কান পরিষ্কার করার অভ্যাস ত্যাগ করুন। এতে ভালর বদলে খারাপই হয়। কী ক্ষতি হয় কানের? জানাচ্ছেন বিশিষ্ট ইএনটি স্পেশালিস্ট ডা. সৈকত সমাদ্দার। লিখছেন শ্রীজা ঘোষ।
আমাদের কান তিন ভাগে বিভক্ত। বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ ও অন্তঃকর্ণ। পরিষ্কার শুধু আমরা বহিঃকর্ণকেই করে থাকি অর্থাৎ কানের পাতা থেকে পর্দা পর্যন্ত। কিন্তু এটিকে একটি ‘ব্লাইন্ড লেন’ বলা যেতে পারে অর্থাৎ গলিটির শেষে পর্দা ছাড়া কিছুই নেই। এইটুকু অংশ নিজে নিজেই পরিষ্কার রাখতে সক্ষম। কারণ কানকে বলা হয়, ‘সেলফ ক্লিনজিং অরগ্যান’। তাই আলাদা করে কানকে পরিষ্কার করার কোনও প্রয়োজন নেই। এবার আসা যাক ইয়ার ওয়্যাক্সের (ear wax) কথায়। এটি কানকে প্রতিরক্ষা করতে সাহায্য করে। এই ইয়ার ওয়াক্সটি আঠালো হয় যাতে বাইরের ধুলো ময়লা সহজেই তাতে আটকে কানকে নোংরা হওয়া থেকে দূরে রাখে। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন যে ময়লার কারণে অনেকসময় কান চুলকায় বা জ্বালা করে। তখন কী করণীয়? আসলে এটিকে বলা যেতে পারে একটি বদঅভ্যাস। কারণ যে পরিমাণ ময়লা জমে আমাদের কানে তাতে কোনওপ্রকার জ্বালা বা চুলকানোর প্রয়োজন পড়ে না। এটি একটি অভ্যাস।
কান পরিষ্কারের সময় মাথায় রাখুন
- অনেক সময় কানে পুঁজ জমে। তখন বাইরে থেকে শুধুমাত্র ড্রাই মপিং করা উচিৎ। অর্থাৎ একটি কাঠির মাথায় পরিষ্কার তুলো আটকে বাইরে থেকে শুধুমাত্র পুঁজ মুছে নেওয়া উচিত।
- বাজার চলতি ইয়ারবাড ব্যবহার না করে মেডিকেটেড ইয়ার উইক্স ব্যবহার করুন। প্রত্যেকদিন স্নানের পর কানের সামনেটা যদি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বাড়তি জলটুকু শুকনো করে মুছে ফেলা যায় তাহলেই যথেষ্ট। কানে দেশলাই কাঠি, পাখির পালক, সেফটিপিন ইত্যাদি দিয়ে কানের ভিতর অযথা খোঁচাখুঁচি করা চলবে না। এইগুলি দিয়ে যদি বারবার কানের ভিতর ঘষাঘষি করতে থাকেন তাহলে এর ফলে কানের চামড়ায় ছোট ছোট চোট অথবা মাইক্রোট্রমা (micro trauma) তৈরি হয়। এর মূল কারণ হচ্ছে কানের চামড়া অত্যন্ত নরম ও সরাসরি হাড়ের উপর থাকে। তাই চোট লাগার সম্ভবনাও বেশি। মনে রাখবেন যেগুলি দিয়ে আমরা কান পরিষ্কার করছি সেগুলি প্রত্যেকটাই অপরিশোধিত। এর ফলে চোট পাওয়া জায়গাগুলিতে ফের যদি এগুলি ব্যবহার করা হয় তাহলে আলসার বা সংক্রমণ হতে পারে। অনেক গভীরভাবে যদি কেউ কান পরিষ্কার করে তাহলে পর্দা ফুটো হয়ে গিয়ে শ্রবণশক্তিও কমে যেতে পারে।
- কান পরিষ্কার করতে গিয়ে যদি চোট লাগে বা রক্ত বেরোয় তাহলে কোনওভাবে তুলো বা কাপড় কানের ভেতর ঢুকিয়ে পরিষ্কার করা একেবারে উচিত নয়। তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইয়ার ড্রপ বা ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। আরও একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে চোট লাগার পর কোনওভাবেই গরম বা ঠান্ডা সেঁক দেওয়া যাবে না।
[ ব্যায়াম বা ডায়েটিং নয়, পর্যাপ্ত ঘুমেই কমতে পারে ভুঁড়ি ]
শিশুদের করা জরুরি
শিশুদের ক্ষেত্রে কানের সমস্যা একটু বেশিই হয়। তাদের কানে বেশিই ময়লা জমে যায়। আগেই বলা হয়েছে যে কান হল ‘সেল্ফ ক্লিনজিং অরগ্যান। এবার প্রশ্ন উঠতে পারে তবুও কেন তাদের কানে ময়লা জমে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে শিশুদের মধ্যে চিবিয়ে খাবার খাওয়ার প্রবণতা থাকে না। স্বাভাবিকভাবেই গিলে খাবার খেলে কানের এক্সারসাইজ বা রক্ত সঞ্চালন ভাল হয় না যা কিনা কানে ময়লা জমতে সাহায্য করে।’
কী করণীয়
- অযথা খোঁচাখুচি না করাই ভাল কান পরিষ্কারের জন্য
- চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
- চুইংগাম দেওয়া যেতে পারে, যাতে চিবোনোর অভ্যাস গড়ে ওঠে এবং কানেরও এক্সারসাইজ হয়
- খেয়াল রাখবেন শিশুর শ্রবণশক্তি কমে আসছে কিনা। তেমন হলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
- শিশুর কানে সরষের তেল নয়
সদ্যোজাতর কান ভাল রাখতে
কানে পুঁজ জমা নবজাতকদের ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক। তাই সেইদিকে খেয়াল রাখা উচিত এবং কীভাবে তা পরিষ্কার করা উচিৎ তা অতি অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী করা উচিত। সঠিক পদ্ধতিতে ফিডিং করানো উচিত। কারণ শুয়ে খাবার সময় যদি তরল পদার্থ কানে গড়িয়ে গিয়ে মধ্যকর্ণে পৌঁছে যায় তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকে।
গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যেমন হাত পরিষ্কার রাখা, নিয়মিত স্নান করা এবং স্নানের পর চুল ও কান শুকনো করে মুছে নেওয়া জরুরি।
- দূষিত পুকুরের জলে স্নান করা যাবে না। সমুদ্রে বা সুইমিংপুলে স্নান করার আগে কানে ইয়ার প্ল্যাগ লাগিয়ে নিতে হবে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ইয়ার ড্রপ বা হার্বাল মেডিসিন বা পাতার রস নয়।
- কান চুলকানোর বদ অভ্যাস পরিত্যাগ করুন।
পরামর্শ : ৯৪৩২৩১১৮২২
[ শরীরচর্চার পর কেমন হবে ডায়েট? দেখে নিন একঝলকে ]
The post খুঁচিয়ে কান পরিষ্কার করছেন? ভবিষ্যতে এই সমস্যাগুলোর জন্য তৈরি থাকুন appeared first on Sangbad Pratidin.