সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দিল্লি হাই কোর্টের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে এবার সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন উন্নাও নির্যাতিতার মা। কুলদীপ সিং সেঙ্গারের জামিনের প্রতিবাদে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানালেন, অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করেছে আমার মেয়ে। তারপর হাই কোর্টের এই নির্দেশ আমাদের ভরসা, বিশ্বাস তছনছ করে দিয়েছে।"
শুক্রবার উন্নাও ধর্ষণ মামলায় কুলদীপের জামিনের প্রতিবাদে দিল্লি হাই কোর্টের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন নির্যাতিতার মা ও অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক ওমেনস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নির্যাতিতার মা বলেন, "অপরাধী কুলদীপ সেঙ্গারের আজীবন কারাবাসের সাজা মুকুবের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাব আমি। কারণ আমার মেয়েকে অসহনীয় অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে।" আদালতের বাইরে বিক্ষোভ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "আমি পুরো হাই কোর্টকে দোষ দিচ্ছি না। দোষী ওই দু'জন বিচারপতি যারা আমাদের বিশ্বাস, ভরসা ভেঙে খান খান করে দিয়েছে। যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা আমাদের পরিবারের সঙ্গে ঘোর অন্যায়। সুপ্রিম কোর্টের উপর আমার ভরসা আছে। ফলে ওই রায়ের বিরুদ্ধে সেখানে আপিল করব আমরা।"
মঙ্গলবার কুলদীপকে জামিন দেওয়ার পাশাপাশি তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশও স্থগিত করেছে দিল্লি হাই কোর্ট। ব্যক্তিগত ১৫ লক্ষ টাকা বন্ডের বিনিময়ে বিচারপতি সুব্রমনিয়াম প্রসাদ ও হরিশ বৈদ্যনাথন শঙ্করের বেঞ্চ তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে। তবে জামিন পেলেও এখনই জেলমুক্তি হচ্ছে না তার। কুলদীপের জামিন মঞ্জুর করে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, অভিযুক্ত দিল্লি ছেড়ে বাইরে যেতে পারবে না। নির্যাতিতার বাড়ির পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যেও প্রবেশ করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, অভিযুক্ত নির্যাতিতা বা তাঁর পরিবারকে কোনও রকম হুমকি দিতে পারবে না বলেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হাই কোর্টের নির্দেশ, বিচারাধীন আদালতে কুলদীপের পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে প্রত্যেক সোমবার তাঁকে হাজিরা দিতে হবে। কোনও শর্তের লঙ্ঘন হলে প্রাক্তন বিজেপি বিধায়কের জামিন বাতিল করা হবে বলেও জানিয়েছে আদালত।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৪ জুনে গণ-ধর্ষিতা হন উন্নাওয়ের কিশোরী। মূল অভিযুক্ত ছিলেন তৎকালীন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গার। পরিবার পুলিশে অভিযোগ জানাতে গেলেও পুলিশ অভিযোগ নিতে চায়নি বলে অভিযোগ ছিল। পরে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে চিঠি লেখেন নির্যাতিতা। ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল যোগী আদিত্যনাথের বাসভবনের সামনে ধর্নায় বসেন নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবার। সেখানেই গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন নির্যাতিতা। এই ঘটনার পর উলটে নির্যাতিতার বাবাকেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয় নির্যাতিতার বাবার। একই বছর ডিসেম্বর মাসে দোষী সাব্যস্ত হয় কুলদীপ। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ এবং পকসো আইনে দোষী সাব্যস্ত করা হয় কুলদীপকে। বহিষ্কৃত বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত।
