সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একাধিক দলিত সংগঠনের ডাকা ভারত বনধের জেরে অশান্তির আগুনে পুড়ছে গোটা দেশ। এসসি-এসটি আইনে রদবদলের জেরে দেশের প্রায় সব প্রান্ত থেকে ছোট-বড় সংঘর্ষের খবর আসছে। মধ্যপ্রদেশে ভারত বনধের জেরে প্রবল অশান্তিতে অন্তত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আইজি আইনশৃঙ্খলা মকরন্দ দেউসকর জানিয়েছেন, গোয়ালিয়র ও মোরেনাতে বিক্ষোভরত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে প্রকাশ্য আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কিছু মানুষ। অবাধে গুলি চলছে, পুড়ছে পুলিশের গাড়ি। দাউদাউ করে জ্বলছে আম আদমির বাড়িঘর। উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে রেল পরিষেবা থমকে দাঁড়িয়েছে। পথঘাট শুনসান। মৃতদের প্রতি শোক জ্ঞাপন করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, দলিত ভাই-বোনদের মৃত্যুতে তিনি শোকস্তব্ধ। তিনি শান্তির পক্ষে সওয়াল করেছেন।
#WATCH #BharatBandh over SC/ST protection act:Shots fired during protests in Madhya Pradesh’s Gwalior pic.twitter.com/p8mW36qL0s
— ANI (@ANI) April 2, 2018
[দেশে ফিরল ৩৯ কফিন, সন্ধ্যায় কলকাতায় আসছে ইরাকে নিহত দুই বাঙালির দেহাংশ]
ইতিমধ্যেই পাঞ্জাবে রাজ্য সরকার মোবাইল ইন্টারনেট ও বাস পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অশান্তির আঁচ এসে লেগেছে রাজধানী দিল্লির গায়েও। হিসার-নয়াদিল্লি ও অম্বালা-নয়াদিল্লি রুটে ট্রাফিক পরিষেবা বিঘ্নিত। তিলক মার্গ, মান্ডি হাউসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র দীপেন্দ্র পাঠক অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, পুলিশ সতর্ক রয়েছে। পর্যাপ্ত পুলিশ ও সিনিয়র অফিসারদের মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দেখভাল করবেন তাঁরা, আশ্বাস পুলিশের। মধ্যপ্রদেশে আংশিক কারফিউ লাগু হয়েছে। সেখানে পুলিশকে লক্ষ্য করে চলে ইটবৃষ্টি। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাজস্থানের জয়পুরে বিক্ষোভকারীরা রেল আটকে রাখে। মীরাটে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
কেন এই বিক্ষোভ, বনধ? সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট জানায়, এখন থেকে আর তফশিলি জাতি ও উপজাতি আইনে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেই তৎক্ষণাৎ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। এই রায়ের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় সরকার, দলিতদের বিভিন্ন সংগঠন, কংগ্রেস ও আরজেডি-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। রায়ের বিরোধিতা করে বিভিন্ন সংগঠনের ডাকে আজ দেশ জুড়ে চলছে ভারত বনধ। এই বনধকে কেন্দ্র করেই আগুন জ্বলছে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার-সহ গোটা দেশ জুড়েই। মুজফফরনগরে একের পর এক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। আলওয়ারে স্তব্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। একসঙ্গে অনেকগুলি এসএমএস পাঠানো নিষিদ্ধ হয়েছে বারমেরে। রাজস্থানের করৌলি জেলায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। তবে এদিনের ভারত বনধের জেরে মধ্যপ্রদেশের পর সবচেয়ে বেশি হয়েছে সম্ভবত উত্তরপ্রদেশে। সেখানে ব্যাপক সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর হয়। আজমগড়ে এসএসি-এসটি প্রোটেকশন আইন বিতর্কে সরকারি বসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একই ছবি মুজফফরনগরেও।
বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়েছে গুজরাটেও। কচ্ছের গান্ধীধামে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন দলিত মহিলারা। এদিকে দেশ জুড়ে বিক্ষোভের ফায়দা তুলতে দেরি করেনি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। পালটা আক্রমণে গিয়েছে বিজেপিও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসওয়ান আজ বলেন, ‘বোঝাই যাচ্ছে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। কিন্তু বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছেন কেন? যে আম্বেদকরকে কংগ্রেস কোনওদিন ভারতরত্ন দেয়নি, তাঁরাই এখন দলিতদের জন্য কুম্ভীরাশ্রু ফেলছে।’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং আশ্বাস দিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি সমস্ত রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। মায়াবতী এই আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁরই দলের এক বিধায়কের বিরুদ্ধে হিংসায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
The post ভারত বনধের জেরে জ্বলছে গোটা দেশ, মধ্যপ্রদেশে নিহত ৫ appeared first on Sangbad Pratidin.