হেমন্ত মৈথিল, মহাকুম্ভ নগর: ৭৬তম সাধারণতন্ত্র দিবসে দিল্লির কর্তব্যপথে ছিল জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন। রাজপথে এই প্রথমবার যৌথভাবে কুচকাওয়াজে শক্তি প্রদর্শন করে দেশের তিন সেনাবাহিনী। এর আগে আলাদাভাবেই সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে যোগ দিত স্থল, নৌ ও বায়ুসেনা। এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে ছিল বিভিন্ন রাজ্যের ট্যাবলো। আর এখানেই আলাদাভাবে নজর কাড়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ। তাদের ট্যাবলো সেজে উঠেছিল সমুদ্র মন্থনের কাহিনিতে। ভারতবাসীর পাশাপাশি যা দেখে মুগ্ধ বিশ্ব।
উত্তরপ্রদেশের ট্যাবলোর থিম ছিল 'গোল্ডেন ইন্ডিয়া: হেরিটেজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।' সেখানেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল সমুদ্র মন্থন। পুরাণ মতে, সমুদ্র মন্থনে উঠে আসা অমৃত নিয়েই দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধ বাধে। এই অমৃতের পাত্রটিই আসলে কুম্ভ। বলা হয়, ওই পাত্র নিয়ে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সময় কয়েক ফোঁটা অমৃত পড়ে যায়। মনে করা হয়, চার ফোঁটা অমৃত পড়েছিল প্রয়াগরাজ, উজ্জয়িনী, হরিদ্বার ও নাসিকে। তারপর থেকে দেশের এই চার জায়গাতেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কুম্ভমেলার আয়োজন হয়। এদিন কর্তব্যপথে যখন ট্যাবলোটি এগোচ্ছিল সামনে ছিলেন সাধুরা। তাঁদের শঙ্খের আওয়াজেই গমগম করছিল চারপাশ। সব মিলিয়ে যোগী রাজ্যের এই আয়োজন প্রশংসা কুড়িয়েছে দর্শকদের।
এবছর প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মহাকুম্ভ। ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মহাকুম্ভের আয়োজনে কোনও ত্রুটি রাখেননি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা মেলা প্রাঙ্গন। সাধু-সন্ত, পুণ্যার্থীদের সুরক্ষায় ব্যস্ত কুম্ভের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকরা। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী যোগীর অনুপ্রেরণায় তাঁদের এই কাজ প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্বে। কুর্নিশ জানাচ্ছে নেটদুনিয়াও। ১৪৪ বছরের পুণ্যতিথিতে ত্রিবেণী সঙ্গমে ডুব দিয়ে মোক্ষলাভের জন্য নানা জায়গা থেকে ছুটে আসছেন সাধু-সন্ত, পুণ্যার্থীরা। এই আধ্যাত্মিকতা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনই দেখা গেল গতকালের সাধারণতন্ত্র দিবসে।
এখন দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তেই চর্চার শীর্ষে এবছরের মহাকুম্ভ। মহাকাশ থেকেও স্পষ্ট এই ধর্মীয় উৎসবের মাহাত্ম্য। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর প্রকাশিত উপগ্রহ চিত্রে তারই প্রমাণ মিলেছে। প্রয়াগরাজে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে পুণ্যার্থীর জন্য গড়ে তোলা হয়েছে এক অস্থায়ী নগরী। ১৫ বর্গমাইল এলাকায় গড়ে তোলা সেই অস্থায়ী নগরীর আয়তন নিউইয়র্ক নগরের ম্যানহাটান বরো এলাকার দুই–তৃতীয়াংশ। মেলায় সাধুদের জন্য তৈরি হয়েছে ১০ হাজার আখড়া। রয়েছে ১ লক্ষের উপর তাঁবু ও ৫০ হাজার দোকান। যেখানে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। জানা গিয়েছে ইসরোর প্রকাশিত উপগ্রহ ছবিতে এই ভিড় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। জ্বলজ্বল করছে পূজা-অর্চনার যজ্ঞ।
