বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, অযোধ্যা: রাষ্ট্রযন্ত্র। সে তো শোষণযন্ত্র। শোষণহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা। সে তো সোনার পাথরবাটি। রাষ্ট্র তার ক্ষমতা প্রয়োগ করবে আর শোষণ থাকবে না? তা হবে না, তা হবে না। রাম জন্মভূমিতে মোদি-যোগীর আস্ফালনে নাস্তানাবুদ প্রাচীন এই জনপদের আদি বাসিন্দারা। প্রাচীন এই জনপদকে গুঁড়িয়ে আধুনিক শহরে রূপান্তরিত করতে গিয়ে সিঙ্গুরে (Singur) গাড়ি কারখানার জন্য বাম সরকারের জমি অধিগ্রহণের পথে যোগী সরকার (Yogi Adityanath)।
প্রতিদিন চোখের সামনে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে শ’য়ে শ’য়ে বাড়ি, দোকান, বাজার, গ্যারেজ। আর ক্ষতিপূরণের কথা বললেই দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে ব্রিটিশ রাজের সময়কার জমি অধিগ্রহণ আইন। ফলে ক্ষতিপূরণ মিলছে ছিটেফোঁটা। তাই ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা বা দাবি ছেড়েছেন সিংহভাগ বাসিন্দা। মনের অন্দরে ক্ষাভ পুঞ্জীভূত হলেও মুখ খুলছেন না। পাছে রাষ্ট্রযন্ত্র আরও সক্রিয় হয়! ভিটেমাটি ছাড়তে হয়। বেচে যাওয়া অংশ আঁকড়ে দিনযাপন করছে কয়েকশো পরিবার।
এর মধ্যেই চলছে বৈদিক রীতি অনুযায়ী আচারবিধি। আবার সূত্রের খবর, কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশার কারণে প্রধানমন্ত্রীর অযোধ্যার (Ayodhya) সফরসূচিতে পরিবর্তন আনা হতে পারে। নিরাপত্তার কারণে একদিন আগেই অর্থাৎ রবিবার রাম জন্মভূমিতে পা রাখতে পারেন নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। গোটা রাম জন্মভূমি আজ যেন ধ্বংসস্তুপ। উন্নয়নের কোপে ভাঙা পড়ছে একের পর এক বাড়ি, দোকান, বাজার। রাস্তা সম্প্রসারণের নামে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কাঠামো। উপড়ে ফেলা হচ্ছে বাতিস্তম্ভ। জল নিকাশির জন্য শহর জুড়ে চলছে খননকাজ। বাদ যায়নি ধর্মীয়স্থান। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসছে গো মাতার মূর্তি।
[আরও পড়ুন: মন্দিরের উদ্বোধনের আগে রামের নামে স্ট্যাম্প প্রকাশ, রামভক্তদের শুভেচ্ছা মোদির]
লক্ষ্য অযোধ্যাকে আধুনিকতম শহরের রূপ দেওয়া। আর তা করতে গিয়ে বাম সরকারের জমি অধিগ্রহণ (Land acquisition) নীতি নিয়েছে যোগী আদিত্যনাথ সরকার। শতাধিক বছর পুরনো ১৮৯৮ সালের আইনে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হালকারা পুরওয়া এলাকার এক রেস্তঁরা মালিক জানান, তাঁর ব্যবসার আয়ু আর একমাস। প্রশাসন নোটিস দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে আগামী মাসে বুলডোজার চালান হবে তাঁর রেস্তঁরায়। যে জমির বর্তমান বাজারদর এখন দু’কোটি টাকা। অথচ সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। ক্ষোভে ক্ষতিপূরণ নেবেন না বলে প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন।
অথচ প্রতিবাদ করার উপায় নেই বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা। একদিকে রামের আবেগ, অন্যদিকে রাষ্ট্রের রক্তচক্ষু। দুইয়ের মোকাবিলা করার ক্ষমতা তাঁদের নেই। অগত্যা মুখ বুজে শোষণের কাছে মাথা নত করেছেন। আবার পরিক্রমা মার্গে গাড়ি সারাইয়ের কারখানা নিত্যানন্দ যাদবের বাপ-ঠাকুরদার পারিবারিক ব্যবসা। তিনি জানান, এক বিঘে জমির উপর তাঁদের গ্যারেজ। তার অধিকাংশ ভাঙা পরেছে। এখন এক চিলতে জমির উপর ব্যবসা চালাচ্ছেন। ক্ষতিপূরণ এখনও পাননি। প্রশাসন জানিয়েছে, ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার চেক পাবেন তিনি। অথচ বাজারমূল্য কোটি টাকার কাছাকাছি। ভবিষ্যৎ কী জানা নেই।