গৌতম ভট্টাচার্য: এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে সেঞ্চুরিয়নে টেস্ট ম্যাচ জেতার পর বিদেশি অধিনায়কের মুখ যেমন উদ্ভাসিত দেখানো উচিত, বিরাট কোহলির (Virat Kohli) ঠিক উল্টো। মনে হল তাঁর টিমই যেন জঘন্য হারে ০-১ পিছিয়ে পড়ল। অথচ বাস্তব তো মধুরতম গান গাইছে। ব্রিসবেনের অসামান্য জয় দিয়ে ভারতীয় টেস্ট দলের বছরটা শুরু হয়েছিল। শেষ হলো একইরকম চমকপ্রদভাবে।
অপেক্ষা করুন -আর একটা কথা শোনার জন্য। ১৯৯০-২০০৭ সেনা দেশগুলোতে যাওয়া সফরে ভারত মোট জিততে পেরেছে মাত্র ৪ বার। সেনা দেশ মানে সাউথ আফ্রিকা। ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া। আর এই এক বছরে কিনা সেনা দেশগুলোকে বিদেশে হারিয়েছে চারবার। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে হার যদি সরিয়ে রাখা যায়, ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ২০২১ পার্ক স্ট্রিটের আলোকসজ্জার মতো জ্বলজ্বল করা লাইটিং নিয়ে এল। ভবিষ্যৎ যার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ভাববে, কী করে সম্ভব হয়েছিল?
[আরও পড়ুন: IND vs SA: কাজে দিল না বাভুমার লড়াই, ভারতীয় পেসারদের দাপটে সেঞ্চুরিয়নে কাঙ্ক্ষিত জয় টিম ইন্ডিয়ার]
দ্রুত বোঝা গেল ১১৩ রানে টেস্ট ম্যাচ জয়ী অধিনায়ক টিভি ইন্টারভিউতে আসেননি। সেই ব্যাটসম্যান টিমের হয়ে এসেছে যার টানা দু’বছর কোনও সেঞ্চুরি নেই বলে বিশ্বক্রিকেট ব্রহ্মান্ডে হুলুস্থুলু বেঁধে গিয়েছে। যে এই টেস্টে দু’ বার একই ভাবে আউট হয়েছে। যার ভবিষ্যৎ প্রাকটিসের ধরন নিয়ে মজার গ্রাফিক্স বার হচ্ছে যে তিনটে স্ট্যাম্প নেটের ডান দিকে তেরছা করে সরিয়ে রাখা। কারণ ওই এলাকাতেই না তাঁকে বারবার পেড়ে ফেলছে বিপক্ষ। ঠিক এই বিপর্যয়টাই নিয়ে এসেছিল ২০১৪-র ইংল্যান্ড। ডানকান ফ্লেচার তখন কোচ, তিনি সমাধান করতে পারেননি। ধোনি পারেননি। দেশ থেকে ফেরার ফ্লাইট ধরে বাড়িতে জাস্ট সুটকেস রেখে কোহলি চলে গেছিলেন বান্দ্রা কুর্লা কমপ্লেক্সে। যেখানে তাঁকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে আসেন স্বয়ং শচীন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar)। টানা দু’ দিন সবার অলক্ষ্যে শচীন তাঁকে বুঝিয়েছিলেন এই ওষুধের প্রেসক্রিপশন কী ?
এদিন খেলার শেষে সুনীল গাভাস্কার (Sunil Gavaskar) আইডিয়াটা ফের চাগিয়ে দিলেন যে এই অবস্থায় নিউ ইয়ার গ্রিটিংস জানিয়ে ফোন করার সঙ্গে একটু শচীনের পরামর্শটা নিয়ে নিন না কোহলি। উত্তম প্রস্তাব। কারণ ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোরের পরামর্শ শুনবে না বিরাট। ইংল্যান্ডে শাস্ত্রীর কথাই পাত্তা দেননি তো কে রাঠোর। বাকি থাকেন কোচ দ্রাবিড়। যিনি ম্যান্ডেলার দেশে একইভাবে প্রথম টেস্ট জিতে সিরিজ শুরু করেছিলেন। তারপর ব্যবধান ধরে রাখতে পারেননি। কিন্তু গ্রেম স্মিথের সেই দক্ষিণ আফ্রিকা যদি টেস্ট টিম হয় এরা অনূর্ধ্ব তেইশ। কাগিসো রাবাদা ছাড়া একজন সেই দলে সুযোগ পাবেন বলে মনে হয় না। নতুন বছরে বিরাট ফর্মে ফিরে গেলে ভারতকে রোখাই যাবে না। এতো বন্য এবং ভয়ঙ্কর এখন তার পেস আক্রমণ। বুমরা-সিরাজ-শামি। তাই বিরাট ছাড়া অন্য কোনও প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন নেই। একটা স্ট্যাট দেখছিলাম। গত একবছরে বিদেশে পেসাররা শতকরা ৮৩ শতাংশ উইকেট তুলেছে। আর ঘরের মাঠে ছয় টেস্টে স্পিনাররা নিয়েছে শতকরা ৮৫ শতাংশ উইকেট। একটা টিম কত সুসংহতভাবে জমাট বেঁধেছে, এই স্ট্যাট তার নির্ভেজাল প্রমাণ।
আবার বলা যাক বাকি কাজ বলতে শুধু কোহলি। তিনি শচীনকে ফোন করবেন কিনা জানি না। গত সাতবছরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। এখন তিনি ‘কিং কোহলি’। ইগো সরিয়ে রেখে ফোন করতে হবে। আর এই চিকিৎসা কি ফোনে হয়? এটা হাতেকলমে দেখানোর ব্যাপার। ভিডিও কলে হয়ে গেলে আগের বার মুম্বই গিয়ে তাঁকে পড়ে থাকতে হত না। হাতের কাছে সারানোর লোক বলতে সেই কোচ দ্রাবিড়। তাঁকে বাদ দিলে পড়ে থাকেন আরও একজন। যাঁকে গোটা টিম এবং বিদায়ী কোচ ক্রিকেটবিজ্ঞানী আখ্যা দিয়েছেন, সেই রবিচন্দ্রন অশ্বিন (Ravichandran Ashwin)। মনে রাখতে হবে শুধু চারশোর ওপর উইকেট নয় পাঁচটা টেস্ট সেঞ্চুরি আছে অশ্বিনের।
কোহলির অফ স্টাম্পের বাইরের পচা রোগ সারাতে কথা বলছেন অশ্বিনের সঙ্গে–এর চেয়ে রোমহর্ষক ক্যালেন্ডার ২০২২-এ আর কী হতে পারে ভারতীয় ক্রিকেটের?