দুলাল দে: ফেডারেশন কর্তারা এখন কোনদিকে নজর দেবেন, নিজেদের গদি? না কি আইএসএল এবং আই লিগ আয়োজন করা? একদিকে আইএসএল এবং আই লিগ আয়োজন নিয়ে নাজেহাল অবস্থা ফেডারেশন কর্তাদের। অপর দিকে রাজ্য সংস্থা না কি ফেডারেশন, কোথায় কর্তাদের নিজেদের পদ কোথায় থাকবে তা ঠিক করার জন্য জটিল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে ভারতীয় ফুটবলে।
১২ নভেম্বর আইএসএলের ক্লাবগুলির সিইওদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করেন ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবে। জানতে চান, ইন্ডিয়ান সুপার লিগ নিয়ে ক্লাবগুলির কাছে আলাদা কোনও পরিকল্পনা রয়েছে কি না? তাতে হায়দরাবাদ, এফসি গোয়ার মতো কিছু ক্লাবের প্রতিনিধি জানান, ফেডারেশন যদি নিজের থেকেই লিগ চালাতে উদ্যোগী হয়, তাহলে সম্প্রচারের খরচ বাবদ ১৫-২০ কোটি টাকা নিজেরাই তুলে দেবেন। ফেডারেশন সভাপতি অবশ্য জানান, পুরো ব্যাপারটাই এখন আদালতের বিচারাধীন। ফলে তিনি সব কিছু সিদ্ধান্ত একা নিতে পারবেন না। আইএসএলের ক্লাবগুলির সিইওরা এই ভার্চুয়াল মিটিংয়ে থাকলেও ছিলেন না মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলের কোনও প্রতিনিধি।
ফেডারেশন সভাপতির সঙ্গে এই মিটিংয়ের পর এদিন, বৃহস্পতিবার আইএসএল ক্লাবগুলি নিজেদের মধ্যে ভার্চুয়াল মিটিং করেন। সেই মিটিংয়ে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সিইও উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না মোহনবাগানের কোনও প্রতিনিধি। ক্লাবগুলির মিটিংয়ে এদিন মূলত অগ্রণী ভূমিকা নেন হায়দরাবাদ এবং নর্থ-ইস্টের প্রতিনিধি। আলোচনা হয়, ক্লাবগুলি আলাদা করে সুপ্রিম কোর্টে বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়ে দেশে ফুটবল চালু করার জন্য কোনও আবেদন করবে কি না। তখন ঠিক হয়, এখনই আবেদন না করে বরং পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়া হোক। তবে পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে ক্লাবগুলির সাহায্য নিয়ে ফেডারেশন আলাদা করে লিগ করার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু সেই লিগ আদৌ আইএসএলের মানে পৌঁছবে কি না, তা নিয়ে সকলেরই মনে যথেষ্ট সন্দহ রয়েছে। সম্প্রচার কারা করবে, সেটাও এখনও পর্যন্ত বোনা যাচ্ছে না।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে আইএসএলের সব ক্লাবের কাছেই ফেডারেশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল সত্যনারায়ণের চিঠি পৌঁছে যায়। যেখানে ক্লাবগুলিকে আলাদা লিগের পরিকল্পনা জানানোর জন্য ১৮ নভেম্বর দিল্লির ফুটবল হাউসে মিটিংয়ে ডাকা হয়েছে। বলা হয়েছে, সেখানে সব ক্লাবের সঙ্গে আলোচনায় বসে আইএসএলের বিকল্প লিগ নিয়ে ক্লাবগুলির মতামত নেওয়া হবে। তাতেই মনে হচ্ছে, ক্লাবগুলির মতামত পরিষ্কার ভাবে জেনে নিয়ে তার পরের দিন, ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টে সব কিছু জানাবে ফেডারেশন। তারপর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতোই ঠিক হবে ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যত। কিন্তু এরমধ্যেই ফেডারেশন কর্তাদের ভবিষ্যত কী হবে, তা নিয়ে প্রবল চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছে ফেডারেশন অন্দরে। সুপ্রিম কোর্ট ফেডারেশনের যে সংবিধান তৈরি করেছে, তাতে ২৫.৩-এর সি এবং ডি-তে বলা হয়েছে, যে কোনও ব্যক্তি ফেডারেশন না হলে রাজ্য সংস্থা- যে কোনও একটি পদে থাকতে পারবেন।
সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশিত এই সংবিধান এখনই প্রয়োগ হলে, ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা সমস্যায় পড়ে যেতেন। কারণ, বেশির ভাগ সদস্যই সেক্ষেত্রে ফেডারেশন ছেড়ে রাজ্য সংস্থার সদস্য পদ ধরে রাখতেন। সমস্যা হয়ে যেত ফেডারেশন চালাতে। ফলে আদালতের কাছে ফেডারেশনের তরফে আবেদন করা হয়, এই নিয়মটি সেপ্টেম্বরে নতুন কমিটির সময় থেকে চালু করতে। আদালত এই প্রস্তাব মেনে নিয়ে ফেডারেশনকে জানায়, এফিডেভিট করে প্রস্তাব জমা দিতে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ফেডারেশন তা আদালতে জমা দিতে পারেনি। বিভিন্ন রাজ্য সংস্থার কাছে এই ইস্যুতে মতামত জানতে চেয়েছিল ফেডারেশন। বাংলা-সহ প্রায় ২০টি রাজ্য সংস্থা জানিয়ে দেয়, তারা এই নিয়মের বিরুদ্ধে। ফেডারেশনের উচিত আদালতে এই নিয়ম নিয়ে ফের আবেদন করা। ফলে এভিডেভিট জমা দিতে না পেরে ২৪ নভেম্বর স্পেশাল জেনারেল মিটিং ডাকা হয়েছে ফেডারেশনে। সেদিনই ঠিক হবে ভবিষ্যৎ। ফেডারেশনের স্পেশাল জেনারেল মিটিং ডাকতে গেলে কম করে ১৮ দিনের নোটিস দিতে হয়। তবে এক্ষেত্রে সময় কম নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে।
