shono
Advertisement

সংস্কৃত টোলের কী ভবিষ্যৎ? পয়লা বৈশাখের আগে ঐতিহ্য নিয়ে ঘোর সংশয়

জাঁকজমক হারিয়েছে ঐতিহ্যবাহী টোল।
Posted: 12:43 PM Apr 12, 2022Updated: 12:53 PM Apr 12, 2022

সুদীপ রায়চৌধুরী: সালটা ১৯৪৭। মির্জাপুর স্ট্রিটের চায়ের দোকানে মনমরা হয়ে বসে আছেন এক যুবক। চিন্তাক্লিষ্ট, বিধ্বস্ত মুখ। অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পাটনা থেকে কলকাতায় এসেছিলেন একদিন। কিন্তু খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারা যায়নি। হাতে কাজ নেই। টাকাপয়সাও ফুরিয়ে এসেছে। অনেক ভেবে মনস্থির করে নিয়েছেন, মাথায় থাক কলকাতা! পাটনা ফিরে যাবেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত পাল্টে গেল এক শুভানুধ্যায়ীর চাপে। শখের জ্যোতিষী সেই ব্যক্তির পরামর্শে যুবক মহেন্দ্র পণ্ডিতের হাতিবাগানের টোল থেকে কোষ্ঠী বানিয়ে আনলেন। কোষ্ঠী দেখে শুভানুধ্যায়ীর মন্তব্য, ‘পাটনা ফিরে যাওয়ার চিন্তা ছেড়ে দাও ভায়া! এই কলকাতা শহরেই একদিন তোমাকে নিয়ে এমন মাতামাতি হবে যে টাকা রাখার জায়গা পাবে না।’

Advertisement

ভবিষ্যদ্বাণী মিলেছিল বিলক্ষণ! মাস ছয়েকের মধ্যেই দু’-তিনটে ছবিতে সই করে ফেললেন জহর রায় নামে সেই ভাগ্যান্বেষী। তারপর তো ইতিহাস! অটো, বাস আর পথচারীর ভিড়ে কোলাহলময় উত্তর কলকাতার অরবিন্দ সরণিতে কান পাতলে শোনা যায় এমন অজস্র গল্প। যেমন যতীশ বসাকের জীবনলাভের কাহিনি। হাতিবাগানের তৎকালীন জমিদার বসাক পরিবারের গিন্নির একমাত্র নাতি যতীশ অজানা অসুখে মৃত্যুশয্যায়। ডাক্তার-বদ্যিরা জবাব দিয়ে গিয়েছেন। খবর পেয়ে জমিদারবাড়িতে হাজির মহেন্দ্র পণ্ডিত। বললেন, “মৃত্যুঞ্জয় যজ্ঞ করে আপনার নাতিকে বাঁচিয়ে দেব।” এ পাড়ার প্রবীণদের দাবি, মাসাধিককাল একের পর এক যজ্ঞ ও পূজাপাঠে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন বসাক বংশের কুলতিলক। খুশি হয়ে হাতিবাগান টোলকে বিশাল জমি দান করেছিলেন জমিদার-গিন্নি। দলে দলে ছাত্র আসত তখন এই টোলে সংস্কৃত শাস্ত্র অধ্যয়নে।

[আরও পড়ুন: নন্দগাঁও ও বারসানা, রাধাকৃষ্ণের নিজেদের গ্রামে আজও নিষিদ্ধ প্রেম]

আজ ৬০ ওয়াটের ঘোলাটে বাল্বের লালচে আলোর নিচে টিম টিম করে টিকে থাকা ১৫৮ বছরের হাতিবাগান টোল দেখলে সেদিনের সেই জাঁকের হদিশ মেলা ভার। শহরের সংস্কৃত শিক্ষাচর্চার রাজধানীতে আজ শাস্ত্রপাঠ অতীত। সাপ্তাহিক পুজোপাঠ ও কবচ-কুণ্ডলে দিনযাপন করছেন ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যরা। শুক্রবার ভরসন্ধেয় ময়লা ফরাস পাতা তক্তপোষের উপর বসে মহেন্দ্র পণ্ডিতের দাদা চণ্ডীচরণ ঠাকুরের বংশধর ভাস্কর ও গৌতম ভট্টাচার্যর গলায় তাই আক্ষেপ ঝরে পড়া স্বাভাবিক। বলছিলেন, “এখন আর সংস্কৃত পুঁথিপাঠে আগ্রহ কোথায়। এখন এখানে শুধু কোষ্ঠী তৈরি ও পূজার্চনা হয়।” একটু দূরে মহেন্দ্র পণ্ডিতের কনিষ্ঠ পুত্র, এ পাড়ার শেষ ‘মহিকান’ প্রয়াত নিমাই ঠাকুরের টোল সামলাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী সোনামণি ভট্টাচার্য এবং পুত্র সত্যজিৎ।

কনিষ্ঠপুত্র শুভজিৎ এখানে নিয়মিত শিক্ষা দেন পৌরোহিত্য, জ্যোতিষ, তন্ত্র ও রত্নশাস্ত্রের। প্রখ্যাত জ্যোতিষী গৌরাঙ্গ ভারতীর কন্যা সোনামণিদেবী সংস্কৃতে স্নাতক। তাঁর কথায়, “শিক্ষক কোথায় যে সংস্কৃত পড়াবে? চর্চার অভাবে ভাষাটাই তো ভুলে গিয়েছি সবাই।” তিনি জানাচ্ছেন, ছোট ছেলে কিছুটা হলেও বাপ-ঠাকুরদার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। নিয়মিত প্রাচীন তন্ত্র, শাস্ত্র, জ্যোতিষ শাস্ত্রের শিক্ষাদান করছেন ছাত্রদের। কিন্তু তারপরও দেড়শো বছরের পুরনো হাতিবাগান টোল আর কতদিন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যরাই। হাতিবাগান টোলের অন্যতম শাখা মহাকালী আশ্রমের ভাস্কর ভট্টাচার্যর আক্ষেপ, “ছেলেরা এখন লেখাপড়া শিখে অন্য পেশায় যেতে আগ্রহী। বংশগত পেশায় আর মন নেই তাঁদের। জানি না, ক’দিন টিকিয়ে রাখতে পারব এই টোলকে।”

[আরও পড়ুন: জানেন, শাস্ত্রমতে কেন চৈত্র মাসে বিয়ে করতে নেই?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement