সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: গোটা একটা দল। এবারে নির্বাচনী রাজনীতি থেকে পুরোপুরি সন্ন্যাস নিয়ে নিয়েছে। শুধুমাত্র টাকার জোগাড় হয়নি বলে, ভোটে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গত বিধানসভা নির্বাচনে নতুন দল হিসেবে আলোড়ন ফেলে দেওয়া জন আন্দোলন পার্টি (জাপ)। জাপের সভাপতি হরকা বাহাদুর ছেত্রী (Harka Bahadur Chhetri) জানিয়ে দিয়েছেন, লোকবল থাকলেও আর্থিক জোগাড় হয়নি। বিধানসভা নির্বাচনের মতো বড় আসরে লড়তে গেলে, প্রচুর টাকা দরকার। তা না হওয়ায় এবারের নির্বাচনে প্রার্থী দিচ্ছে না জাপ।
তবে কি জন আন্দোলন পার্টি অস্তমিত? মোটেই তা নয়। এমনকী এবারের বিধানসভা নির্বাচনের ঘনঘটা থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখবে জাপ, এমনও নয়। পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হরকা বাহাদুর ছেত্রী তাঁর দলের সকলকেই ভোটাধিকার প্রয়োগের আবেদন জানিয়েছেন। কাকে সরাসরি সমর্থন করবেন তাঁরা? তৃণমূল, বিজেপি নাকি বাম জোটকে? এ বিষয়ে সরাসরি কিছু না জানালেও হরকা বাহাদু স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কমিউনিস্ট মতাদর্শের সঙ্গে তাঁর এবং তাঁদের মতাদর্শ খাপ খায় না। তাই যেখানে কমিউনিস্ট পার্টি থাকবে সেখানে তিনি এবং তাঁর দলের সদস্যরা ভোট দেবেন না। বিজেপির প্রতিও তাঁর শ্রদ্ধা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন জাপ প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর অভিযোগ, দু’দফায় পাহাড়ে বিজেপির সাংসদ থাকলেও পাহাড়ের মানুষের জন্য কোনও সদর্থক চিন্তাভাবনা করেননি তাঁরা। তাই বিজেপিকে সমর্থন করার প্রশ্ন নেই।
[আরও পড়ুন: মিষ্টিতেও লেখা ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’, পুরুলিয়ায় নজরকাড়া প্রচার তৃণমূলের]
তাহলে বাকি রইল শুধু তৃণমূল। তাদের সমর্থন করবেন কিনা তা চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানালেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি বরাবরই আস্থা রেখে চলা হরকা বাহাদুর ছেত্রী তৃণমূলের পাশেই রয়েছেন ইঙ্গিত মিলেছে। তার চিন্তাভাবনাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবও। এ বিষয়ে তিনি বলেন, দলকে কারা সমর্থন করবে সে বিষয়ে কোনও সরকারি মন্তব্য করবে দলের হাইকমান্ড। তবে হরকা বাহাদুর শক্তিশালী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাঁর মতামত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: টিকিট দেয়নি তৃণমূল, বিজেপির পথে পা বাড়িয়ে সোনালি গুহ, শীতল সর্দার, জটু লাহিড়ীরা]
প্রসঙ্গত, বিমল গুরুংয়ের নেতৃত্বাধীন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রচার সচিব ছিলেন হরকা বাহাদুর ছেত্রী। মোর্চার টিকিটে কালিম্পং থেকে জিতে বিধায়ক হন তিনি। পরে বিমল গুরুংয়ের কট্টরপন্থী তার বিরোধিতা করে রাজ্যের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলার পরামর্শ দিয়ে গুরুংয়ের বিরাগভাজন হন। পরে দল ছেড়ে নিজের রাজনৈতিক দল আন্দোলন পার্টি তৈরি করেন। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই তার দলের প্রার্থীরা। গতবারের বিধানসভা নির্বাচনে কালিম্পং আসনে দাঁড়িয়ে মোর্চা প্রার্থী সরিতা রাইকে কড়া টক্কর দিয়েছিলেন হরকা বাহাদুর ছেত্রী। সরিতা রাইয়ের ৬৭, ৬৯৩ ভোটের জবাবে হরকাবাবুর সংগ্রহ ছিল ৫৬,২৬২ টি ভোট। দার্জিলিং এবং কার্শিয়াং আসনে প্রার্থী দেননি তিনি। তবে ২০১৯এ দার্জিলিং বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী অমর লামা পেয়েছিলেন ৩২৪২ ভোট। তাই জন আন্দোলন পার্টির অনুপস্থিতি পাহাড়ের নির্বাচনী রং কিছুটা হলেও ফিকে করে দেবে।