shono
Advertisement

জীবন বাজি রেখে কীভাবে শত্রুশিবিরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছিলেন জওয়ানরা?

সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের জন্য কেন বেছে নেওয়া হয় অমাবস্যার রাত? বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়া পা নিয়েও কে খতম করেন জঙ্গিদের? The post জীবন বাজি রেখে কীভাবে শত্রুশিবিরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছিলেন জওয়ানরা? appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 10:58 AM Feb 09, 2017Updated: 05:38 AM Feb 09, 2017

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “মেরুন ব্যারেট কেউ এমনি এমনি পায় না, ওটা উপার্জন করতে হয়৷” প্যারাশুট রেজিমেন্টের জওয়ানদের মুখে এই কথাই শোনা গিয়েছিল সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের রাতে৷ ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রিমিয়ার এয়ারবোর্ন স্ট্রাইক ফোর্সের জওয়ানরা সেই রাতে শপথ নিয়েছিলেন, উরি হামলায় শহিদ জওয়ানদের হয়ে বদলা নিয়েই ফিরবেন৷

Advertisement

১৯ জন আধাসেনাই জানতেন, এটা টপ সিক্রেট মিশন৷ পাক রেঞ্জার্সদের হাতে ধরা পড়ে গেলে ভারত সরকার তাঁদের দায় নাও নিতে পারে৷ কিন্তু প্রাণ গেলেও দেশের আব্রুকে অক্ষত রাখতে ২৯ সেপ্টেম্বরের আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে তাঁরা পা রেখেছিলেন পাকিস্তানের মাটিতে৷ যে অভিযানের বিস্তারিত তথ্য ভারত সরকার এখনও প্রকাশ করতে চায় না৷ ৬৮ তম সাধারণতন্ত্র দিবসে সেই অকুতোভয় বীরদের শৌর্য পুরস্কারে সম্মানিত করেছেন রাষ্ট্রপতি৷ কিন্তু এবার একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সেই কমব্যাট অপারেশনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য প্রকাশ্যে এনে ফেলেছে৷ ১৯ জন অধাসেনা সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দায়িত্বে ছিলেন৷  যাঁদের মধ্যে ছিলেন একজন কর্নেল, পাঁচজন মেজর, দু’জন ক্যাপ্টেন, একজন সুবেদার, দু’জন নায়েব সুবেদার, তিনজন হাবিলদার, একজন ল্যান্সনায়েক ও প্যারা রেজিমেন্টের ফোর্থ ও নাইন ব্যাটালিয়ন্সের চারজন প্যারাট্রুপার৷

(সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে অংশগ্রহণকারী জওয়ানদের সর্বোচ্চ শৌর্য পুরস্কার)

ফোর্থ ব্যাটালিয়নের মেজর রোহিত সুরিকে কীর্তি চক্র পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে৷  ফোর্থ প্যারা রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল হরপ্রীত সাধু পেয়েছেন যুদ্ধ সেবা মেডেল৷ এই হরপ্রীত সাধুই পাক জঙ্গিদের লঞ্চ প্যাডে পরপর দু’বার নিরবিচ্ছিন্ন আক্রমণ করেন৷  পাশাপাশি, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সামগ্রিক পরিকল্পনা নিখুঁতভাবে রূপায়ণের জন্য তাঁকে দেওয়া হয় যুদ্ধ সেবা মেডেল৷  জানা গিয়েছে, উরি হামলায় ১৭ জন জওয়ানের মৃত্যুতে ক্ষোভে ফুঁসছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী৷ পাকিস্তানের লাগামছাড়া ঔদ্ধত্যের জবাব দিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে অংশ নিতে মুখিয়ে ছিলেন জওয়ানরা৷ কেউই বেঁচে ফিরে আসার আশা করেননি৷ ঘুমন্ত জওয়ানদের উপর নৃশংস হামলার বদলা নিতে শহিদ হতে তৈরি ছিলেন ১৯ জন জওয়ানই৷ সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি হয়ে গেলেও অমাবস্যার রাতের অপেক্ষা করছিলেন জওয়ানরা৷ অবশেষে ২৮-২৯ সেপ্টেম্বরের রাতে মেজর রোহিত সুরির নেতৃত্বে আটজনের স্ট্রাইক টিম সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে ঢোকেন৷ বিস্তারিত রেইকির পর সুরি তাঁর টিমকে নির্দেশ দেন, জঙ্গিদের লঞ্চপ্যাডে আঘাত হেনে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে৷ সুরি ও আরও দুই জওয়ান টার্গেটের মাত্র ৫০ মিটারের মধ্যে চলে আসেন৷ সেখানেই দুই জঙ্গিকে নিকেশ করে তাঁরা৷ কাছের জঙ্গলে আরও দুই জেহাদি লুকিয়ে রয়েছে বলে ড্রোন মারফত খবর পান রোহিত সুরি৷ নিজের প্রাণের কথা না ভেবে সুরি এগিয়ে যান জঙ্গিদের দিকে৷ গুলির লড়াইয়ে দুই জঙ্গি নিকেশ হয়৷ ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে এই জঙ্গিদের ঘাঁটিগুলির উপর ড্রোন মারফত কড়া নজর রেখে চলছিলেন আর এক মেজর৷ নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করার ৪৮ ঘন্টা আগে থেকেই চলছিল কড়া নজরদারি৷ জঙ্গিদের প্রতিটি গতিবিধির উপর নজর রাখছিল সেনা ড্রোন৷ সেই খবর প্রতি মুহূর্তে পৌঁছে যাচ্ছিল অভিযানরত সেনা অফিসারদের কাছে৷

