shono
Advertisement

‘বাংলা ভাষা বিলুপ্তপ্রায়’, ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে ছাঁটাইয়ের চিঠি শিক্ষিকাকে, তুঙ্গে বিতর্ক

'ভুলে'র জন্য ক্ষমা চাইল স্কুল কর্তৃপক্ষ।
Posted: 12:09 PM Mar 19, 2023Updated: 05:24 PM Mar 19, 2023

দীপালি সেন: ‘বাংলা ভাষা বিলুপ্তপ্রায়। তাই আপনাকে আর দরকার নেই।’ পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার একটি ইংরেজি মাধ‌্যম স্কুলে কর্মরত এক বাংলার শিক্ষিকার চাকুরিছেদের চিঠির এহেন বয়ান দেখে নিন্দার ঝড় উঠেছে রাজ্যের নাগরিক সমাজে। প্রশ্ন উঠেছে, খাস বঙ্গভূমেই কি বাংলাভাষা ব্রাত‌্য হয়ে পড়ল? না হলে এমন কথা বলার সাহস হয় কী করে?

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার (Uttar 24 Parganas) কামারহাটি পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের আড়িয়াদহ নওদাপাড়া হোলি চাইল্ড স্কুলের কর্তৃপক্ষের দেওয়া ওই চিঠির ছবি শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) ভাইরাল। তাতে দেখা যাচ্ছে, শুক্রবার ১৭ মার্চ তারিখ দেওয়া লেখা ইংরেজি চিঠিটিতে সংশ্লিষ্ট বাংলা শিক্ষিকাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট লিখেছে, ‘সম্মাননীয় ম্যাডাম, আপনি জানেন আমাদের স্কুলে দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে বাংলা অথবা হিন্দি পড়ানো হয়। প্রায় সব পড়ুয়া হিন্দিকেই বেছেছে। বাংলা ভাষা বিলুপ্তপ্রায়। সব ক্লাস মিলিয়ে মাত্র দু’-তিনজন বাংলা ভাষা নিলেও তারা ক্লাস করবে না। কারণ, তাদের বলা হয়েছে দ্বিতীয় ভাষা বাংলা নিলে ক্লাস কামাই করা চলবে না। কিংবা স্কুলের বদলে বাড়িতেই শিখতে হবে। আপাতত তারা বাড়িতেই বাংলা পঠনপাঠন চালাতে চায়।’

[আরও পড়ুন: সাতসকালে কলকাতায় অগ্নিকাণ্ড, দাউদাউ করে জ্বলছে NT-1 স্টুডিওর একাংশ]

এবং এই কারণেই স্কুলে আর বাংলা শিক্ষকের দরকার নেই বলে জানিয়ে শিক্ষিকাকে দায়িত্ব থেকে অব‌্যাহতি দিয়েছে স্কুল। কর্তৃপক্ষের তরফে চিঠিটি দিয়েছেন কে. বোস, যাঁর পরিচিতি দেওয়া হয়েছে ‘ইনচার্জ অফ ম‌্যানেজমেন্ট’ হিসাবে। দিনভর শোরগোল-বিতর্কের পরে সেই কমলেশ বোস অবশ‌্য এদিন সন্ধ‌্যায় পিছু হটে দাবি করেছেন, ‘বাংলা ভাষা বিলুপ্তপ্রায়’, এমনটা তিনি লিখতে চাননি, ভুলবশত হয়ে গিয়েছে। তিনি আসলে বলতে চেয়েছেন, স্কুলে বাংলার পড়ুয়া প্রায় নেই। এবং ‘ভুল সংশোধন’ করে কমলেশবাবু এদিন ওই শিক্ষিকাকে ছাঁটাইয়ের নতুন চিঠি পাঠিয়েছেন। তাতে লিখেছেন, ‘বাংলা ভাষার পড়ুয়া আমাদের স্কুলে প্রায় নেই। ফলে বাংলা ভাষার শিক্ষক-শিক্ষিকা রাখার দরকার ফুরিয়েছে।’

