রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: দীর্ঘদিন ধরেই আদি-নব্য দ্বন্দ্বে জেরবার বঙ্গ বিজেপি। একটা সময়ের দাপুটে নেতা দিলীপ ঘোষ কার্যত কোণঠাসা। বঙ্গ বিজেপির নেতাদের আচরণে স্বাভাবিকভাবেই অভিমান জমেছে তাঁর মনে। সেই অভিমান ভাঙাতে এবার আসরে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বুধবার কলকাতার একটি হোটেলে দলের সাংসদ, বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসেছেন শাহ। সেখানেই ডাক পেয়েছেন দিলীপও। ইতিমধ্যেই বৈঠকে হাজির হয়েছেন প্রাক্তন রাজ্য বিজেপি সভাপতি। কিন্তু ঘুচবে কি দূরত্ব? সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।
দিলীপ ঘোষ যে বঙ্গ বিজেপির সফলতম রাজ্য সভাপতি তা বলাই বাহুল্য। তিনি দায়িত্বে থাকাকালীনই বাংলায় বিজেপির শিকড় মজবুত হয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ১৮টি আসনে বিজেপির জয়ের নেপথ্যে দিলীপ ঘোষের অবদান অনস্বীকার্য। এখানেই শেষ নয়, তিনি রাজ্য সভাপতি থাকাকালীনই ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন সংখ্যা ৩ থেকে বেড়ে ৭৭ হয়। তবে পরবর্তীতে দলে নতুন মুখ এসেছে। একদিকে নতুনদের দায়িত্ব বেড়েছে, অন্যদিকে পুরনোদের একাংশের সঙ্গে দলের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সেই তালিকায় ছিলেন দাবাং নেতা দিলীপ ঘোষও। চব্বিশের লোকসভায় নিজের গড় মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে বর্ধমান পূর্ব থেকে প্রার্থী করা হয় তাঁকে। যেখানে কীর্তি আজাদের কাছে পরাস্ত হন তিনি। এরপর সময় যত এগিয়েছে, দিলীপ তত বেশি করে কোণঠাসা হয়েছেন! চলতি বছরেই মোদি ও শাহ কলকাতা সফরে এসেছেন, সভা করেছেন কিন্তু সেখানে ডাক পাননি তিনি। তা নিয়ে অভিমানও উগরে দিয়েছেন।
দিলীপ 'ব্রাত্য' হওয়ার পর একের পর এক নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। অনেকেই বলেছেন, দিলীপ-সহ পুরনো মুখ ফিরলেই বিজেপি আবারও পায়ের নিচের মাটি শক্ত করতে পারবেন। সম্প্রতি তমলুকের বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও দিলীপকে নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। বলেছিলেন, "দিলীপ ঘোষের আমলেই ১৮ সাংসদ, ভুললে চলবে না। উনি সামনে না থাকলে প্রচারে খামতি থাকছে। তাঁর নিজস্ব স্টাইলের জন্য তাঁকে পছন্দ করেন বহু মানুষ। ওনার মধ্যে এখনও সেই আগুন আছে।" অর্থাৎ হারানো জমি ফিরে পেতে দিলীপকে যে প্রয়োজন, তা অনুভব করেছেন দলের সদস্যরাই। এসবের মাঝেই কলকাতায় শাহের বৈঠকে ডাক পেলেন দিলীপ ঘোষ। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সুনীল বনশল ফোন করেন দিলীপ ঘোষকে। শাহের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানান তিনি। সেই মতোই বুধের সকালে বৈঠকে হাজির হয়েছেন দিলীপ। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, ছাব্বিশে বাংলায় শিকড় মজবুত করতে দিলীপেই ভরসা করছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই অভিমানী দিলীপের মান ভাঙাতে আসরে খোদ শাহ।