(প্রয়োজনে ফের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, জানিয়ে দিলেন নয়া সেনাপ্রধান)

শৌর্য চক্রে ভূষিত ওই মেজরের নেতৃত্বে টার্গেট জোনকে চিহ্নিত করা হয়৷ কোথায় জঙ্গিদের অটোমেটিক রাইফেলস রয়েছে, সেই অস্ত্রাগারের খোঁজ, জঙ্গলের কোন দিক থেকে জঙ্গিরা পাল্টা আক্রমণ করতে পারে, প্রায় সবই জানা ছিল মেজরের৷ একদিকে অভিযানরত অফিসাররা জঙ্গিদের নিকেশ করেছিলেন, অন্যদিকে ওই মেজর ধীরে ধীরে তাঁর টিম নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন জঙ্গিদের অস্ত্র ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে৷ এই সময় আচমকাই কাছের একটি অস্ত্রাগার থেকে জঙ্গিরা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগিয়ে আসে ওই মেজর ও তাঁর টিমের দিকে৷ বিপদ আসন্ন বুঝে প্রায় বুকে ভর দিয়ে জঙ্গল ভেদ করে জঙ্গিদের অস্ত্রাগারের দিকে এগিয়ে গিয়ে এক জঙ্গিকে নিকেশ করে গুলির লড়াই স্তব্ধ করে দেন ওই মেজর৷

তৃতীয় মেজর ও তাঁর টিম এগিয়ে যাচ্ছিল ঘুমন্ত জেহাদিদের আরেকটি ঘাঁটির দিকে৷ তাঁর অতিরিক্ত দায়িত্ব ছিল, অভিযানরত সেনা জওয়ানদের নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা৷ কোনও পরিস্থিতিতেই জঙ্গিদের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেননি এই তৃতীয় মেজর৷ তাঁকেও পরে শৌর্য চক্রে পুরস্কৃত করা হয়৷

চতুর্থ মেজর গ্রেনেড ছুঁড়ে দু’জন জঙ্গিকে একেবারে কাছ থেকে নিকেশ করেন৷ গুঁড়িয়ে দেন জঙ্গিদের লুকনো অস্ত্র ঘাঁটি৷ তাঁকেও সাধারণতন্ত্র দিবসে সেনা মেডেল প্রদান করা হয়৷

(২০১১-তেও হয়েছিল সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, তিন পাক সেনার মাথা কেটে আনেন কমান্ডোরা)

কোনও অবস্থাতেই এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক সহজ ছিল না৷ জঙ্গিদের ভারী গুলিবর্ষণের মুখে প্রাণ যাওয়ার আশঙ্কা ছিল যে কোনও সময়৷ পঞ্চম মেজর তিন জঙ্গিকে চিহ্নিত করেন, যাদের হাতে ছিল আরপিজি (রকেট প্রপেলড গ্রেনেডস)৷ কোনওভাবেই যেন সেই রকেট জওয়ানদের দিকে ধেয়ে না আসে, সেই লক্ষ্যে নিজে এগিয়ে গিয়ে জঙ্গিদের গুলির লড়াইয়ে ব্যস্ত রাখেন পঞ্চম মেজর৷ তাঁর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় দুই জঙ্গি৷ এই সুযোগে অন্য দিক থেকে চতুর্থ মেজরের গুলিতে প্রাণ হারায় আরেক জঙ্গি৷ শুধু সেনা অফিসাররাই নন, প্যারাট্রুপাররাও এই অভিযানে অসম সাহসিকতার পরিচয় দেন৷ এক নায়েব সুবেদার গ্রেনেড ছুঁড়ে জঙ্গিদের লঞ্চপ্যাড গুঁড়িয়ে দেন ও প্রায় খালি হাতে দুই জঙ্গিকে নিকেশ করেন৷ তাঁকে দেওয়া হয়েছে শৌর্য চক্র৷ এই সুবেদার যখন দেখেন, জঙ্গিরা তাঁর জওয়ান ভাইয়ের দিকে ভারী গুলিবর্ষণ করছে, সেই সময় বাকিদের সুরক্ষিত স্থানে পাঠিয়ে নিজে এগিয়ে যান জঙ্গিদের নিকেশ করতে৷  গ্রেনেড ছুঁড়ে জঙ্গিদের খতম করে দেন নায়েব সুবেদার৷ সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে কোনও জওয়ান শহিদ না হলেও এক প্যারাট্রুপার আহত হন৷ দুই জঙ্গিকে ধাওয়া করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত ল্যান্ডমাইনের উপর পা রেখে দেন৷ তাঁর বাঁ পা বিস্ফোরণে উড়ে যায়৷ কিন্তু ওই অবস্থাতেও এক জঙ্গিকে খতম করেন ওই প্যারাট্রুপার৷

(টপ সিক্রেট মিশন বলে এই প্রতিবেদনে সেনাকর্মীদের আসল নামের পরিবর্তে ছদ্মনাম ব্যবহার করা হল)

The post জীবন বাজি রেখে কীভাবে শত্রুশিবিরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছিলেন জওয়ানরা? appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement