সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার মাত্র এক বছরে মধ্যে পাঁচ বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণের পর খুনের ঘটনায় সাজা ঘোষণা। এই ঘটনায় যুক্ত দুই যুবককে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিল আদালত। বুধবার ঝাড়গ্রামের অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক ও সেশন জাজ এবং জাজ স্পেশ্যাল কোর্ট পকসো চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় সাজা ঘোষণা করেন। নয়াগ্রাম থানা এলাকার বাসিন্দা ফাগুন মাণ্ডি ওরফে পুঁই এবং ভাকু ওরফে রবীন্দ্র রাউতকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। নির্যাতিতার পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ আদালতের।
ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর। ওইদিন সকাল দশটা থেকে পাঁচ বছরের শিশুকন্যা নিখোঁজ হয়ে যায়। পরিবারের লোকজন গ্রাম-সহ আত্মীয় পরিজনের বাড়িতে তার খোঁজ শুরু করে। এরপর ৫ নভেম্বর পরিবারের পক্ষ থেকে নয়াগ্রাম থানায় গ্রামেরই যুবক বছর পঁচিশের ফাগুন মাণ্ডির বিরুদ্ধে শিশুকন্যাকে অপহরণ করার অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পরেই দ্রুত তদন্ত পক্রিয়া শুরু করে। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে ঘটনার দিন অভিযুক্ত ফাগুন মাণ্ডি ওই শিশুকন্যাকে নিয়ে গ্রামের একটি মুদি দোকানে যায়। সেখান থেকে চকলেট এবং বিড়ি কেনে। তারপর সেখান থেকে আরও একজনের বাড়িতে গিয়ে তামাক খায়। এছাড়াও পুলিশ গ্রামের আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে। জানতে পারে ফাগুন ওই শিশুকে নিয়ে গ্রামের জমির দিকে গিয়েছিল।
[আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে বাকি বাহিনী কি পাঠাবে কেন্দ্র? মুখ খুললেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার]
পুলিশ এই তথ্য সংগ্রহ করার পরেই ৭ নভেম্বর ফাগুনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে সে ধর্ষণ এবং খুনের কথা স্বীকার করে। জানায় তার সাথে ওই ঘটনায় ছিল আরও একজন। তার নাম রবীন্দ্র রাউত। পুলিশ রবীন্দ্রকে ওইদিন গ্রেপ্তার করে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় ঘটনার দিন রবীন্দ্র আগের থেকে গ্রামের জঙ্গল লাগোয়া জমিতে অপেক্ষা করছিল। ফাগুন মেয়েটিকে চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসে সেখানে। এরপর দু’জনে মিলে তাকে ধর্ষণ করে। শুধু তাই নয়, শ্বাসরোধ করে খুন করে মৃতদেহ জমির পাশে আলে লুকিয়ে রাখে। পুলিশ ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে উদ্ধার করে দেহ।
ম্যাজিস্ট্রেট পার্যায়ে ময়নাতদন্ত করা হয়। সেবছর ৩০ ডিসেম্বর পকসো আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ আদালতে চার্জগঠন হয়। ওই বছর ৬ জুন থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। চিকিৎসক, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট-সহ মোট ৩০ জন সাক্ষ্য দেন। মঙ্গলবার ওই যুবককে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। বুধবার ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেন বিচারক। স্পেশ্যাল পাবলিক প্রসিকিউটর পকসো কোর্ট শুভাশিস দ্বিবেদি জানান, “নাবালিকাকে অপহরণ করে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন পকসো আদালতের বিচারক।