দুঃখপ্রকাশ করে কমলেশবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মানুষের তো ভুল হতেই পারে। ভুলবশত ‘স্টুডেন্টস’ শব্দটা লেখা হয়নি। তাতে বাক্যটার অর্থ দাঁড়িয়েছে, বাংলা ভাষা প্রায় বিলুপ্ত। ত্রুটি নজরে আসতেই তা শুধরে নিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ব‌্যাপারটা একেবারেই অনিচ্ছাকৃত, আমি ক্ষমা চাইছি। যে কোনও ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হতেও আমি রাজি।’’ ওই ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষিকাকে তিনি মেসেজও পাঠিয়েছেন বলেও কমলেশবাবু জানান।

[আরও পড়ুন: ডিএ বিতর্কের মধ্যেই সরকারি দপ্তরে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালুর নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর]

স্কুলের ঠিকানা, ৫এ, নওদাপাড়া রোড, কলকাতা-৭০০০৫৯। ঠিকানায় গেলে দেখা যাবে, বোর্ডে ‘হোলি চাইল্ড স্কুল’ ও তার পাশেই ‘শিশুতীর্থ স্কুল’ লেখা। যে কারণ দেখিয়ে সেই স্কুলের বাংলার শিক্ষিকাকে বরখাস্ত করা হল, তার তীব্র নিন্দা জানিয়ে কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা বলেন, ‘‘বাংলা ভাষা কোনও দিন বিলুপ্ত হবে না। স্কুল যে নিন্দনীয় ঘটনা ঘটিয়েছে, তাতে আশা করি অভিভাবকরা আর ওই স্কুলে নিজেদের ছেলেমেয়েদের ভরতি করাবেন না। ফলে স্কুলটিই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’’ ঘটনার নিন্দা করেছেন তৃণমূলের (TMC) মুখপাত্র তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “বিচ্ছিন্ন ঘটনা।সমর্থন যোগ্য নয়। বেসরকারি স্কুল ঠিক কাজ করেনি। বাংলায় দাঁড়িয়ে এগুলো কি কথা? বাংলার ছাত্র বাড়ানো উচিত স্কুলগুলির।”

এ ভাবে কোনও শিক্ষিকের চাকরিছেদ করাটা কি নৈতিক? কমলেশবাবুর বক্তব‌্য, এটা বরখাস্ত নয়। ওঁর কন্ট্রাক্ট রিনিউ করা হয়নি।  ‘‘সোমবার একটা রেজাল্ট বেরোবে। তা দেখে আমরা ঠিক করেছিলাম, প্রয়োজনে আবার ওঁকেই ডাকব।’’– বলেন কমলেশবাবু। তবে উনি যা-ই যুক্তি দিন, বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের বাতাস ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই স্কুলের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে বাংলা পক্ষ। তারা জানিয়েছে, আগামী সোমবার স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে।

[আরও পড়ুন: দিদি কি মুখ বন্ধ রাখতে বলেছেন? প্রশ্নের মুখে কবিতা আওড়ালেন ফিরহাদ]

গোটা ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষিকার বক্তব্য কী? ফোনে যোগাযোগ করা হলে ওই শিক্ষিকা জানান, তিনি হোলি চাইল্ড স্কুলের দিবা বিভাগে ৯ মাস ধরে শিক্ষকতা করেছেন। দ্বিতীয় ভাষা বাংলা পড়িয়েছেন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ১৭ জন পড়ুয়াকে। শুক্রবারও গিয়েছিলেন স্কুলে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিকেলে হঠাৎ চিঠিটা পাওয়ার পরই জানতে পারলাম স্কুলে বাংলার পড়ুয়া সংখ্যা এত কমে গিয়েছে। এখনও নতুন শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়া ভরতি হয়নি। স্কুলে রি-অ্যাডমিশন হওয়ার কথা ২০ মার্চ ফলপ্রকাশের পর। তার আগে ওঁরা কী করে এতো নিশ্চিত হলেন যে নতুন শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে বাংলা কেউ নেবে না।’’ সব শেষে স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে ওই শিক্ষিকার প্রশ্ন, ‘‘বাংলা ভাষার পড়ুয়া না থাকলে ৯ মাস ধরে আমি কী করছিলাম?’’

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement