তরুণকান্তি দাস ও ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: ভারত-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্ক টালমাটাল হয়েছিল যে ওষুধ নিয়ে তার ভাণ্ডার গড়ে তুলতে অতিসক্রিয় হল রাজ্য। করোনা-দৈত্যকে কিছুটা হলেও বোতলবন্দি করার জন্য আপাত মহার্ঘ হয়ে উঠেছে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন (Hydroxychloroquine)। যা গুজরাটের একটি সংস্থার থেকে যাচ্ছে মার্কিন মুলুকে। তার ভাণ্ডার বাড়াতে এবার অতিসক্রিয় হল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সরকার আগেই অবশ্য করোনার লড়াইয়ে যাঁরা সামনের সারিতে রয়েছেন, তাঁদের জন্য যথেষ্ট মজুত করেছে ওই ওষুধ। তারপরও ১৫ লক্ষ ট্যাবলেটের বরাত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানেই থেমে না থেকে কাঁচামালের জন্য উত্তরবঙ্গের ইউনিটকে চালু করানো এবং বেঙ্গল কেমিক্যালকে তা তৈরির ছাড়পত্র দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে কাঁচামাল ও আনুষঙ্গিকের অভাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় ফার্মাসিউটিক্যাল মন্ত্রককে জানানো হয়েছে। জানানো হয়েছে রাজ্য সরকারকেও।

বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে বিষয়টি দেখতে বলেন। নবান্নে এদিনের বৈঠকে বিষয়টি উঠলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বেঙ্গল কেমিক্যালসকে দ্রুত এই কাজটা করতে বলুন।”পরিকাঠামো থাকলেও বাঙালির গর্বের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির এই ওষুধ তৈরির ছাড়পত্র ছিল না। সেই প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে যায় এদিন। ওই সংস্থার তরফে রাজ্যের কাছে আবেদন পাঠানো হয়। রাজ্য সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, তিন-চার দিনের মধ্যেই ছাড়পত্র দেওয়া হতে পারে। এদিন বৈঠকে মুখ্যসচিব জানান, উত্তরবঙ্গের একটি বণিকসভার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সেখানে এই ওষুধ তৈরির কাঁচামাল পাওয়া যাবে। তা তৈরির কয়েকটি ছোট কারখানা ছিল। সেগুলির কিছু যন্ত্রপাতির সমস্যা রয়েছে বলে খবর। তাই ওই কারখানাগুলিকে রাজ্য সরকার সাহায্য করবে যাতে তারা দ্রুত কাজ শুরু করতে পারে। কালিম্পঙের মংপুতে সিঙ্কোনা চাষের যে প্রকল্প রয়েছে সেটিই হবে এর কাঁচামালের প্রধান জোগানদার। ওই বণিকসভার সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের কারখানাগুলিতে কী ধরনের যন্ত্রপাতির প্রয়োজন তার একটি তালিকাও তৈরি হচ্ছে। তা পাঠানো হবে মুখ্যসচিবকে।
[আরও পড়ুন: এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৫ জনের মৃত্যু, কারণ নিয়ে ধন্দ]
সূত্রের খবর, ড্রাগ কন্ট্রোলের তরফে আপাতত যত দ্রুত সম্ভব দু’কোটি হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন (Hydroxychloroquine) ট্যাবলেট উৎপাদন করতে বলা হবে বেঙ্গল কেমিক্যালকে। প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহে বেঙ্গল কেমিক্যালকে সহযোগিতা করবে রাজ্য সরকার, এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিন বেঙ্গল কেমিক্যালের সঙ্গে কথা হয় রাজ্যের প্রশাসনিক ও ড্রাগ কন্ট্রোল কর্তাদের। ড্রাগ কন্ট্রোলের তরফে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় লাইসেন্স দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে খবর। সোমবারের মধ্যেই সবুজ সংকেত মিলতে পারে। বেঙ্গল কেমিক্যালসের যে এই ওষুধ তৈরির ছাড়পত্র নেই, সেই খবর প্রকাশিত হয় সংবাদ প্রতিদিনে। তারপরই তৎপরতা শুরু হয়। দেশের চিকিৎসা সংক্রান্ত সর্বোচ্চ গবেষণা সংস্থা আইসিএমআর সম্প্রতি করোনা প্রতিরোধে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। করোনা চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার এই ওষুধ প্রয়োগ শুরু হয়েছে। যদিও কোনওরকম ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনও হয়নি। কিন্তু অসহায় চিকিৎসকরা এই ওষুধকেই ব্রহ্মাস্ত্র হিসাবে প্রয়োগ করছেন।
জয়পুরের একটি হাসপাতালে ভরতি এক করোনা আক্রান্ত ইটালীয় পর্যটকের উপর সম্প্রতি এইডস, সোয়াইন ফ্লু, ম্যালেরিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। চিকিৎসকদের দাবি ছিল, এই ককটেল ওষুধ করোনামুক্ত করেছে পর্যটককে। তারপর থেকেই বিভিন্ন আইসোলেশন সেন্টারে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও একাধিক অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হচ্ছিল। বেঙ্গল কেমিক্যালের মার্কেটিং বিভাগের প্রধান বিপ্লব দাশগুপ্ত বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন তৈরি করার লাইসেন্সের অনুমতি চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি। আশা করা হচ্ছে, সোমবারের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে লাইসেন্স পেয়ে যাব। ২০০ এমজি তৈরি করব। তবে দামটা কী হবে সেটা জানার জন্য কেন্দ্র সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কাছে জানতে চাওয়া হবে।”
[আরও পড়ুন: জরুরি পরিষেবা দিতে মহানগরে চাকা ঘুরবে গাড়ির, খুশি ট্যাক্সিচালকরা]
The post করোনা রোধে বাংলাতেই এবার তৈরি হবে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন! দায়িত্বে বেঙ্গল কেমিক্যালস appeared first on Sangbad Pratidin.