সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আইএফএ শিল্ড ফাইনালে নামার আগে মোহনবাগান রীতিমতো সমস্যায় জর্জরিত ছিল। সমর্থকদের বিক্ষোভ। ফুটবলারদের ঘিরে প্রতিবাদ। ক্লাবের অন্দরের পরিবেশ নিয়ে নানা প্রশ্ন। এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল খেলার মাঠে পারফর্ম করা। শনিবাসরীয় যুবভারতীতে সেটাই করে দেখালেন মোহনবাগান ফুটবলাররা। ১২০ মিনিটের লড়াই শেষে সবুজ-মেরুন শিবির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলকে পেনাল্টি শুট আউটে ৫-৪ গোলে হারিয়ে ১২৫তম আইএফএ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হল। কিন্তু কোন ম্যাজিকে ২২ বছর পর শিল্ড এল সবুজ-মেরুনে?
১। বিশালের হাত: বিশাল কাইথ। অতীতে আইএসএল সেমিফাইনাল, ফাইনাল, ডুরান্ড ফাইনালে পেনাল্টি শুটআউটে তিনি মোহনবাগানের ত্রাতা হিসাবে উঠে এসেছিলেন। আইএফএ শিল্ড ফাইনালেও একইভাবে কাইথের 'বিশাল' হাত বাঁচিয়ে দিল মোহনবাগানকে। শুধু পেনাল্টি নয়, ম্যাচের নির্ধারিত ১২০ মিনিটেও অন্তত গোটা তিনেক ভালো সেভ করেছেন তিনি। বিশেষ করে রশিদের একটা শট যেভাবে বাঁচালেন, সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
২। বড় ম্যাচ জেতার মানসিকতা: এই ম্যাচ খেলার আগে মানসিকভাবে বেশ সমস্যায় ছিলেন মোহনবাগান ফুটবলাররা। ফুটবলারদের সঙ্গে সমর্থকদের কোথাও একটা দূরত্বও তৈরি হয়েছিল। সেখান থেকে ডার্বি জিততে হলে ইস্পাত কঠিন মানসিকতার প্রয়োজন পড়ে। সেটাই এদিন মাঠে দেখালেন কামিন্স, পেত্রাতোসরা। পেনাল্টি মিস, এক গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও হার মানেনি মোহনবাগান।
৩। ইস্টবেঙ্গলের ভুল স্ট্র্যাটেজি: পেনাল্টি শুট আউটে মোহনবাগান বরাবরই ভালো। বিশেষ করে বিশাল কাইথের সময়। ইস্টবেঙ্গল কোচ ব্রুজোর উচিত ছিল ১২০ মিনিটেই খেলা শেষ করার চেষ্টা করা। সেটা যখন হল না, তিনি পেনাল্টি শুট আউটের জন্য একেবারে খেলার শেষে নামালেন দেবজিত মজুমদারকে। সেই স্ট্রাটেজি কাজে দিল না। দেবজিত গোটা ম্যাচ ডাগআউট থেকে দেখার পর হঠাৎ নেমে পেনাল্টি বাঁচাতে পারলেন না। প্রভসুখন গিল বরং গোটা ম্যাচে খারাপ খেলেননি। তাঁকে সুযোগ দিলে ভালো ফল হতে পারত।
৪। ফাইনাল থার্ডে ইস্টবেঙ্গলের ব্যর্থতা: গোটা ম্যাচে খুব খারাপ খেলেনি ইস্টবেঙ্গল। বিশেষত প্রথমার্ধে সবুজ-মেরুনের থেকে অনেকাংশে এগিয়ে ছিল লাল-হলুদ। কিন্তু ফাইনাল থার্ডে সেভাবে দাগ কাটতে না পারায় গোল আসেনি। আবার খেলার শেষদিকে ক্লান্তিও পেয়ে বসেছিল লাল-হলুদ ফুটবলারদের। বিশেষ করে এক্সট্রা টাইমে।
৫। মোলিনার স্ট্র্যাটেজি: কোচ মোলিনা মোহনবাগানের দায়িত্বে আসার পর যতগুলি ডার্বি খেলেছেন, সম্ভবত সেই সবকটির চেয়ে এই ডার্বির লড়াইটা কঠিন ছিল। কিন্তু তিনি ফুটবলারদের বাইরের বিতর্ক থেকে দূরে রেখে যেভাবে মাঠে মনোনিবেশ করাতে উদ্বুদ্ধ করেছেন সেটা প্রশংসনীয়। তাছাড়া ডার্বির মতো ম্যাচে নিজের রক্ষণ শক্ত রেখে আক্রমণে যাওয়ার পুরনো কৌশল বজায় রেখে গেলেন মোহনবাগান কোচ। পিছিয়ে যাওয়ার পরও বিচলিত হলেন না, সেটাও প্রশংসার দাবি রাখে। সেই সঙ্গে এদিন মোহনবাগান সমর্থকরাও প্রশংসার দাবি রাখেন। এদিন মাঠে কোনওরকম বিক্ষোভ-প্রতিবাদের পথে না হেঁটে সবুজ-মেরুন জনতা দলের পাশে ছিলেন। গোটা ম্যাচ ফুটবলারদের হয়ে গলা ফাটিয়েছেন।
