দুলাল দে: ভারতীয় ফুটবল বাঁচাতে হলে অবিলম্বে দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগকারী জোগাড় করতে হবে। এআইএফএফকে রীতিমতো পত্রবোমা পাঠাল আইএসএলের ক্লাবগুলি। ইস্টবেঙ্গল বাদে আইএসএলে অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলি শুক্রবার সকালে ভারচুয়াল বৈঠক করে। তারপর একযোগে ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবেকে মেইলের মাধ্যমে একাধিক দাবি তুলে ধরেছেন। তাতে আইএসএলের টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে একাধিক প্রশ্নও তোলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনার পরই ফের ফেডারেশনকে পাঠানো ক্লাবগুলির এই পত্রবোমা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
ক্লাবগুলির বক্তব্য, দীর্ঘ ১১ বছর ধরে ক্ষতি স্বীকার করেও তারা নির্দিষ্ট বাণিজ্যিক কাঠামো ও কেন্দ্রীয় আয়ের উপর ভর করে ফুটবলে বিনিয়োগ করে এসেছে। কিন্তু বর্তমানে সেই আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্লাবগুলির পক্ষে খেলোয়াড় ও কর্মীদের বেতন দেওয়া এবং লিগ পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। চিঠিতে জানানো হয়েছে, এই সংকট কাটাতে ক্লাবগুলি ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে একটি অন্তর্বর্তী আবেদন করেছে। AIFF-এর সংবিধানের কিছু ধারা—বিশেষ করে ১.২.১, ১.৫.৪ এবং ৬৩ নম্বর ধারা—বর্তমান দরপত্র প্রক্রিয়াকে অকার্যকর করে তুলেছে। ক্লাবগুলির বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও এবং পরামর্শদাতা সংস্থা KPMG-র রিপোর্টেও একই সাংবিধানিক ও বাণিজ্যিক জটিলতার কথা বলা হয়েছে। এই কারণেই আগের দরপত্রে কোনও বড় সংস্থা আগ্রহ দেখায়নি।
ক্লাবগুলির দাবি, সর্বশেষ শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট নিজেই কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। সেই সূত্র ধরেই ক্লাবগুলি AIFF-কে অনুরোধ করেছে, যেন তারা সরকারিভাবে কেন্দ্রের সহায়তা চায় এবং এই অন্তর্বর্তী আবেদনের সমর্থন জোগাড় করে। এছাড়াও ক্লাবগুলি দাবি করেছে, নতুন সংবিধান অনুযায়ী AIFF নিজেরাই প্রয়োজনে সংশোধনী আনতে পারে এবং লিগ পরিচালনায় যে সাংবিধানিক বাধাগুলি রয়েছে, সেগুলি দ্রুত সরানো সম্ভব। যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়, তাহলে ISL-এর ভবিষ্যৎ গুরুতর সংকটে পড়তে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
ক্লাবগুলির স্পষ্ট দাবি, নতুন দরপত্র শুধুমাত্র তখনই ডাকা হোক, যখন সমস্ত সাংবিধানিক জটিলতা কেটে যাবে এবং লিগ পরিচালনার আইনি ও বাণিজ্যিক নিশ্চয়তা ফিরবে। সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। চলতি মাসের মধ্যেই কঠোর সময়সীমার মধ্যে নতুন দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করা দরকার। ক্লাবগুলির বক্তব্য, সময়সীমা না বেঁধে টেন্ডার হলে লিগের বাণিজ্যিক কাঠামো স্থিতিশীল করা সম্ভব নয়, এমনকি চলতি মরশুমও কার্যত ভেস্তে যেতে পারে। আইএসএল ক্লাবগুলির মতে, শুধু অস্থায়ী সমাধানে আর কাজ হবে না। একটি দীর্ঘমেয়াদি, স্থায়ী বাণিজ্যিক রূপরেখা এখনই প্রয়োজন। চিঠিতে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে অস্থায়ী ব্যবস্থা মানে গুরুতর ক্ষতের উপর সাময়িক ব্যান্ডেজ, তাতে সমস্যার মূল সমাধান হয় না। বছরের পর বছর ধরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার উপর ভর করে যে বিপুল বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা বাঁচাতে হলে একটি স্থায়ী কাঠামো প্রয়োজন। নতুন দরপত্রে আরও নমনীয়তা চেয়েছে ক্লাবগুলি। সম্ভাব্য দরদাতাদের নিজস্ব প্রযুক্তিগত ও বাণিজ্যিক পরিকল্পনা পেশ করার পূর্ণ স্বাধীনতা এবং অবাস্তব ন্যূনতম আয়ের গ্যারান্টি না চাপানোর দাবিও তোলা হয়েছে।
এমনকী নতুন টেন্ডার থেকেও যদি উপযুক্ত বাণিজ্যিক অংশীদার না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রেও বিকল্প রাস্তা দেখিয়েছে ক্লাবগুলি। তাদের প্রস্তাব—ISL ক্লাবগুলি মিলেই একটি কনসোর্টিয়াম গড়ে লিগের মালিকানা ও পরিচালনার দায়িত্ব নিক, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মালিক থাকবে ক্লাবগুলিই, সঙ্গে থাকবে AIFF এবং অন্যান্য বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে সময় নিয়ে। ক্লাবগুলির স্পষ্ট বক্তব্য—ISL ও গোটা ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ এখন সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের সামনে অবিলম্বে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করছে। ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে কেন্দ্র সরকার বা AIFF-কে তাদের পদক্ষেপ সংক্রান্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দিতেই হবে। তা না হলে গত এক দশকে গড়ে ওঠা ভারতীয় ফুটবল ইকোসিস্টেমের অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। শেষে ক্লাবগুলি জানিয়েছে, ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়নের জন্য তারা সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং লিগ ও ফুটবল ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে সব রকম সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
