গোবিন্দ রায়: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তির ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনে শামিল হয়ে পুলিশি হেনস্তার শিকার হন বলেই দাবি ডিএসও নেত্রী সুশ্রীতা সোরেন। এই অভিযোগে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। ওই মামলাতেই ডিএসও নেত্রীর আটক থেকে মুক্তি পর্যন্ত প্রতি মুহূর্তের তথ্য পুলিশের কাছ থেকে তলব করলেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। আগামী সোমবার মামলার পরবর্তী শুনানির সম্ভাবনা।

মেদিনীপুর মহিলা থানার ওসি অত্যাচার করেছেন বলেই অভিযোগ DSO নেত্রী সুশ্রীতা সোরেনের। গত ৫ মার্চ তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “থানায় নিয়ে গিয়ে ওসি কোমরের বেল্ট খুলে মারে। এলোপাথাড়ি কিল-চড়-ঘুসি মারে। তিনজনকে অন্য রুমে নিয়ে যায়। আমাকে একটা রুমে একা রাখে। আমাকে বলা হয়, এই মেঝেতে পা মেলে বসো। সেভাবেই বসি। বলা হয় চুলের ক্লিপ খুলে দাও। ক্লিপ খুলে চুল ছাড়ি। ওসি বাকি পুলিশদের বললেন পায়ের উপর দাঁড়াও। বেত দিয়ে আঘাত করার সময় যাতে সরে না যায়। ওসি লাঠি দিয়ে মারতে থাকে। নাম-সহ সমস্ত তথ্য লিখে দিতে বলা হয়। আমি নাম বলি। ওঁরা লিখতে পারছেন না। আরও জোরে বলতে বলে। লিখতে না পারায় অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে।”
ওইদিনই তিনি আরও অভিযোগ করেন, “ওসি বলে কেন ইউনিভার্সিটির গেটে গিয়েছিলে? বলি, ছাত্ররা মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অসুবিধা নিয়ে বলতে যাই। এরপর ওসি বলে ধর্মঘট করতে গিয়েছিলে? দেখাচ্ছি তোমাদের ধর্মঘট। আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করা হয়। আমি বলতে পারছি না কী বলেছেন। আমার রুচিতে বাঁধছে। আমাদের জেলা সম্পাদিকাকে টেনে নিয়ে আসে ঘরে। আবার আমার নাম বলতে হয়। তাঁকে আমার নাম লিখতে বলা হয়। সেই সময় তাঁর হাতে বেতের আঘাত করা হয়। নাম লিখতে পারছিলেন না। চুলের মুঠি টেনে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর মোমবাতি দিয়ে ছেঁকা দেওয়া হয়। এখনও সেই চিহ্ন আছে। থানার ওসি বলছেন, থানায় বড় জায়গা আছে। মেরে পুঁতে দিলেও কেউ খোঁজ পাবে না। ওসি বলছেন, একে এত মারা হচ্ছে কেন লাঠি ভাঙছে না? আমাকে ওই রুম থেকে অন্য ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে আরও অনেক ছাত্রী ছিলেন। সেখানে সকলের উপর অত্যাচার হয়েছে। এত মারার ফলে আমি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলাম না। তখন ওসি বলেন, তোমাকে তো কিছুই করা হয়নি, ঢং করছো কেন? তোমাকে তো মারাই হয়নি।”
তাঁর আরও অভিযোগ, “রাতে সিসিটিভি আওতার বাইরে এমন একটি ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে বলা হয় ভুল স্বীকার করতে হবে। আমি বলি, ভুল স্বীকার বা ক্ষমা চাওয়ার মতো কোনও কাজ করিনি।” এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন সুশ্রীতা। যদিও তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, আদালতে পেশ করা হলফনামায় গরম মোম গায়ে ঢেলে দেওয়ার কথা উল্লেখই করেননি সুশ্রীতা। মিথ্যে অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে বলেই দাবি তাঁর। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বর্তমানে IPS মুরলীধর শর্মা এই মামলার তদন্ত করছেন।