নিরুফা খাতুন: সুন্দরবনের মধুর চাহিদা বরাবরই ছিল। জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) ট্যাগ পাওয়ার পর এই মধুর চাহিদা আরও বেড়ে গিয়েছে। চাহিদা বাড়তেই এক ধাক্কায় আয়ও দ্বিগুণ হয়েছে বনদপ্তরের। ২০২৪ সালে জিআই ট্যাগ প্রাপ্তির আগে সুন্দরবনের মধু বিক্রি করে বনদপ্তরের ঘরে আসত বছরে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। এখন সেই আয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক কোটি টাকার কাছাকাছি।

সুন্দরবন মানে ডাঙায় বাঘ, জলে কুমির। ম্যানগ্রোভে ঘেরা এই গহন অরণ্যে রয়্যাল বেঙ্গল বাঘের ঢেরা। বাঘের ডেরায় ঢুকে ঝুঁকি নিয়ে মধু সংগ্রহ করে থাকেন মৌলিরা। সেই মধু মৌলিদের কাছ থেকে কিনে নেয় ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন (ডব্লুইবিএফডিসি)। ওই মধু বাজারে বিক্রি করে লক্ষ্মীলাভ করছে বনদপ্তর।ডব্লুইবিএফডিসি সূত্রে খবর, ২০২৪-২০২৫ অর্থবর্ষ শেষ হয়নি। এখনও পর্যন্ত মুধ বিক্রি হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকার।
এপ্রিল থেকে সুন্দরবনের মধু সংগ্রহের কাজ শুরু হতে চলেছে। ইতিমধ্যে তা নিয়ে বনদপ্তরের বৈঠক হয়ে গিয়েছে। গত বছর প্রায় ৩৪ টন মধু সংগ্রহ করেছিল বনদপ্তর। এবছর আরও বেশি মধু সংগ্রহ হবে বলে আশাবাদী দপ্তরের আধিকারিকরা। গত বছর জানুয়ারিতে জিআই তকমা পায় সুন্দরবনের মধু। তারপর থেকে পশ্চিমবঙ্গের ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের এই তরল সম্পদের কদর শুধু দেশের মধ্যে সীমিত নেই। আন্তর্জাতিক স্তরেও কদর বেড়েছে। গত মে মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লুআইপিও) আয়োজিত জেনেটিক সম্পদ ও ঐতিহ্যগত জ্ঞানের ওপর সম্মেলনে জায়গা করে নিয়েছিল সুন্দরবনের মধু। বিদেশি পর্যটকরাও সুন্দরবন ভ্রমণে এসে মধু নিয়ে যাচ্ছেন। এখন বিদেশে মধু রপ্তানিতে জোর দিচ্ছে ডব্লুবিএফডিসি।
বনদপ্তরের নিজস্ব ব্রান্ড 'মৌবন' নামে সুন্দরবনের মধু বিক্রি করে। এই মধু বিদেশি রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে দপ্তরের। সেজন্য প্রয়োজনীয় পদেক্ষপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। তার আগে অবশ্য মধুর জোগানবৃদ্ধিতে জোর দিতে চাইছে কর্পোরেশন। সেজন্য মৌলিদের মধুর বাড়তি দামও দিচ্ছে বনদপ্তরের। এক আধিকারিক জানান, আগে মধুর দাম কম পেত মৌলিরা। সে জন্য তাঁরা বাইরে মধু বিক্রি করে দিতেন। এখন অনেকটা দাম বাড়ানো হয়েছে। ২০২২ সালে মৌলিরা কেজি পিছু মধুর দাম পেতেন ১৭০ টাকার মতো। ২০২৩ সাল থেকে বাড়তি দাম পাচ্ছেন মৌলিরা। বর্তমানে তাঁরা প্রতি কেজি মধুতে ২৮০ টাকা পান।