অর্পণ দাস: একসময় তাঁরা ছিলেন সতীর্থ। সেটা খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। একে অপরকে দিয়ে গোল করাতেন, সবুজ গালিচায় দাপিয়ে বেড়াতেন। টেলিপ্যাথিক যোগাযোগে বুঝে যেতেন বলটা ঠিক কোথায় যেতে চলেছে। সঙ্গে সঙ্গে অন্যজন সেখানে উপস্থিত। কিন্তু ফুটবল বিধাতার পরিহাস কে খণ্ডাতে পারে? মোহনবাগানের রবসন রবিনহো আর ইস্টবেঙ্গলের মিগুয়েল ফিগুয়েরা, দুজনের ফের দেখা হবে। এবার ভারতের মাটিতে, কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই ক্লাবের জার্সিতে। শনিবার আইএফএ শিল্ডের ডার্বিতে শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করবেন কে? বিশ্লেষণে বাংলাদেশের ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের অধিনায়ক তথা দুই ফুটবলারের প্রাক্তন সতীর্থ তপু বর্মণ।
রবসন বসুন্ধরার জার্সি গায়ে চাপান ২০২০ সালে। ১০০টির কাছে ম্যাচে ৬৮টা গোল আছে। এবার মোহনবাগানের হয়ে একটু দেরিতে যোগ দিলেও ইতিমধ্যেই ম্যাজিক দেখাতে শুরু করেছেন। আইএফএ শিল্ডের প্রথম ম্যাচে অ্যাসিস্টের হ্যাটট্রিক। সঙ্গে একটি গোল। দ্বিতীয় ম্যাচেও ছাপ ফেলেছেন। ফাইনালে ডার্বিতে যে পারফর্ম করতে মুখিয়ে থাকবেন সে কথা বলাই বাহুল্য। অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গলের মিগুয়েল। বাঁ পা-টা অসম্ভব ভালো। অ্যাসিস্টে দক্ষ হলেও বহু 'হওয়া' গোল ফিরে এসেছে বারপোস্টে লেগে। তবে ভুললে চলবে না, বসুন্ধরার জার্সিতে কিন্তু মিগুয়েলের ৪৮ ম্যাচে ৩৫টা গোল আছে। শিল্ড ফাইনালে তারই নমুনা দেখতে চাইবেন লাল-হলুদ সমর্থকরা।
রবসনের সঙ্গে তপু। ফাইল চিত্র
সেসব দিকে নজর রেখেছেন তপু। বসুন্ধরার অধিনায়ক তিন বছর দুজনের সঙ্গে খেলেছেন। রবসন-মিগুয়েলের পিছনে খেলায় তাঁদের আক্রমণের ঝাঁজ সামলাতে হয়নি। কিন্তু অনুশীলনে তো সামলাতে হয়েছে। বাংলাদেশি ডিফেন্ডার বলছেন, "রবসন আর মিগুয়েল দুজনেই আমার সঙ্গে বসুন্ধরা কিংসে তিন বছর খেলেছে। দুজনেই টপ কোয়ালিটি প্লেয়ার। ওদের অভিজ্ঞতা দুই ক্লাবকেই সাহায্য করবে। অনুশীলনেও দেখেছি ওরা খুবই পেশাদার। যখন-তখন ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। দলকে জেতানোর জন্য সর্বস্ব দিতে পারে।"
মিগুয়েল ও রবসন, বসুন্ধরা কিংসের জার্সিতে। ফাইল চিত্র
মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল দুই ক্লাবের সমর্থকরা সেটাই চাইবেন। ডুরান্ডের ফলাফল সবুজ-মেরুনের পক্ষে যায়নি। সেই ম্যাচে ছিলেন না রবসন। কিন্তু মিগুয়েল ছিলেন। এবার দুজনে মুখোমুখি হবেন। একে-অপরের সঙ্গে এতদিন একসঙ্গে খেলায় নিশ্চয়ই দুজনের শক্তি-দুর্বলতা জানেন। সেটার সুযোগ যে নিতে পারবেন, তিনিই পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন। তপুর সাফ বক্তব্য, "আমি দেখছিলাম, রবসন প্রায় প্রতি ম্যাচেই অ্যাসিস্ট করছে। মিগুয়েলও সেরা ছন্দে আছে। অ্যাসিস্ট করছে, গোল করার চেষ্টা করছে। দুজনে এর আগে একসঙ্গে খেলেছে, ফলে একে অপরকে খুব ভালো মতো চেনে। কিন্তু এবার দেখা হবে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের জার্সিতে। তাই কে বেশি ভালো, কে বেশি কার্যকরী, সেটা প্রমাণ করার লড়াইও থাকবে।"
মিগুয়েলের সঙ্গে তপু। ফাইল চিত্র
আরও একটা ফ্যাক্টর আছে। ইস্টবেঙ্গলের কোচ অস্কার ব্রুজো। বসুন্ধরা কিংসেরই কোচ ছিলেন তিনি। দুই ছাত্রকে খুব ভালো মতো চেনেন। অস্কারের অধীনে খেলেছেন তপুও। ডার্বিতে কোন প্রাক্তন সতীর্থকে এগিয়ে রাখবেন? কে ফারাক গড়ে দিতে পারেন ডার্বিতে? তপু জানালেন, "মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল মানে কিন্তু সব সময় প্রবল লড়াই থাকে। ডুরান্ড কাপেও সেটা হয়েছিল। ডার্বি সবসময় ৫০-৫০। আর দুজনের যে কেউ পার্থক্য গড়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।" শেষ পর্যন্ত কে পার্থক্য গড়ে দেন, সেটা তো শনিবাসরীয় ডার্বিই প্রমাণ করে দেবে।
