বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: ‘ব্যোমকেশ’-এর গল্প পর্দায় এতভাবে দেখেছি যে, খুব যত্ন নিয়ে আলাদা মাত্রা যোগ না করতে পারলে তেমন একটা দাগ কাটে না। সম্প্রতি ‘হইচই’-এ (Hoichoi) মুক্তি পেয়েছে ‘চোরাবালি’ গল্প অবলম্বনে ‘ব্যোমকেশ’-এর নতুন সিজন (Byomkesh 7)। অভিনয়ে অনির্বাণ ভট্টাচার্য (Anirban Bhattacharya), সুপ্রভাত দাস, অর্জুন চক্রবর্তী, চন্দন সেন, ঋদ্ধিমা ঘোষ, ঊষসী রায় এবং আরও অনেকে।
‘চোরাবালি’ গল্পটা এমনিতেই নানান স্তরযুক্ত এবং ‘ব্যোমকেশ’ সিরিজে বেশ জনপ্রিয়। দুই এপিসোডে সেই গল্পের মূল কাঠামো এক রেখেই এই ওয়েব সিরিজ তৈরি করা হয়েছে। জানা গল্পের চলচ্চিত্রায়ণ হলে সুবিধে-অসুবিধে দুই-ই আছে। আতস কাচের পর্যবেক্ষণের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এই গল্পের টান হল ‘হিমাংশু রায়’ এবং ‘কালীগতি ভট্টাচার্য’র মতো স্তর যুক্ত চরিত্র এবং হরিনাথের নিখোঁজ হওয়াকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা রহস্য। এছাড়া আরও একটি চরিত্র খুবই উল্ল্যেখযোগ্য। সেটা হল এই গল্পের প্রেক্ষাপট, অর্থাৎ ‘চোরাবালি’ (Chorabali)।
এই ‘চোরাবালি’র বুকে কত কিছু ডুবে যায় টের পাওয়া যায় না এবং মানুষের মনের মতোই গভীর, অতল। খানিকটা এই গল্পের চরিত্রদের মতোই। হরিনাথ কিংবা রাধার মনের কথা অবশ্য আমরা জানতেও পারি না। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময়ই সত্য অন্বেষণের মধ্যে দিয়ে মানুষের বিচিত্র মনের কার্যকলাপ নিয়ে চর্চা করতে চেয়েছেন। কখনও তাঁর চরিত্ররা নিরুপায়, কখনও অসাধু, কখনও লোভী, কখনও নিষ্পাপ, কখনও কামুক, আবার কখনও প্রতিহিংসাপরায়ণ। আর একই সঙ্গে সেই সময়কার সমাজব্যবস্থার প্রতিচ্ছবিও উঠে আসে ‘ব্যোমকেশ’-এর উপন্যাসগুলিতে।
[আরও পড়ুন: প্রথমবার বড়পর্দায় জুটি বাঁধছেন বিক্রম ও দিতিপ্রিয়া, বন্ধুত্বের গল্প নিয়ে তৈরি হবে সিনেমা]
ওয়েব সিরিজে সিনেমার চাইতে বিস্তার বেশি তাই দর্শকের প্রত্যাশাও বেশি। কিন্তু এই সিরিজে এই ছোট-ছোট দিকগুলো সেইভাবে ফুটে ওঠে না। নতুন করে এ গল্পে জানার কিছু নেই। এ তো অনেকেরই পড়া। তাহলে কেন দেখব? অনির্বাণ ভট্টাচার্যর উপস্থিতি নিশ্চয়ই একটা বাড়তি উৎসাহ দেয়। কিন্তু শুধু সেইটুকুতে মন ভরে না। হিমাংশু রায়ের চরিত্রে অর্জুন চক্রবর্তীকে দেখতে বেশ উজ্জ্বল লাগলেও এই চরিত্র ডিমান্ড করে অভিজ্ঞ, দাপুটে আবার একই সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় এবং নরম মনের এক মধ্যবয়সী পুরুষালি চেহারা। যদিও মূল গল্প থেকে হিমাংশুর চরিত্রে এই সিরিজে রদবদল করায় তাঁর চরিত্রের দয়ালু দিকটা উঠে আসে না। অর্জুন এই চরিত্রের জন্য একটু বেশিই সুপুরুষ এবং তরুণ, যার মধ্যে তামাটে অভিজ্ঞতার রং তৈরি হয়নি।
কালীগতির চরিত্রে শীর্ণকায়, তেজী, শান্ত, তন্ত্রসাধকের চেহারায় কোনও এক দৃপ্ত বয়স্ক চেহারার প্রয়োজন ছিল, যাকে দেখলেই পুরোহিত মনে হবে। অন্তত উপন্যাসে প্রথম দেখায়, ব্যোমকেশের তাই মনে হয়েছিল এই জটিল চরিত্রের মানুষটিকে দেখে। চন্দন সেন শক্তিশালী অভিনেতা হলেও কালীগতির যে ছবি আমাদের মনে আছে তার সঙ্গে খাপ খায় না। ফলে গোটা ওয়েব সিরিজে চরিত্রদের আউটলাইন আঁকা হলেও সূক্ষ্ম দিকগুলো সুস্পষ্ট হয় না। আর সেটাই এই উপন্যাসের মূল দিক। তাই অনির্বাণ-সুপ্রভাত জুটি খানিকটা ব্যাকফুটে।কাস্টিং আরও একটু যত্ন নিয়ে করা যেত, বিশেষ করে এই সিরিজের অন্যান্য অভিনেতাদের পাশে ‘বেবি’র চরিত্রে এই শিশু অভিনেতা পর্দায় বেশ বেমানান। কিন্তু আফটার অল ‘ব্যোমকেশ’ তো! তাই গল্পের টানেই দেখা হয়ে যাবে এইটুকু অন্তত বলাই যায়।
সিরিজ: ব্যোমকেশ ৭
পরিচালনা: শমীক হালদার
অভিনয়ে: অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সুপ্রভাত দাস, অর্জুন চক্রবর্তী, চন্দন সেন, ঋদ্ধিমা ঘোষ, ঊষসী রায়