বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: বাংলার মহম্মদ সেলিম নাকি কেরলের এমএ বেবি? নাকি তৃতীয় কেউ? সীতারাম ইয়েচুরির উত্তরসূরিকে নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা সারতে শনিবার থেকে দিল্লিতে বৈঠকে বসল সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি। সীতারাম ইয়েচুরির আকস্মিক প্রয়াণের পর অস্থায়ীভাবে পার্টির কাজ চালাচ্ছেন সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে স্থায়ী সাধারণ সম্পা

দকের নাম ঘোষণা করা হবে। তবে বাংলা ছেড়ে দিল্লিতে থেকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সামলাতে রাজি নন সেলিম, এমনই সূত্রের খবর। এছাড়াও আগামী দিনে রাজনৈতিক রণকৌশলের লাইন অর্থাৎ কোন পথে পার্টি হাঁটবে, সেই রাস্তা খুঁজতে বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে আচমকাই মারা যান ইয়েচুরি। সেই সময় পার্টির শীর্ষপদে ছিলেন তিনি। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকাকালীন কারও মৃত্যু পার্টির ইতিহাসে এই প্রথম। সাধারণত পার্টি কংগ্রেসে সাধারণ সম্পাদক বাছাই করে সিপিএম। কিন্তু মাঝপথে ইয়েচুরির মৃত্যুতে বিপাকে পড়েন কমরেডকুলের নেতারা। এই পরিস্থিতিতে পার্টির দৈনন্দিন কাজকর্ম দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটকে। অস্থায়ীভাবে কো অর্ডিনেটর করা হয় তাঁকে। এপ্রিলের ২ থেকে ৬ তামিলনাড়ুর মাদুরাইতে হবে পার্টি কংগ্রেস। সেখানে স্থায়ী সাধারণ সম্পাকের নাম ঘোষণা করা হবে। কিন্তু কে হবেন ইয়েচুরির উত্তরসূরি, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে পার্টির অন্দরে। কারণ বয়সের গেরোয় আটকে গিয়েছেন প্রকাশজায়া বৃন্দা কারাট ও ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। রয়েছেন সবেধন নীলমনি কেরলের প্রাক্তন মন্ত্রী-সাংসদ এমএ বেবি ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
কেরলের প্রাক্তন মন্ত্রী এম এ বেবি।
কিন্তু এক্ষেত্রেও সমস্যায় কমরেডকুল। কারণ, বেবি পার্টির অভ্যন্তরে চেনা মুখ হলেও সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, ইন্ডিয়া জোটে ইয়েচুরি যে ভূমিকা পালন করতেন, বেবির পক্ষে তা সম্ভব নয় বলে একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন কেরলের নেতারাই। এছাড়া বেবির ভাষা সমস্যা রয়েছে। বাকি শুধুমাত্র বাংলার মহম্মদ সেলিম। তিনি জাতীয় স্তরেও পরিচিত মুখ। সাংসদ থাকায় কংগ্রেস-সহ ইন্ডিয়া জোটের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তিনি পরিচিত মুখ। সংসদ সদস্য থাকাকালীন বাম ছাড়াও অন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলতেন। এছাড়াও বেশ কয়েকটি ভাষা অনর্গল বলতে পারেন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে সমস্যায় পড়েছে সিপিএম পলিটব্যুরো। কারণ সেলিম নিজেই বঙ্গের দায়িত্বে ছেড়ে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসতে রাজি নন। এই চেয়ারে বসলে প্রথমেই রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব ছাড়তে হবে। আর পার্টি চালাতে অধিকাংশ সময় দিল্লিতে থাকতে হবে। অন্যান্য রাজ্যেও যেতে হবে।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
আবার কেরলে পার্টি ক্ষমতায় রয়েছে। আর বাংলায় সিপিএম কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে। এমন একটি রাজ্য থেকে সিপিএমের শীর্ষপদে বসালে কেরল-সহ দক্ষিণ ভারতের নেতারা মেনে নেবেন কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান প্রকাশ, বৃন্দা বা মানিকরা। এছাড়াও সেলিমের পার্টি পরিচালনার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সিপিএমের অন্দরে। কারণ সম্মেলনেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, জনসমর্থন তলানিতে ঠেকলেও গোষ্ঠীকোন্দল ঠেকাতে ব্যর্থ তিনি। জেলায় জেলায় কমিটি গঠন করতে হিমশিম অবস্থা হয় সেলিমের। যিনি রাজ্যস্তরে পার্টি সামলাতে পারেন না তিনি সর্বভারতীয় স্তরে সমন্বয় রেখে কীভাবে পার্টি পরিচালনা করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।