সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: খালি চোখে দেখা যায় না তাদের। শূন্যে মিলিয়ে থেকেও যারা সভ্যতাকে 'ঘরবন্দি' করে ফেলেছিল। আজ থেকে ৬ বছর আগে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরই প্রথমবার চিনের উহান শহরের মিউনিসিপ্যাল হেলথ কমিশন ঘোষণা করে এক 'অজানা কারণে সৃষ্ট নিউমোনিয়া' ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। সেই সময় গোটা বিশ্বের কোনও ধারণাও ছিল না এই ঘোষণা আসলে পৃথিবীকে চিরকালের জন্য বদলে দেওয়ার ঘোষণা! অচিরেই আতঙ্কের সমনামী হয়ে ওঠে কোভিড-১৯। মানবজীবন, অর্থনীতি এবং সমাজকে দুমড়ে মুচড়ে একটা নতুন চেহারা দিল সেই আদ্যপ্রাণী।
ঠিক যেমন ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর গোটা পৃথিবী প্রস্তুতি নিচ্ছে একটা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে, তেমনই সেবারও হচ্ছিল। ঠিক এমন সময়ই চিনের শহর উহানের তরফে অজ্ঞাত নিউমোনিয়ার ঘটনা সম্পর্কে জরুরি সতর্কতা জারি করেছিল। সেই সময়ে এই সংক্ষিপ্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তিটি খুব কম লোকেরই নজরে এসেছিল। কয়েকদিনের মধ্যেই রোগটির উৎস হিসেবে উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজারকে শনাক্ত করা হয়। এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এটি সীমান্ত, মহাদেশ ও মহাসাগর পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। যা শীঘ্রই বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ নামে পরিচিতি লাভ করে এবং একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বিধ্বংসী মহামারীতে রূপান্তরিত হয়।
মাত্র তিন মাস। ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে দেশগুলি তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। শহরগুলো জনশূন্য হয়ে যায়। দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার আপৎকালীন প্রচেষ্টায় কোটি কোটি মানুষকে গৃহবন্দি করা হয়। বিমান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়। বন্ধ হয়ে যায় কলকারখানা। দিনেদুপুরে খাঁ খাঁ শহরের পথঘাট দেখে যেন মনে করা হচ্ছি কোনও অতিকায় দানবের অগ্নিনিঃশ্বাস সব প্রাণশক্তিকে শুষে নিয়েছে।
নিউমোনিয়ার কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে যা শুরু হয়েছিল, সেটাই শেষমেশ প্রায় সত্তর লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। যদিও সেটা সরকারি হিসেব। মনে করা হয়, আসল সংখ্যাটা কয়েক গুণ বেশি। পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। আর অর্থনীতি এমন মুখ থুবড়ে পড়েছিল যা মহামন্দার পর আর দেখা যায়নি।
ভারতও ব্যতিক্রম নয়। ২০২০ সালের মার্চের শেষদিক থেকে দেশে জারি হয় লকডাউন। এতে সংক্রমণের গতি কমেছিল। পাশাপাশি হাসপাতালগুলি পরিকাঠামো মজবুত করারও সময় পেয়েছিল। কিন্তু সবকিছুর উপরে পর্দা নেমে আসায় তৈরি হয়েছিল এক আশ্চর্য পরিস্থিতি। এদিকে লকডাউনের সময় দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে হেঁটে যেতে গিয়ে বিপুল সমস্যায় পড়তে হয়েছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের। অনেকে প্রাণও হারান। আর কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এসে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ!
তবে এই পরিস্থিতিতেও অভূতপূর্ব গতিতে বিজ্ঞানের গবেষণায় অগ্রগতি ঘটেছিল। দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি করে ধীরে ধীরে সুস্থতার দিকে এগোতে থাকে নীল রঙের এই গ্রহ। পাশাপাশি 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম', ডিজিটাল পরিষেবা এবং টেলিমেডিসিন হয়ে ওঠে নতুন পৃথিবীর স্বাভাবিক সব শব্দ। দেখতে দেখতে ৬টা বছর পেরিয়ে গেল। বিশ্ব আজ করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় অনেকটাই সফল। জনজীবন স্বাভাবিক। তবু কোভিড যেভাবে পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট- এই সভ্যতা আর ফিরে পাবে না হারানো দিন, হারানো সময়। চোখে যাদের দেখা যায় না, সেই খুদে জীবেরা বদলে দিয়েছে মানুষের বেঁচে থাকা।
