অর্ণব আইচ: জাহাজের খোলে লুকিয়ে চোরাপথে আফ্রিকানদের প্রবেশ। কেউ বা জড়িয়ে পড়ছে বিদেশি মাদক কারবারে। কেউ বা ফাঁদছে জালিয়াতির কারবারও। এক বছরে মুম্বইয়ে বেশ কয়েকজন আফ্রিকান অপরাধী গ্রেপ্তার হওয়ার পর এবার সতর্ক কলকাতা পুলিশও। কলকাতায় নাইজেরীয়দের সঙ্গে মিশে থেকে আফ্রিকার অন্য কোনও দেশ থেকে অনুপ্রবেশ করে আসা কোনও অপরাধী অপরাধ করছে কি না, খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে লালবাজার।
পুলিশ জানিয়েছে, নাইজেরীয়দের জালিয়াতি ও কোকেনের মতো বিদেশি মাদকের ঘটনা আগেই সামনে এসেছে। কিছুদিন আগেও বিধাননগর পুলিশের হাতে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে নাইজেরীয়। মুম্বইয়ে গত মাসেও গ্রেপ্তার হয় এক আফ্রিকার বাসিন্দা। উদ্ধার হয় একশো গ্রাম মেথাকুয়োলোন নামে বিদেশি মাদক, যার দাম দশ লক্ষ টাকা। ওই যুবকের বাড়ি পশ্চিম আফ্রিকার গিনি-বিসাউয়ে। তারও কয়েক মাস আগে দক্ষিণ আফ্রিকার তিন যুবককে দশ কোটি টাকা দামের দু’কিলো বিদেশি মাদক কোকেন-সহ গ্রেপ্তার করা হয়। গত এক বছরে একাধিক আফ্রিকান মাদক-সহ গ্রেপ্তার হয় মুম্বইয়ে। নাইজেরীয়দের আদলে চাকরি দেওয়ার নামে বা সাইবার জালিয়াতিতে আফ্রিকার অন্য দেশের অনুপ্রবেশকারীরা হাত পাকিয়েছে, সেই প্রমাণও মিলেছে।
[আরও পড়ুন: সাঁইথিয়া-মল্লারপুর থেকে উদ্ধার প্রচুর বোমা, পঞ্চায়েত ভোটের আগে লাগাতার বিস্ফোরক উদ্ধার বীরভূমে]
মুম্বই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ধৃত আফ্রিকান ও তাদের অপরাধের ‘মোডাস অপারেন্ডি’বা পদ্ধতির ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্যও সংগ্রহ করে লালবাজার। মুম্বইয়ে ধৃত আফ্রিকানদের কারও কাছেই পাসপোর্ট, ভিসার মতো কোনও বৈধ নথিপত্র নেই। তাদের কেউ কেনিয়া, কেউ বা উগান্ডার বাসিন্দা। গোয়েন্দারা জেনেছেন, ওই আফ্রিকার অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই জাহাজের খোলের ভিতর লুকিয়ে থেকে মুম্বই বন্দরে এসে পৌঁছয়। সেখান থেকে নেমে তারা চোরাপথে মুদ্রা পরিবর্তন করে। এরপর ঘর ভাড়া নিয়ে থেকে যায় তারা। আবার কয়েকজন সঙ্গে করে বিদেশি মাদক নিয়ে এসে সেগুলি বিক্রি করেও নিজেদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। গোয়েন্দারা জানান, দক্ষিণ কলকাতার গল্ফগ্রিন, যাদবপুর, নেতাজিনগর, পাটুলি-সহ কয়েকটি জায়গায় বহু নাইজেরীয় ঘর ভাড়া নিয়ে বাস করেন। অনেক সময়ই দেখা যায়, নথিপত্রের বৈধতা পেরিয়ে যাওয়ার পরও কলকাতায় রয়েছেন তাঁরা। ওই জায়গাগুলিতে বসে জালিয়াতি বা মাদক পাচার করার জন্য চোরাপথে আসা আফ্রিকানরা আশ্রয় নিয়েছে কি না, সেদিকে এবার রয়েছে গোয়েন্দা নজর। থানাগুলির সহায়তায় বাড়িওয়ালাদের সতর্ক করা হচ্ছে, তাঁরা যেন পরিচয়পত্র যথাসম্ভব যাচাই করে ঘর বা ফ্ল্যাট ভাড়া দেন। সেই বিদেশি ভাড়াটেদের তথ্য যাতে সংশ্লিষ্ট থানাগুলিকে অবশ্যই জানানো হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।