সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ক্রীড়াপ্রেমীদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শনিবার শহরে পা রেখেছিলেন লিওনেল মেসি। শনিবার ঠাসা কর্মসূচি ছিল তাঁর। মেসিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন সমর্থকরা। কিন্তু মাত্র চোখের পলকে ২২ মিনিট যেতে না যেতেই সব শেষ। নির্ধারিত সময়ের আগেই মেসি বেরিয়ে গেলেন যুবভারতী ছেড়ে। এরপর ধৈর্যচ্যুতি ঘটে মেসিভক্তদের। রীতিমতো তাণ্ডব চালান তাঁরা। যুবভারতীতে তাণ্ডবের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন মূল উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্ত।
লিওনেল মেসিকে কলকাতায় (Messi In Kolkata) আনার মূল আয়োজক ছিলেন শতদ্রু (Satadru Dutta)। তাঁর বিরুদ্ধে ভূরিভূরি অভিযোগ এনেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আঙুল তুলেছেন উদ্যোক্তাদের দিকে। তবে সাংবাদিক সম্মেলনে শতদ্রুর নাম নেননি রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। তিনি জানিয়েছেন, দর্শকদের টাকা ফেরানো নিয়ে মুচলেকা দিয়েছেন মূল উদ্যোক্তা। পরে এডিজি জাভেদ শামিম জানান, মূল উদ্যোক্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কলকাতায় মেসির গোট কনসার্ট নিয়ে শতদ্রু দত্ত আগে বলেছিলেন, "১৪ বছর পর ভারতে আসছেন মেসি। দর্শকদের জন্য এটা খুবই আনন্দের খবর। ভক্তরা মেসিকে দেখার সুযোগ পাবেন। ভারতের সঙ্গে ফুটবলের সংযোগ আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর আগে কখনও এত স্পনসর ভারতীয় ফুটবলে আসেননি।" তাই 'আনন্দ নগরী'তে মেসির আগমন নিয়ে আহ্লাদিত ছিলেন দর্শকরা। কিন্তু চড়া দামে টিকিট কেটেও মেসিকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি তাঁদের। আর তার জেরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা।
মেসির 'গোট ইন্ডিয়া ট্যুর'-এর কেন্দ্রে রয়েছে শতদ্রু দত্তর নাম। কে এই শতদ্রু? রিষড়ার বাসিন্দা তিনি। কেরিয়ারের গোড়ায় ফিনান্স ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত কাজ করতেন। তবে ফুটবলের প্রতি তাঁর প্যাশন ছিল প্রবল। পরবর্তীতে সেই প্যাশনই হয়ে ওঠে প্রফেশন। এখান থেকেই তাঁর উত্থান। এখন পেশায় তিনি স্পোর্টস প্রোমোটার ও ইভেন্ট অর্গানাইজার। শতদ্রুর সংস্থার নাম 'আ শতদ্রু দত্ত ইনিশিয়েটিভ'। এই সংস্থাই তাঁর বিভিন্ন প্রজেক্টকে সাফল্যের মুখ দেখিয়েছে।
মেসিকে কলকাতায় আনার কাণ্ডারি শতদ্রু। ১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দলকে ভারতে আনা থেকে পেলে, মারাদোনা, রোনাল্ডিনহোকে ভারতে আনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে তিনি। 'ওই মানুষটা তারকাদের নিয়ে আসে', ফুটবলমহলে এমনভাবেই পরিচিত হয়ে ওঠেন শতদ্রু। তাছাড়াও তরুণ ফুটবলারদের ট্রেনিংয়ের পরিকল্পনাও ছিল তাঁর। সেখানে হয়তো স্কলারশিপও দেওয়া হত। মেসি কলকাতায় পৌঁছানোর কয়েক মিনিট আগে তিনি সোশাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, 'এটা নামাই, তারপর ‘বদ্দা’কে এনে বিদায় নেব।' 'বদ্দা' অর্থাৎ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। সেই ইচ্ছা আর কখনও পূরণ হবে কি না, সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই। আপাতত যুবভারতীতে চরম বিশৃঙ্খলার পর নায়ক থেকে খলনায়ক বনে গিয়েছেন মূল উদ্যোক্তা।
মেসির কলকাতা আগমন ঘিরে আয়োজকদের অব্যবস্থার অভিযোগে সরব হয়েছেন দর্শকরা। তাঁদের দাবি, বিরাট স্ক্যাম হয়েছে। টাকা ফেরত দিক আয়োজকরা। তাঁদের অভিযোগ, যুবভারতীতে ঢোকার পর থেকেই মেসিকে ঘিরে যেন মাছির মতো ভিড় ছিল। ফলে গ্যালারি থেকে মেসিকে দেখাই যায়নি। চড়া দামে টিকিট কেটে মাঠে গিয়েও প্রিয় তারকাকে দেখতে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হন তাঁরা। এখন দেখার, দর্শকদের চাপে পড়ে টিকিটের টাকা ফেরত দেয় কি না আয়োজকরা। বাস্তবের মাটি যে কতটা নির্মম, তা হয়তো এখন হাড়ে হাড়ে টেন পাচ্ছেন শতদ্রু। দর্শক ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা-সহ একাধিক স্তরে ব্যর্থতা এখন প্রকাশ্যে। সূত্রের খবর, বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মূল উদ্যোক্তা শতদ্রুকে।
