shono
Advertisement

সহ উপাচার্যের রহস্যমৃত্যুতে শোকস্তব্ধ যাদবপুর, বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিন ছুটি ঘোষণা

বুধবার দুপুরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য স্যমন্তক দাসের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
Posted: 09:37 PM Jul 20, 2022Updated: 09:37 PM Jul 20, 2022

দীপঙ্কর মণ্ডল: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (Jadavpur University) এসে প্রথমে দেশের উত্তর-পূর্বের ছাত্রছাত্রীরা কেউ কেউ গুটিয়ে থাকতেন। কিছুটা আড়ষ্ট বোধ করতেন এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পড়ুয়ারাও। স্যমন্তক দাস নামের অধ্যাপক মানুষটি তাঁদের কাছে হয়ে উঠতেন হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা। জ্ঞানের সঙ্গে উচ্চ রুচি ও সুস্থ রসিকতা বোধের এক অসামান্য মিশেল। যা সহজে আকর্ষণ করত সবাইকে। বুধবার তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ যাদবপুর ক্যাম্পাস।

Advertisement

বুধবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য অধ্যাপক স্যমন্তক দাসের মৃত্যুসংবাদ আসে। যাবতীয় প্রশাসনিক কাজ ও কিছু পিএইচডির ইন্টারভিউ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এদিন হওয়ার কথা ছিল এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকও। তা স্থগিত ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস, রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু-সহ আধিকারিকরা চলে যান এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে। শেষবারের মত তাঁরা প্রয়াত সহকর্মীকে দেখার চেষ্টা করেন। মর্গে রয়েছে অধ্যাপকের দেহ। ময়নাতদন্তের পর তাঁর দেহ বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

[আরও পড়ুন: হাই কোর্টের অনুমতির পরেও পিছু হঠল বিজেপি, উলুবেড়িয়ার সভা বাতিল শুভেন্দুর]

রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন, “আমরা এই দুঃসংবাদ মেনে নিতে পারছি না। অধ্যাপক সামন্তক দাস আমাদের অত্যন্ত প্রিয় একজন মানুষ। উনি ছাত্রছাত্রী ও কর্মীদেরও অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। তাঁর অকাল প্রয়াণে বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।” পরীক্ষা ও ইন্টারভিউয়ের নতুন দিন পরে জানাবে কর্তৃপক্ষ। যাদবপুরের শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক সমীর চক্রবর্তীর চোখে জল। ধরা গলায় তিনি জানালেন, “চোদ্দ বছর ধরে ওঁকে চিনি। শুধু চিনি বললে ভুল হবে। আমাদের অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক ছিল। কতদিন আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলেছি। ওঁর জ্ঞান এবং মেধা দেখে আশ্চর্য লাগত। আমাদের অনেক তর্কও হত। কিছুক্ষণ পরে আমরা একটা চা নিয়ে ভাগ করে খেতাম।”

কলা বিভাগের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন স্যমন্তকবাবু। তার আগে পড়াতেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত বছর শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্যর দায়িত্ব পান। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মিশতেন বন্ধুর মতো। মণিপুরের এক ছাত্রী এদিন যাদবপুর ক্যাম্পাসের ঝিলপাড়ে মনমরা হয়ে বসেছিলেন। তিনি জানালেন, “আমাদের মতো উত্তর-পূর্বের ছাত্রছাত্রীরা কলকাতায় এসে প্রথমে কিছুটা আড়ষ্ট থাকি। আমি কিছুতেই ভুলতে পারব না স্যমন্তকদার সঙ্গে প্রথম আলাপের কথা। ওঁর কথায় মনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা থেকেই আমি স্বাভাবিক হয়েছিলাম।”

মাঝেমধ্যেই নানা ইস্যুতে উত্তপ্ত হয় যাদবপুর ক্যাম্পাস। এক ছাত্র জানালেন, “হঠাৎ পিছন থেকে স্যমন্তকদা একদিন কাঁধে হাত রাখলেন। বললেন, তোমাদের আন্দোলন তো শিক্ষক স্যমন্তক দাসের বিরুদ্ধে হয় না। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হয়। চলো চা খাই।” কলা, বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র সংসদ অধ্যাপক দাসের অকালপ্রয়াণে শোকে মুহ্যমান। তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের পড়ুয়ারা কিছুক্ষণের জন্য হলেও শেষবারের মতো তাঁদের প্রিয় অধ্যাপককে ক্যাম্পাসে দেখতে চান।

[আরও পড়ুন: চোখের সামনে মাকে খুন করে আত্মঘাতী বাবা, দম্পতির দুই মেয়ের বয়ানে হতবাক পুলিশ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement