প্রসূন বিশ্বাস: স্টেডিয়াম থেকে মাথা উঁচু করে বেরচ্ছেন এক যোদ্ধা। যদিও সাজপোশাক ঠিক যোদ্ধার মতো নয়। পরনে সাদা থান। দেড়দিন আগে মাতৃবিয়োগ হয়েছে। আর তারপর মাঠে নেমে ইস্টবেঙ্গলকে রুখে দেন পাঠচক্রের তরুণ গোলরক্ষক অর্ণব দাস। না, মতি নন্দীর কোনও উপন্যাস নয়। চলতি বছরের জুলাই মাসে ঠিক এই ঘটনার সাক্ষী ছিল কলকাতা ময়দান। বাবাকে আগেই হারিয়েছিলেন। অকস্মাৎ হারান মাকেও। ২২ বছর বয়সি গোলকিপার এবারের পুজোয় নিজের জন্য কিছু চাইছেন না। বরং মা দুর্গার কাছে তাঁর প্রার্থনা- সবাই যেন তাদের মা-বাবাকে নিয়ে সুখে থাকতে পারে।
অর্ণব বলছেন, "পুজোতে মা-বাবা কেউ থাকবে না, এটা মেনে নিতে পারছি না। সেজন্য খুব মনখারাপ। মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা থাকবে, যেটা আমার সঙ্গে হয়েছে, সেটা যেন আর কারও সঙ্গে না হয়। আমার মতো অবস্থা পৃথিবীতে আর কারও না হোক। মা-বাবা দুজন চলে যাওয়ার পর দুনিয়াটা আমার কাছে অন্যরকম হয়ে গিয়েছে।"
এবারের পুজোয় (Durga Pujo 2025) কোনও বিশেষ পরিকল্পনা নেই অর্ণবের। উৎসবের মরশুমে কি জীবনে বিশেষ কেউ থাকলে কষ্ট কম হত? না, জীবনে সেরকম নেই। বিপদকালে দাদারা পাশে দাঁড়িয়েছে, বন্ধুরাও সঙ্গে ছিল। কিন্তু সেভাবে বিশেষ কেউ নেই, যাঁর থেকে অনুপ্রেরণা পেতে পারেন। কঠিন সময়ে সেরকম একজন মানুষের সঙ্গ পেলে হয়তো ভালোই হত। তবে একজনের কথা বারবার বললেন অর্ণব। তিনি নবাব ভট্টাচার্য। পাঠচক্রের গোলকিপার জানালেন, "নবাবদা না থাকলে খেলাধুলো হয়তো ছেড়ে দিতে হত। আমার জীবনে ওঁর ভূমিকা বলে বোঝানো যাবে না।"
কলকাতা লিগের ম্যাচের আগে মা-কে দাহ করে অনুশীলনে নেমেছিলেন শিমুরালির তরুণ প্রতিভা। পরদিন ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে অনবদ্য গোলকিপিং করেন। সাদা থান পরেই মাঠে এসেছিলেন অর্ণব। কোনওরকমে ম্যাচের সময়টুকু সাদা থান খুলে জার্সি পরা। এরপর ডাক আসে ভারতের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের শিবিরে যোগ দেওয়ার। যদিও শেষ পর্যন্ত মূল দলে সুযোগ পাননি। সেটাও একটা শিক্ষা। তিনি জানালেন, "জাতীয় দলের ক্যাম্পে সুযোগ পাওয়াটা একটা অভিজ্ঞতা হল। সবার থেকে ভালো ব্যবহার পেয়েছি। মা দুর্গার কাছে যদি নিজের জন্য কিছু চাইতেই হয়, তাহলে আরও পরিশ্রম করার শক্তি চাইব। যাতে পরের বার জাতীয় দলে সুযোগ পেতে পারি।"
