নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: 'এক দেশ এক ভোট' নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তুমুল হট্টগোল! বিতর্ক আসর হয়ে উঠল আলোচনা সভা। শুক্রবার দিল্লিতে জেপিসি-র বৈঠকে একের পর এক প্রশ্নে বিরোধীরা একযোগে কার্যত চেপে ধরেন চেয়ারম্যানকে। সমালোচনা ধেয়ে যায় বিজেপির দিকেও। বিরোধী সাংসদ এবং কমিটির সদস্যদের যাবতীয় আপত্তিকর কথাবার্তা খারিজও করে দেন চেয়ারম্যান পিপি চৌধুরী। কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে একসঙ্গে 'এক দেশ এক ভোট' নীতি প্রণয়নের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তাতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।

শুক্রবার দিল্লিতে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে 'এক দেশ এক ভোট' সংক্রান্ত আলোচনায় তৃণমূলের তরফে উপস্থিত ছিলেন লোকসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলে। কংগ্রেসের তরফেও ছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী-সহ অন্যান্যরা ছিলেন। চেয়ারম্যান পিপি চৌধুরী জানতে চান, কারা 'এক দেশ এক ভোট' নীতির পক্ষে এবং কারা বিপক্ষে। তাতেই কল্যাণ, সাকেতরা বলে ওঠেন, পক্ষে-বিপক্ষের প্রশ্নই নেই। কেন এখনই এই নীতি লাগু করার ভাবনা কেন্দ্রের, তা আগে স্পষ্ট হওয়া দরকার। কোবিন্দ কমিটির রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে তাঁদের বক্তব্য, ৮০ শতাংশই এই নীতির পক্ষে বলে যা দেখানো হয়েছে, তা আসলে প্রভাবিত ফলাফল, প্রকৃত নয়। চেয়ারম্যান জানান, 'এক দেশ এক ভোট' নিয়ে জনসচেতনতার কাজ চলছে। সেই কারণে আলোচনার জন্য সব শরিককে ডাকা হয়েছে। তাতেও আপত্তি জানায় তৃণমূল। কল্যাণ, সাকেতরা অভিযোগের সুরে বলেন, যা মনে হচ্ছে, তাতে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত জনতাকে গলাধঃকরণ করানো হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে এই বাদানুবাদ।
ডিএমকে, কংগ্রেসও তৃণমূলকে সমর্থন করে আপত্তির কথা তোলে। চেয়ারম্যান শেষপর্যন্ত জানান, তিনি বিল স্পিকারের কাছে পাঠাবেন। গত ডিসেম্বরে সংসদে শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন এই বিলটি পেশ করা হয় কেন্দ্রের তরফে। তা নিয়ে বিতর্কে সরগরম হয়ে ওঠে লোকসভা অধিবেশন। এর বিরোধিতায় এক সুরে সরব হন বিরোধী INDIA জোটের প্রতিনিধিরা। সকলেরই মূল যুক্তি, 'এক দেশ এক ভোট' নীতি লাগু হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত করা হবে, নষ্ট হবে রাজ্যগুলির গণতান্ত্রিক পরিবেশ। পালটা কেন্দ্রও যুক্তি দেয়, 'এক দেশ এক ভোট' নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সরলীকরণের জন্য আনা হচ্ছে। ভোটের সময়, খরচ উভয়েই তাতে কমবে। সাংবিধানিক পরিকাঠামোয় কোনও আঘাত লাগবে না বলেও সংসদে জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘাওয়াল। এত বিতর্কের পর অবশ্য কেন্দ্র বিলটি পাশ করানোর চেষ্টা করেনি। পাঠানো হয় যৌথ সংসদীয় কমিটিতে। সেখানেই এদিন আলোচনা ছিল। তবে সেই আলোচনার পরিবেশও তপ্ত রইল চেয়ারম্যান ও কমিটির সদস্যদের তীব্র বাদানুবাদে।