বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ফের বাংলাকে অপমান কেন্দ্রের! মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে ‘মহাত্মা’ আখ্যা দিয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর নামেই কেন্দ্রীয় সরকার চালু করেছিল 'মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি' বা মনরেগা প্রকল্প। এর আওতায় দেশের গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানের জন্য ১০০ দিনের কাজ হচ্ছে। সেই 'মহাত্মা গান্ধী' শব্দটি ১০০ দিনের প্রকল্প থেকে মুছে দেওয়ার উদ্যোগ নিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। এই প্রকল্পের নতুন নাম হচ্ছে ‘পূজ্য বাপু গ্রামীণ রোজগার গ্যারান্টি’। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদনও মিলেছে। এবার তা সংসদে পেশ করা হবে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত ঘুরিয়ে বাংলার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অপমান বলেই দাবি তৃণমূলের। যদিও সরকারিভাবে নাম বদলের কথা ঘোষণা করা হয়নি।
সরকারি সূত্রে খবর, গ্রামীণ কর্মসংস্থানে আরও জোর দিতে এবং প্রকল্পটির ভাবনা ও লক্ষ্য স্পষ্ট করতে নাম পরিবর্তনের পথে হাঁটল কেন্দ্র। একইসঙ্গে কর্মদিবস ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ করা হয়েছে। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে বলেই দাবি সরকারের। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রকল্পের গঠন, পরিকাঠামো এবং অর্থ বরাদ্দের পদ্ধতিতে কিছু সংস্কার আনা হবে। মূল লক্ষ্য - গ্রামে স্থায়ী সম্পদ তৈরি করা, স্বনির্ভরতা বাড়ানো এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। নাম বদলের সিদ্ধান্তকে প্রতীকী গুরুত্ব দিচ্ছেন অনেকে। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের বার্তা তুলে ধরতেই এই নামকরণ, বলে মত কর্তাদের। যদিও বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, নাম বদলে কি প্রকল্পের সমস্যা দূর হবে? গ্রামাঞ্চলে টাকার বরাদ্দ ও মজুরি বকেয়া নিয়েই বেশি চিন্তা তাঁদের। তবে কেন্দ্রের দাবি, নতুন নামে, নতুন কাঠামোয় প্রকল্প আরও দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে কাজ করবে। দেশজুড়ে গ্রামীণ কর্মসংস্থানে নতুন দিশা দেবে এই সিদ্ধান্ত।
সূত্রের খবর, যেহেতু এটি আইন, তাই সংসদ চলাকালীন কিছু পরিবর্তন করতে গেলে বিল পেশ করতে হয়। সোমবারই বিলটি পেশ হবে বলে সূত্রের খবর। সেই সঙ্গে ১০০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২৫ দিন করা হতে চলেছে, সেইসঙ্গে মজুরিও বাড়ানো হবে বলে জানা গিয়েছে। যদিও কেন্দ্রের নাম বদলের সিদ্ধান্তে বাংলার অপমানে গর্জে উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “মহাত্মা গান্ধীর বদলে পূজ্য বাপু বলতে চাইছে। বাংলার স্পর্শ ও অবদানকে মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে।” কেন মহাত্মার নাম বদল হবে? কেন 'মহাত্মা' শব্দ সরিয়ে 'পূজ্য বাপু' করার পরিকল্পনা? এই প্রশ্ন তোলেন কুণাল ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, এরা তো বাংলার টাকা দিচ্ছে না। এক পয়সাও দেয়নি। এবার আবার নাম বদল করতে চাইছে! আদালত বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিতে বললেও নানা ছক কষে চলেছে।
প্রসঙ্গত, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের পরও পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। এই প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতির জনককে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে 'মহাত্মা' বলেছিলেন। যা বাংলার শ্রদ্ধা ছিল। আমরা এনিয়ে আপত্তি করছি। ব্যক্তি তো একই, তাহলে নাম কেন বদল করা হল? বিজেপি বাংলার বিষয় মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সরকার কাজ না করে, শুধু নাম বদল করে যায়। মহাত্মা শব্দের তাৎপর্যটা বুঝুন। বাংলার ইতিহাসকে, দিল্লির মসনদে থাকা জমিদাররা নাম বদল করতে চাইছে। যে পদ্ধতিতে মহাত্মা শব্দ বাদ দেওয়া হল, এর তীব্র নিন্দা করছি। মহাত্মা শব্দ রাখতে হবে। এটা আমাদের দাবি।”
