সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এবারেও হল না। একটা গোটা দেশ, একটা গোটা প্রজন্ম, যে স্বপ্ন দেখেছিল ফাইনালে এসে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারলেন না রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা (Virat Kohli)। অজিদের কাছে কার্যত একপেশেভাবে পর্যুদস্ত হয়ে বিশ্বকাপের রানার্স হল ভারত। অথচ এই দলটাকেই একটা সময় অপ্রতিরোধ্য মনে হচ্ছিল। তাহলে ফাইনালে কোথায় ভুল হল? কেন হারতে হল মেগা ফাইনালে। দেখে নেওয়া যাক সম্ভাব্য কারণগুলি।
১। বড় ম্যাচের চাপ: প্রথমার্ধে পিচ কঠিন ছিল। কিন্তু এতটাও কঠিন ছিল কি যে ২৪০ রানে অল-আউট হয়ে যেতে হবে? বিশেষ করে যেখানে রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) শুরু থেকেই সপাটে মারছিলেন অজি বোলারদের? হয়তো নয়। আসলে শুভমান গিল, শ্রেয়স আইয়াররা বড় ম্যাচের চাপ সামলাতে পারলেন না। যেমন পারলেন না সূর্যকুমার যাদব। বিরাট কোহলির মতো মহাতারকাও স্বভাববিরুদ্ধভাবে সেট হওয়ার পর বিশ্রীভাবে আউট হলেন। নাহলে এই পিচেও অন্তত ২৭০-২৮০ রান করে দেওয়া যেত। সেটা করা গেলে অন্তত এর চেয়ে ভালো লড়াই করা সম্ভব হতো।
[আরও পড়ুন: শিয়রে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন, শহর থেকে প্যান্ডেলের বাঁশ খোলার ডেডলাইন দিল পুরসভা]
২। শিশির ফ্যাক্টর: ফাইনালের আগে থেকেই রোহিতদের মাথায় ঘুরছিল শিশির। সেটাই শেষ পর্যন্ত বিরাট ফ্যাক্টর হয়ে গেল। প্রথম ইনিংসে ভারত যখন ব্যাট করছিল, তখন বেশ ভালোই সুবিধা পাচ্ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার এবং স্লো বোলাররা। বল থামছিল, ব্যাটেও আসছিল না। কখনও কখনও টার্নও করেছে। কিন্তু সন্ধ্যেয় শিশির পড়ার পর সেই একই পিচ যেন মসৃণ এবং ব্যাট করার জন্য আদর্শ হয়ে গেল। কুলদীপ বা জাদেজা কেউই সেভাবে টার্ন করাতে পারলেন না। বল যে প্রথম ইনিংসে থেমে থেমে আসছিল, সেটাও হল না। নতুন বলে পেসাররা সুবিধা পেলেন বটে, তবে তাতে বিশেষ কাজ হল না।
৩। ফিল্ডিং: দু’দলের মধ্যে বিরাট পার্থক্য গড়ে দিল ফিল্ডিং। অজিরা যখন শুরু থেকেই দুর্দান্ত এবং অনবদ্য ফিল্ডিংয়ে ভারতকে চেপে ধরল, তখন উলটোটাই করল ভারত। প্রথম থেকেই অতিরিক্ত রান দেওয়া, ঢিলেঢালা ফিল্ডিং, কেএল রাহুলের জঘন্য উইকেট কিপিং, অন্তত বিশ্বকাপ ফাইনালে এমন পারফর্ম করলে জেতা যায় না। অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ফিল্ডিং করে অন্তত ৩০-৪০ রান বাঁচিয়েছে। সেটা না হলে ভারতের স্কোরটা সম্মানজনক হত। লড়াইটাও করা যেত।
৪। অধিনায়কত্ব: গোটা বিশ্বকাপে দুর্দান্ত এবং প্রশংসিত রোহিতের অধিনায়কত্ব। কিন্তু ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্সের কাছে গোল খেয়ে গেলেন ভারত অধিনায়ক। কামিন্সের অনবদ্য ফিল্ড প্লেসিং, এবং দুর্দান্ত বোলিং ভারতীয় ইনিংসে বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। তাছাড়া বিশ্বকাপের ফাইনালের মতো বড় ম্যাচে যেভাবে টসে জিতে বল করার সাহসী সিদ্ধান্ত কামিন্স নিলেন, সেটা আলাদা করে প্রশংসার দাবি রাখে। অন্যদিকে রোহিত ব্যাট হাতে এদিনও সেই কাজটা করেছেন, যেটা এতদিন করে এসেছেন। কিন্তু ফাইনালে হয়তো অধিনায়কের থেকে আরেকটু বেশি প্রত্যাশা ছিল। অধিনায়ক হিসাবেও রোহিতের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এদিন হতাশাজনক ছিল। ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর যখন অস্ট্রেলিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করার সুযোগ ছিল, তখন সেই সুযোগ ভারত কাজে লাগায়নি। হেড এবং লাবুশানে যখন জুটি বেঁধে এগোচ্ছেন, তখনও সেভাবে ফিল্ড প্লেসিংয়ের মাধ্যমে চাপ তৈরি করতে পারলেন না ভারত অধিনায়ক। ওই জুটি ভাঙার পরিকল্পনাও সেভাবে চোখে পড়ল না।
[আরও পড়ুন: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়ান্ট স্ক্রিনে বিশ্বকাপ, মদ-মাদক-বাজি-বহিরাগতে নিষেধাজ্ঞা]
৫। হেড ফ্যাক্টর: ২০২৩ বিশ্বকাপ ফাইনালের সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হয়ে গেলেন ট্রেভিস হেড। প্রথমে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের সময় অনবদ্য ক্যাচ নিয়ে যেভাবে রোহিতকে ফেরালেন সেটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেল। অনেকে বলছেন, ওটাই বিশ্বকাপের সেরা ক্যাচ। তার পর ব্যাট হাতে যে ইনিংসটা তিনি খেললেন, সেটা এককথায় অনবদ্য। ওই পাহাড়প্রমাণ চাপের মধ্যে যেভাবে তিনি স্নায়ুর চাপ সামলে শতরান করলেন, সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। দিনের শেষে রোহিত হয়তো আফসোস করবেন, অস্ট্রেলিয়ার কাছে নয়, হেডের কাছেই হেরে গেলেন তাঁরা।