেন না, জ্ঞান ও সচ্চরিত্রও প্রদান করেন। এককথায়, লক্ষ্মীপূজা করলে, মানুষ সার্বিকভাবে সুন্দর ও চরিত্রবান হয়। শুধুমাত্র তাই পুজোর দিন নয়, প্রতিদিনই যদি দেবীর পায়ের চিহ্ন আঁকা হয়, তবে তা অক্ষয় সমৃদ্ধি প্রদান করে। আর, প্রতিদিন না পারলে, বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার লক্ষ্মীদেবীর পুজোর তিথি থাকলে তো অবশ্যই তাঁর পুজো করা উচিত।
[আরও পড়ুন: জানেন, অগ্রহায়ণ মাসে কোন দেবদেবীর পুজো করলে ভাগ্যোন্নতি হয়?]
লক্ষ্মীপুজোর কিছু নিয়ম আছে। এর বিপরীত হলে তিনি রুষ্ট হবেন। তাই পুজোর সময় কখনওই ঘণ্টা বাজাবেন না। পুজোর সময় তুলসী পাতা নিবেদন করবেন না। কিন্তু নারায়ণের পায়ে তুলসী পাতা দিতে পারেন, তিনি আবার এতে খুশি হন। লক্ষ্মীর আরাধনার সময় অবশ্যই আলপনা আঁকবেন।আলপনায় দেবীর পায়ের ছবিও আঁকবেন। মঙ্গলঘটের পাশেই তাঁর পা আঁকবেন। পুজো শেষ করে লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়বেন। মনে রাখবেন, স্টিলের বাসনপত্রের বদলে পিতল, কাঁসা, তামার বাসন ব্যবহার করা শ্রেয়। এসব নিয়মগুলো মানলে দেবী তুষ্ট হন। তাই গৃহসমৃদ্ধি অক্ষুণ্ণ রাখতে যথাবিহিত নিয়মে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা গৃহস্থের একান্ত কর্তব্য।