নিরুফা খাতুন: হরিদেবপুর দুর্ঘটনার পর নড়েচড়ে বসল কলকাতা পুরসভা (KMC)। শহরে যত বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে সব পরীক্ষা করবে পুরসভা। পাশাপাশি কিভাবে খুঁটিটি তড়িৎবাহী হয়েছিল তার কারণ জানতে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের ডিরেক্টর অফ ইলেকট্রিসিটি এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের অধ্যাপককে নিয়ে থার্ড পার্টি তদন্ত শুরু করেছে পুর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বস্তিতেও বাড়তি সচেতনতা নিচ্ছে। কোন কোন বস্তিতে তার বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে, তা জানতে সিইএসসি (CESC) ও পুরসভা যৌথভাবে পরিদর্শন করবে।
বিষয়টি নিয়ে সোমবার পুরসভায় জরুরি বৈঠকে বসেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। হাজির ছিলেন পুর কমিশনার বিনোদ কুমার ও নিকাশি দপ্তরের আধিকারিকরা। মেয়র মৃতের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। এদিন মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিং জানান, পুরসভা ও সিইএসসির (CESC) যত বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে সব খুঁটি পরীক্ষা করা হবে। তড়িৎবাহী হয়ে আছে কি না, জানতে টেস্টার দিয়ে প্রতিটি খুঁটি পরীক্ষা করবে। এছাড়া রাস্তায় সিইএসসির বিদ্যুতের যত সামগ্রী রয়েছে সব খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। ত্রিফলার বাতিগুলিও পরীক্ষা করা হবে। বাতিস্তম্ভের গায়ে এলইডি লাইট লাগানো আছে, সেগুলি খুলে ফেলা হবে। এদিন বৈঠকের পরই রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে পুরসভা ও সিইএসসি ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। আজ মঙ্গলবারও তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন। দু’দিনের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র।
[আরও পড়ুন: সংখ্যাতত্ত্ব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই মা সারদা, দাবি নির্মল মাজির]
এখনও কারও বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর (FIR) দায়ের করেনি পুরসভা। তবে সন্দেহের তির স্থানীয় এক প্রমোটারের দিকে। এদিন ঘটনাস্থলে দেখা যায় যে খুঁটিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিল, তার একদম পাশে এক প্রমোটার নির্মাণকাজ করছে। পুরসভা মনে করছে, অভিশপ্ত ওই খুঁটির নিচে মাটির খুঁড়ে বেআইনিভাবে প্রমোটার বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে নির্মাণকাজ করছিলেন। বৃষ্টিতে জল জমে ওই খুঁটি তড়িৎবাহী হয়ে যায়। একই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। স্থানীয়রা জানান, যেখানে নির্মাণকাজ হচ্ছে তার পাশে প্রমোটারের মিটারবক্স যে সেটি সিইএসসি কেটে দিতে মাটির নিচ থেকে বিদ্যুৎ চুরি করছিলেন। তারক সিং বলেন, তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই পুরসভা থানায় অভিযোগ দায়ের করবে। হরিদেবপুর এলাকায় জল জমা নিয়ে বৈঠকে কেইআইআইপিকে রীতিমত ভর্ৎসনা করেন মেয়র। এখন থেকে কেইআইআইপির প্রতিটি কাজে পরিদর্শন করবে পুরসভা। এদিন বরোগুলিকেও সতর্ক করা হয়েছে। উদ্যানগুলিতে বিদ্যুতের খুঁটিগুলি পরীক্ষা করতে বাড়তি লোক দিচ্ছে পুরসভা।
বিএসএনএলের অচল খুঁটিগুলি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে মেয়র পারিষদ(আলো) সন্দীপরঞ্জন বক্সী জানিয়েছেন। শহরে এক হাজারের বেশি বিএসএনএলের খুঁটি রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ আর ব্যবহার হয় না। এদিন বিএসএনএল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পুরসভাই বেআইনিভাবে টেলিফোনের একাধিক খঁটি দখল করে লাইট লাগিয়ে রেখেছে। যে খুঁটিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে সেখানে পুরসভাই লাইট লাগিয়েছে। তবে এও জানিয়েছে, চিঠি পেলে অচল খুঁটিগুলি সরিয়ে ফেলা হবে।
[আরও পড়ুন: সাময়িক স্বস্তি, দেশে করোনা সংক্রমণ কমল অনেকটা, অ্যাকটিভ কেসের বাড়বাড়ন্ত অব্যাহতই]
দুর্ঘটনা ঠেকাতে পুলিশও আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বেহালা অঞ্চলের চারটি ট্রাফিক গার্ডের পুলিশ আধিকারিকরা নিজেদের এলাকা ঘুরে সমীক্ষা চালিয়েছিল। ট্রাফিক গার্ডের রিপোর্ট নিয়ে সম্প্রতি লালবাজারের কর্তারা বেহালা অঞ্চলের রায় বাহাদুর রোড, রামমোহন সরণি, এম জি রোড, জেমস লং সরণি সংলগ্ন একাধিক রাস্তায় ২৫টি ‘বিপজ্জনক’ ল্যাম্পপোস্ট বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবার এই ‘বিপজ্জনক’ ল্যাম্পপোস্টগুলি সরনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার। এ ব্যপারে সিইএসসির সঙ্গে কথা বলছে কলকাতা পুলিশ।