ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: শান্তিনিকেতন (Santiniketan) দুটি ঋতুতে সেজে ওঠে। একটি বর্ষা অন্যটি শীত। এখন শীত চলে যাচ্ছে, ভরা ফাগুন শান্তিনিকেতনে। আর এই সময় শান্তিনিকেতনে সোনাঝুরি খোয়াই, কোপাই নদীর আশপাশ সেজে উঠেছে পলাশ ফুলে। কোথাও লাল আবার কোথাও হলুদ। মনে হয়, শান্তিনিকেতনে প্রকৃতি যেন আপন খেয়ালে ছবি এঁকেছে। আর এই সুন্দর পলাশ ফুল এখন ধ্বংসের মুখে।
পলাশ ফুল পাড়তে গিয়ে ভেঙে ফেলা হচ্ছে গাছের ডাল। আর সেই সব ফুল দেদার বিক্রি হচ্ছে সোনাঝুরিহাটে ফুলের মালা করে। শান্তিনিকেতনে আসা পর্যটকরা খোয়াইয়ে বেড়াতে গিয়ে সেই মালা কিনে কেউ গলায় পড়ছেন আবার কেউ খোঁপায় বাঁধছেন। বসন্ত উৎসবের প্রায় মাসখানেক আগে থেকেই এমন পলাশ নিধন দেখে অনেক ক্ষুদ্ধ। আর এই পলাশ ফুল ও গাছ বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরা। তাঁরা হাটে গিয়ে যাঁরা বিক্রি করছেন বা যাঁরা কিনছেন, তাঁদের অনুরোধ করছেন পলাশ ফুল কেনাবেচা বন্ধ রাখতে। তবে তাতে শেষরক্ষা হবে কি? ভাবাচ্ছে পরিবেশপ্রেমীদের।
[আরও পড়ুন: হত্যাকাণ্ডে সুবিচারের দাবিতে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হবেন, আনিসের বাড়ি গিয়ে আশ্বাস অধীরের]
পলাশ ফুল নিয়ে সচেতনতার অভাব বলেই মনে করছেন শান্তিনিকেতনের বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, পরিবেশপ্রেমীদের পাশাপাশি তৎপর হতে হবে প্রশাসনকে। আর পর্যটকেরা যদি মালা কেনাই বন্ধ করে দেন, সে ক্ষেত্রে বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে বিক্রেতাদের। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এই পলাশ নিধন বন্ধ করতে ২০১৭ সাল থেকে বসন্ত উৎসবে পলাশ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তার পর থেকে পলাশ নিধন কিছুটা কমেছিল। এখন বিশ্বভারতী নিজেদের মতো করে বসন্ত উৎসব করে। তাই পর্যটক এবং স্থানীয়রা এখন আবির খেলেন সোনাঝুরিতে। বসন্ত উৎসব দেরি থাকলেও পলাশ নিধন শুরু হয়ে গিয়েছে শান্তিনিকেতনে। সোনাঝুরির হাটে যারা এই পালাশের মালা বিক্রি করছে, তাঁদের বয়স দশ থেকে পনেরো বছরের মধ্যে। এক একটা মালা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়।
হাটে আসা এক পর্যটন নন্দিতা ভট্টাচার্য বলেন, “পলাশ মালা কেনা যাবে না বা বিক্রি করা যাবে না, এই ধরনের নির্দেশ কোথাও চোখে পড়ল না। তাই কিনে নিয়েছি। আসলে পলাশ আমার খুব প্রিয় ফুল। সব জায়গায় পাওয়া যায় না।” পর্যটক এবং সোনাঝুরি হাটে যারা পলাশ বিক্রি করছেন, তাদের সচেতন করতে হাটে ঘুরছেন বিশ্বভারতীর একদল ছাত্রছাত্রী। এই বিষয়ে সৌরভ বন্ধু দাস এবং মেখলা চৌধুরি জানান, “আসলে সব থেকে বড় সমস্যা মানুষের স্বচেতনতার অভাব। পালশ এখন নির্বিচারে তুলে এনে মালা করে বিক্রি করা হচ্ছে। ভাঙা হচ্ছে ডাল। তাই এই পালাশ নিধন বন্ধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”