হেমন্ত মৈথিল, মহাকুম্ভ নগর: ১৪৪ বছর পর মহাযোগ! প্রয়াগরাজে গঙ্গার তীরে অমৃত কুম্ভের সন্ধানে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে এসেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। তাঁদের মধ্যে যেমন রয়েছেন ভক্তের দল, তেমনই আছেন সন্তরাও। সন্ন্য়াসীদের মধ্যে অনেকেই নজর কাড়ছেন বিবিধ কারণে। যেমন আইআইটি বাবা। ভক্তেরাই অবশ্য আইআইটি বাবা নাম দিয়েছে সদাহাস্যময় এই তরুণ সন্ন্য়াসীর। কিন্তু কেন এমন নাম?
মকর সংক্রান্তির পুণ্যতিথির দিনে গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে 'আইআইটি বাবা'কে খুঁজে পান একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এক সাংবাদিক। তরুণী সন্ন্যাসীর সাক্ষাৎকার নেন তিনি। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে। মহাকুম্ভের আবহে যা চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। অন্যতম কারণ, আইআইটি মুম্বই থেকে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার পরে সংসার জীবন ত্যাগ করেছেন তিনি। বেছে নিয়েছেন আধ্যাত্মিকতার পথ। বলা বাহুল্য, প্রাক্তন আইআইটিয়ান হওয়ার কারণেই তরুণ সন্ন্যাসীকে 'আইআইটি বাবা' নাম দিয়েছে ভক্তেরা।
ভারতে আইআইটিতে পড়ার সুযোগ পাওয়া পড়ুয়াদের জন্য স্বপ্নপূরণের সমান। অ্য়াকাডেমিক ক্ষেত্রে মেধাবী ছাত্রেরাই কেবল আইআইটিতে পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। বিশ্বখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে বেরোলেই ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল! সংসারি মানুষ স্বভাবতই প্রশ্ন তুলবে, সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ছেড়ে আধ্যাত্মিকতার পথে কেন পা বাড়ালেন যুবা সাধু? সাংবাদিকও সেই প্রশ্ন করেন দোহারা চেহারার লম্বা যুবা ওই সাধুকে। বুদ্ধিদীপ্ত এবং হাস্যমুখ সন্ন্যাসী হাসতেই হাসতেই উত্তর দেন, "এটাই তো শ্রেষ্ঠ পথ।"
যদিও পরিবারের লোকেদের বিষয়টা বোঝানো কঠিন ছিল। সাংবাদিকের জোরাজুরিতে ‘আইআইটি বাবা’ হয়ে ওঠার গল্প শোনান সন্ন্য়াসী। সংসার জীবনে তাঁর ছিল নাম অভয় সিং। সাধক জীবনে পরিচিত ‘মাসানি গোরখ’ নামে। হরিয়ানার বাসিন্দা অভয় পড়াশোনা করেছেন আইআইটি বম্বে থেকে। ‘অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং’-এ স্নাতক। পরবর্তীতে ডিজাইনিং নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা করেন। পদার্থবিজ্ঞান পড়াতেন ছাত্রছাত্রীদের। ছবি তোলাও পছন্দ ছিল। পরবর্তীতে দর্শনের শিক্ষার দিকে ঝোঁকেন। বোনের কথায় কানাডা গিয়েছিলেন মাঝে। কিন্তু শান্তি পাচ্ছিলেন না কিছুতেই। অবশেষে আধ্যাত্মিকতার পথে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেন। মাসানি গোরখ বাবার কথায়, "জ্ঞানের পিছনে ছুটে কোথায় পৌঁছানো সম্ভব? এখানে, এই জায়গায়।"
সাংবাদিকের সঙ্গে কথাবার্তায় জানান, সন্যাসের নাম মাসানি গোরখ হলেও রাঘব এবং জগদীশ বলেও নিজের পরিচয় দেন। তাঁর জ্ঞান অন্বেষণ, সন্ন্যাসব্রতকে বাড়ির লোকেরা পাগলামি ভেবেছিলেন। এক সময় বড় সিদ্ধান্ত নেন। বাড়ি ছাড়েন তিনি। আইআইটি বাবার কথায়, “আমি এখন বুঝতে পারি আমি এখন যা আহরণ করছি, সেটাই প্রকৃত জ্ঞান।’’ আরও বলেন, মানুষ তাঁর সম্পর্কে কী ভাবছেন তা নিয়ে তিনি বেশি ভাবেন না।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এই সাক্ষাৎকারের এই ভিডিও। জীবন, আধ্যাত্মিকতা, জ্ঞান, শূন্যতা, সত্যান্বেষণ নিয়ে আইআইটি বাবার বক্তব্যে মুগ্ধ অধিকাংশ নেটিজেন। উলটো কথাও বলেছেন কেউ কেউ। আইআইটি থেকে পড়াশোনার পরেও এই পথে কেন? প্রশ্ন তুলছেন তারা। যদিও এই প্রশ্ন আইআইটি বাবার বৃহত্তম আধ্যাত্মিক জীবনে অর্থহীন।