নব্যেন্দু হাজরা: করোনা (Corona Virus) আবহে গতবার উচ্চতা কমেছিল বিদেশে পাঠানো দুর্গা মূর্তির। বেশিরভাগ জায়গাতেই দেখা মিলেছিল ৬ থেকে সাড়ে ৬ ফুটের প্রতিমার। কিন্তু এবার সেই করোনা আবহেই ‘সবথেকে বড়’ দুগ্গা বাক্সবন্দি হয়ে রওনা দিল সান ফ্রান্সিসকো (San Francisco)।
পটুয়াপাড়া কুমোরটুলি থেকে বিদেশগামী ‘সবথেকে বড়’ এই দুর্গা প্রতিমা (Durga Idol) উচ্চতায় প্রায় ১০ ফুট, চওড়ায় ২০ ফুট। কুমোরটুলির প্রতিমাশিল্পীদের জানানো তথ্য অনুযায়ী, শহর থেকে সাধারণত চার থেকে ছ’ফুট উচ্চতার প্রতিমাই বিদেশে যায়। কখনও সখনও আট ফুটের দুর্গাও গিয়েছে। কিন্তু ১০ ফুটের প্রতিমা সচরাচর বাক্সবন্দি হয়ে এতটা দূরের পথ যেতে দেখা যায় না। শিল্পী কৌশিক বসুর তৈরি ফাইবারের এই মাতৃমূর্তি রবিবার আমেরিকায় রওনা দিয়েছে। যাবে সেখানকার সান ফ্রান্সিসকো শহরে।
মূলত প্রবাসীদের জন্যই প্রতিবছর প্রতিমা বানান কৌশিকবাবু। শনিবার বারবেলায় তাঁর স্টুডিও পৌঁছে দেখা মিলল ফাইবারের সান ফ্রান্সিসকোগামী প্রতিমার। দেখলে কে বলবে, এই মা মৃন্ময়ী নন! মুখ জুড়ে লাবণ্যের ঢল। গায়ে গয়না, শাড়ি। মাথায় মুকুট। দশ হাতে দশ অস্ত্র নিয়ে অতি চেনা সেই ‘দশপ্রহরণধারিণী’। শিল্পী জানান, কোভিড (COVID-19) নিয়ম মেনে এই প্রতিমাকেও স্যানিটাইজ করে পাঠানো হচ্ছে বিদেশে। তিনি বলেন, “প্রতিবারই ইংল্যান্ড, দুবাই, ইটালি, সিঙ্গাপুর থেকে অর্ডার আসে। এবারও এসেছে। বেশ কয়েকটি চলেও গিয়েছে। তবে সবথেকে বড় দুর্গা প্রতিমা এটি।”
[আরও পড়ুন: ভবানীপুরের কোভিড টিকাকেন্দ্রে আচমকাই হাজির মুখ্যমন্ত্রী, ঘুরে দেখলেন পরিস্থিতি]
কৌশিকবাবু জানালেন, তাঁর হাতে তৈরি প্রায় গোটা ১৫ প্রতিমা এবার বিদেশ যাচ্ছে। সান ফ্রান্সিসকোগামী ১০ ফুটের এই প্রতিমার দাম সাড়ে চার লক্ষ টাকা। তাঁর কথা অনুযায়ী, এবার প্রতিমার দাম অন্যান্য বছরের থেকে একটু বেশি। কারণ এখন জাহাজে করে ভিনদেশে ঠাকুর পাঠাতে নানান সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি রয়েছে কোভিডবিধির কড়াকড়ি। সে কারণেই খরচ বাড়ছে। প্রসঙ্গত, ক’দিন আগে ঝিমিয়ে থাকা কুমারটুলি (Kumartuli) এখন সামান্য হলেও চেনা ছন্দে ফিরছে।
শিল্পীদের কথা অনুযায়ী, অন্যবারের মতো না হলেও রথের দিন বেশ কয়েকটি বারোয়ারি পুজো কমিটি এসে ঠাকুরের বায়না করে গিয়েছে। শহরের বেশির ভাগ বনেদি বাড়ির পুজোরও অর্ডার চলে এসেছে। তাতেই যেন প্রাণ ফিরেছে কুমারটুলিতে। কাজে গতি এসেছে। গলিতে গলিতে ঠাকুর তৈরি, খড় বাঁধার কাজ চলছে। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, এবার একচালা ছোট ঠাকুরেরই চাহিদাই বেশি। করোনার কারণে খুব একটা আড়ম্বর করে পুজোর (Durga Puja 2021) আয়োজন এবারও হচ্ছে না। সেই কারণে বড় প্রতিমার অর্ডারও তেমন দেওয়া হচ্ছে না। “তাই সই!” একগাল হেসে বলছে পটুয়াপাড়ার শিল্পীরা। শেষ পর্যন্ত পুজোর ঢাকে কাঠি তো পড়ছে! তাঁদের কাছে এই পাওনাও অনেক।