সৌরভ মাজি, বর্ধমান: স্বল্পায়ু শীতকাল। অথচ বাঙালি জীবনে এই সময়টাই যেন একসঙ্গে যত ইচ্ছাপূরণের সময়। তাই চোখের নিমেষে তা ফুরিয়ে যায়। ইচ্ছেগুলো আর পূরিত হয় না। কিন্তু না, আর আক্ষেপ নয়। করোনার ধাক্কা সামলে নতুন বছর নতুন করে আনন্দে মেতে ওঠার সময়। কাজেই এক মুহূর্তেও নষ্ট হয়। জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা যতই থাক, অতীতের নস্টালজিয়ায় মাখা দিনগুলো ছুঁয়ে দেখতে পিকনিক (Picnic) এ বছর মাস্ট। ঘর থেকে মাত্র দু’পা দূরেই চলুন, আপনাকে নতুন ঠিকানা জানাই চড়ুইভাতির।
স্থান – বর্ধমান (Burdwan)। বাংলার অন্যতম বৈচিত্র্যময় জেলা। এখানেই অচিনপুর, থুড়ি গঙ্গানন্দপুর। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী-১ ব্লকের বিদ্যানগর গ্রাম সংলগ্ন এলাকা। লাল মাটির রাস্তা, দু’ধারে হলুদ রাঙা ফুলে ভরা সরষে খেত, ফলের বাগান, জলে টইটম্বুর পুকুর। শান বাঁধানো নয়, পুকুরে বাঁশের ঘাট। আদর্শ গ্রাম যেন। শহরের কোলাহল থেকে সাময়িক বিরতি নিতে চাইলে, বুকভরা বিশুদ্ধ বাতাস নিয়ে তরতাজা হতে চাইলে আপনার ডেস্টিনেশন হোক – গঙ্গাধরপুরের ‘মুক্তবীথি’। এর নেপথ্যে রাজ্যর ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তাঁরই উদ্যোগে গড়ে উঠেছে এই ‘মুক্তবীথি’। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে সাধারণের জন্য খুলে গিয়েছে এই কেন্দ্র।
[আরও পড়ুন: পর্যটকদের নতুন বছরের উপহার, ১০ মাস পর দার্জিলিংয়ে চালু রোপওয়ে]
‘মুক্তবীথি’তে পৌঁছে আপনি থাকবেন কোথায়? সে আরেক মজার ব্যাপার। পুরোপুরি পিকনিকের আমেজ বজায় রাখতে তৈরি হয়েছে ছোট টেন্ট বা তাঁবু। রাত্রিযাপনও করতে পারেন নিশ্চিন্তে, আরামে। হাতের কাছে পাবেন জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা খেতের সবজি। পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরে, তা দিয়ে বনভোজনের পদ হয়ে উঠবে আরও সুস্বাদু। পাশেই পেয়ারা, সুপারি, ঝাউ বাগান। কচিকাঁচাদের জন্য রয়েছে পার্ক। গঙ্গানন্দপুরের অদূরে চৈতন্যদেবের বাল্যশিক্ষার কেন্দ্র রয়েছে। সেখানেও ঘুরে আসতে পারবেন পর্যটকরা।
[আরও পড়ুন: পর্যটকদের জন্য দরজা খুলল উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য, মানতে হবে কড়া নিয়মবিধি]
পর্যটকদের জন্য বর্ধমান আরও উপহারের ডালি সাজিয়েছে। বাঁশদহ বিল ও চাঁদের বিল। এখানে ঘুরতে এলে টেন্ট বা তাঁবুতে থাকার সুযোগ পাবেন। টেন্টের পিছনে খেত ভরা সরষে ফুল। সামনে দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি, যেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আগত পরিযায়ী পাখির দল। ঘুরতে পারেন আপনিও। বিশাল জলরাশির মধ্যে ঘোরা ও পরিযায়ী পাখি দর্শনে চারটি নৌকাও কেনা হয়েছে। নৌকায় উঠে পড়ে সারা দুপুর ঘুরে বেড়ান বিল।
টেন্টের দাওয়ায় বসে নলেন গুড়ের পিঠেপুলিতে রসাস্বাদন করতে করতে শীতের সকালটা কাটিয়ে দেওয়া যায় আরামেই। এই সৌন্দর্যবৃদ্ধির নেপথ্যেও মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি জানাচ্ছেন, এখন তিনটি টেন্ট চালু করা হল পর্যটকদের থাকার জন্য। ওই জায়গাতেই কটেজ গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সেটাও দ্রুত তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।