সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: মা দুগ্গাকে বরণ করতে পাঁচটা দিন পাগল পারা হতে বাঙালি অপেক্ষা করে থাকে ৩৬০ দিন। বাংলায় গত বছর পুজো হলেও মন খারাপ ছিল রাজধানীর। করোনাসুরের কোপে নমো নমো করেই হয়েছে বাঙালির সেরা পার্বণ। এবারও সম্ভবত হতে চলেছে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এমনটাই ধরে নিয়েছেন দিল্লির পুজোওয়ালারা। তবু আশায় বাঁচে চাষার মতো তাঁরা তাকিয়ে আছেন শুক্রবারের ডিডিএমএ-র ডাকা বৈঠকের দিকে। যদি মায়ের আশীর্ব্বাদে মিলে যায় দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2021) অনুমতি!
হবে না হবে না করেও গত বছর দুর্গাপুজোর ঠিক দশদিন আগে কেজরিওয়াল সরকার দিয়েছিল শর্তসাপেক্ষে রামলীলা ও দুর্গাপুজোর অনুমতি। এবার এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দেশিকা আসেনি। তবু দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তের পুজো কমিটির সদস্যরা মনে করছেন এবারও শেষ মুহূর্তে আসতে পারে সবুজ সংকেত। তাই নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন তাঁরা। স্থানীয় বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজের সঙ্গে ইস্ট পাকিস্তান ডিসপ্লেসড পার্সন অ্যাসোসিয়েশন (ইপিডিপি)-র বৈঠক হয়েছে। চিত্তরঞ্জন পার্কের বিভিন্ন ক্লাব ও সমিতির সমন্বয় মঞ্চ বলা যায় ইপিডিপি-কে।
[আরও পড়ুন: ২৬/১১- এর ধাঁচেই হামলার ছক, দিল্লি থেকে ধৃত বাংলাভাষী জঙ্গিদের ‘গুরু’ কাসভের প্রশিক্ষকই]
বৈঠকে বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যরা আম আদমি পার্টি (AAP) বিধায়কের কাছে পুজোর অনুমতি চাইতে জোর দরবার করেন। আশ্বাস দেন, যাবতীয় বিধিনিষেধ মেনেই করা হবে পুজো। ঠিক যেমনটা হয়েছিল গত বার। তবে জমায়েতের ক্ষেত্রে ১৫-র বদলে সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০ করার অনুরোধ করা হয়। এদিকে শুক্রবার রামলীলা ও দুর্গাপুজো সংক্রান্ত আলোচনা করতে বৈঠক ডেকেছে দিল্লি ডিজাস্টার্স ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (ডিডিএমএ)। সেখানে ইপিডিপি প্রতিনিধিদলকে নিয়ে যাবেন সৌরভ ভরদ্বাজ। এই বৈঠকের দিকেই এখন তাকিয়ে আছেন সি আর পার্ক-সহ দিল্লির অন্যান্য প্রান্তের পুজো কমিটির সদস্যরা।
পুজো সংগঠন নিয়ে নানা রকমের বক্তব্য উঠে আসছে শহরের নানা প্রান্ত থেকে। সি আর পার্ক কালিবাড়ির নারায়ণ দের বিশ্বাস, “গতবারও মা চেয়েছিল, পুজো হয়েছিল। এবারও আশা করি তার ব্যতিক্রম হবে না। প্রশাসনকে আমরা বোঝাব, করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আমরাও কম চিন্তায় নেই। এমন কিছু করব না, যাতে নিজেরাই সমস্যায় পড়ি। আশা করি অনুমতি মিলবে।” করোল বাগের বিখ্যাত এক পুজো কমিটির প্রধান কর্তা দীপক ভৌমিক বললেন, “আমরা নিজেদের মতো প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। অনুমতি পাওয়ার পর যাতে হা-হুতাশ করতে না হয়। পুজো তো হবেই। খুব বেশি হলে বাড়িতে ঘটে পুজো করব। কিন্তু পুজো বন্ধ হবে না।”
[আরও পড়ুন: টাইম ম্যাগাজিনে বিশ্বের প্রভাবশালীদের তালিকায় প্রথম একশোয় মোদির সঙ্গে মমতাও]
নিউ দিল্লি দুর্গা বাড়ি পুজো কমিটির তরুণ সদস্যা সাহানা মুখোপাধ্যায় বিরক্তির সঙ্গে বললেন, “লাস্ট আওয়ারে পারমিশন দিয়ে প্রশাসন চায় যাতে খুব বেশি জাঁকজমক করা না যায়। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এবারও শেষ মুহূর্তেই আসবে অনুমতি। তাই এখন অপেক্ষা করা ছাড়া তো আর কোনও কাজ নেই।” একটু অন্যরকম বক্তব্য পাওয়া গেল সি আর পার্ক নবপল্লীর প্রবীণ সদস্য উৎপল ঘোষের গলায়। বললেন, “পুজো মানে তো উৎসব। আনন্দ। কিন্তু করোনায় আমরা এত লোককে হারিয়েছি যে, আনন্দ করার ইচ্ছেটাই নেই। আমার ব্যক্তিগত মত, ছোট করে ঘটপুজো করে মাতৃ আরাধনা হোক। উৎসব তোলা থাক।” কী হলে কী হবে, সেই উত্তর সময়ের গর্ভে। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট। শুক্রবারের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রাজধানীর বাঙালিরা।
