সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মৌলবাদের কঠোর সমালোচনা, নিজ ধর্মের অন্ধকার দিকগুলি তুলে ধরে একের পর এক সাহিত্যকর্ম, পর্দাপ্রথার আড়ালে কট্টরপন্থীদের নগ্ন রূপ প্রকাশ্যে এনে ধর্মের গোঁড়ামিতে আঘাত করা - এসব মিলেমিশেই তিনি এক বলিষ্ঠ, দৃঢ় এক চরিত্র। আর তাতেই সাহিত্যের প্রতি একনিষ্ঠ জীবনে এসেছে অবমাননা, লাঞ্ছনা, তৈরি হয়েছে বিতর্কের পাহাড়। বলা হচ্ছে বিশিষ্ট সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিনের কথা। সম্প্রতি বঙ্গ রাজনীতিতে তিনি বেশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন। কলকাতা থেকে একদা 'বিতাড়িত' তসলিমাকে ফের শহরে ফেরানো নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে বিজেপি। সোমবার রাজ্যসভায় তা নিয়ে বক্তব্য পেশ করেছেন বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে পালটা পোস্ট করলেন তসলিমা। তবে কলকাতায় ফেরা নিয়ে যে সংশয়ী তিনি, তাও স্পষ্ট পোস্টে। লিখেছেন, 'জানি না, কলকাতায় শেষ পর্যন্ত আমার ফেরা হবে কি না।'

তসলিমা নাসরিনকে নিরাপত্তা সহকারে কলকাতায় ফেরানোর দাবি তুলে সোমবার রাজ্যসভায় শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ''তসলিমা নাসরিনের কাছে কলকাতা প্রাণের শহর। তিনি কলকাতায় ফিরে আসতে চান, বাংলায় কথা বলতে চান, বাংলায় সাহিত্য সৃষ্টি করতে চান। পশ্চিমবঙ্গ মানে কাজী নজরুলের শ্যামা-মায়ের বর্ণনা, নারী আন্দোলনের পটভূমি। আমি বলতে চাই, ছদ্ম প্রগতিশীলতার আড়ালে মুসলিম মৌলবাদের কাছে চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের দিন শেষ হোক। তসলিমার প্রত্যাবর্তন হোক। বাংলার নারী আন্দোলনের নতুন সূর্যোদয় হোক।''
তাঁর এই বক্তব্যের কিছুক্ষণ পরই রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট করেন তসলিমা। তিনি লেখেন, ''সাংসদ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই) গুরুদাস দাশগুপ্ত ২০০৭ সালে আমাকে নিয়ে প্রথম কথা বলেছিলেন ভারতের সংসদে। আমি তখন সবে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার দ্বারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিতাড়িত। বাংলার টানে, প্রাণের টানে যে শহরে বসবাস শুরু করেছিলাম, সেই শহর থেকে কখনও যে বিতাড়িত হবে হবে, কল্পনাও করিনি। শ্রদ্ধেয় গুরুদাস দাশগুপ্ত এর প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি দাবি জানিয়েছিলেন, আমাকে যেন পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে দেওয়া হয়। তারপর দীর্ঘ বছর কোনও রাজনীতিক আমার কলকাতায় ফেরা নিয়ে কোনও কথা বলেননি। মাঝখানে 'আকাশ ৮' টিভি চ্যানেল থেকে সম্প্রচার হতে যাচ্ছিল 'দুঃসহবাস' নামে আমার লেখা যে মেগা সিরিয়ালটি, তার সম্প্রচার বর্তমান সরকার বন্ধ করে দেয়। আজ, ১৮ বছর পর রাজ্যসভার সাংসদ ভারতীয় জনতা পার্টির শমীক ভট্টাচার্য আমাকে কলকাতায় ফেরানোর দাবি জানালেন সংসদে। জানিনা, কলকাতায় শেষ পর্যন্ত আমার ফেরা হবে কি না, তবে তিনি যে আমার কথা মনে করেছেন, মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর অপরাধে নিজের জন্মভূমি থেকে নির্বাসিত আমি, বাংলায় লেখালেখি চালিয়ে যেতে হলে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি পরিবেশে বাস করা আমার জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ, তা তিনি উপলব্ধি করেছেন বলে তাঁকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।''
ফেসবুক পোস্টে শমীক ভট্টাচার্যকে ধন্যবাদ জানালেন তসলিমা।
শমীক ভট্টাচার্যর এই দাবিকে অবশ্য মোটেই ভালোভাবে দেখেনি তৃণমূল। সংসদ থেকে বেরিয়েই এনিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পালটা আক্রমণ করলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, ''আগে আইনশৃঙ্খলাকে গুরুত্ব দিতে হবে। তারপর অন্য সব। আর যাঁরা বলছেন, তাঁরা কি হিন্দু নাকি? সব ভেকধারী হিন্দু।'' বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর আমলেও তসলিমাকে আশ্রয় না দেওয়ার পিছনে 'আইনশৃঙ্খলা অবনতি'র যুক্তি খাঁড়া করেছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীন বামেরা। আর আজকের শাসকদল তৃণমূলের গলাতেও সেই আইনশৃঙ্খলার সুর শোনা গেল। এসবের মাঝে তসলিমার সংশয়ই বড় হয়ে উঠছে - 'জানি না, কলকাতায় শেষ পর্যন্ত আমার ফেরা হবে কি না।'