কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: সুদূর সাইবেরিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া এদের বিচরণভূমি। প্রজননের জন্য বেছে নেয় রাশিয়ার নির্দিষ্ট কিছু অংশ। আর ডানা জুড়োতে প্রয়োজন বাংলার মাটি। ভ্যানিলা আইসক্রিম রঙের পেট, গাঢ় বাদামি চঞ্চু, কালচে গুলি গুলি চোখ আর হালকা চকোলেট নকশাদার ডানায় খেলনা পাখির মতো রূপ। আদরের নাম গ্রেট নট (Great Knot)। পোশাকি ভাষায় ক্যালিড্রিস টেনিউরসট্রিস।
ঝাঁক বেঁধে হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এবার জম্বুদীপে সদলবলে হাজির। বিপন্ন প্রজাতির এই পরিযায়ী পাখিটি বিপন্ন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। সারা বিশ্বে মেরেকেটে হাজার দশেকও টিকে রয়েছে কি না সন্দেহ পক্ষী বিশারদদের। তাদের মধ্যে প্রায় তিন হাজারের মতো এবার পা রেখেছে পশ্চিমবঙ্গের জলাভূমিতে। এই খবর নিঃসন্দেহে উৎসাহ জুগিয়েছে পাখিপ্রেমীদের। শীত ফুরনোর আগে জম্বুদীপ যাওয়ার প্ল্যান করতে শুরু করেছেন অনেকে। কীভাবে জানা গেল গ্রেট নটের এই অভূতপূর্ব উপস্থিতির খবর?
[আরও পড়ুন: মাঝ আকাশে আচমকা বন্ধ ইঞ্জিন, ভেঙে পড়ল SpaceX’এর পণ্যবাহী রকেট]
এবছর বনদপ্তরের উদ্যোগে সারা রাজ্যের জলাশয়গুলিতে ‘পরিযায়ী পাখি শুমার’ হয়েছে। এর আগে প্রতিবছর বিক্ষিপ্তভাবে রাজ্যের কিছু জলাশয়ে এই শুমারের কাজ হত। রাজ্য বনদপ্তরের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) বিনোদকুমার যাদব বলেন, “এবছরই প্রথম গোটা রাজ্যে সম্মিলিতভাবে এই শুমারের কাজ হল।” তিনি জানিয়েছেন, গত ১২ জানুয়ারি থেকে এই শুমারের কাজ চলেছে। রাজ্যের ৫৪টি জলাভূমি-সহ নদীর তীর, সাগর উপকূল অঞ্চল বেছে নেওয়া হয়েছিল সমীক্ষার জন্য। ৬৫ প্রজাতির মোট ১২৩৬৭৫ পাখি উঠে এসেছে পর্যবেক্ষণে। আধিকারিক, কর্মীরা ছাড়াও একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং কয়েকজন পক্ষীবিশারদ এই কাজে যুক্ত ছিলেন। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৮০০ প্রশিক্ষিত ব্যক্তি এবছর এই পাখি শুমারের কাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কী উঠে এসেছে সমীক্ষায়, শুধু গ্রেট নট-ই কি চমকে দিয়েছে?
গ্রে প্লোভার, পালাসেস গাল (গ্রেট ব্ল্যাক হেডেড গাল) এবং হোয়াইট উইঙ্গড টার্নের মতো বেশ কিছু পরিযায়ীকে ভাল সংখ্যায় দেখতে পাওয়া এবার আশ্বস্ত করেছে পক্ষীপ্রেমীদের। চমক এটাও। এছাড়া ব্ল্যাক নেকড্ গ্রেব নামক একটি পরিযায়ী পাখি এবছর প্রথম সুন্দরবনে দেখা গেল বলে জানিয়েছেন সমীক্ষকরা। প্রতি বছর এই পাখিটিকে উত্তরবঙ্গে দেখা গেলেও, দক্ষিণবঙ্গে একে দেখতে পাওয়ার বিশেষ রেকর্ড নেই। গতবছর মুর্শিদাবাদে এটি একবার দেখা গিয়েছিল। সব মিলিয়ে বাংলার এই শীতের জলহাওয়া পরিযায়ীদের অন্যতম পছন্দের জায়গা হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন রাজ্যের পক্ষীপ্রেমীরা।