কৃষ্ণকুমার দাস: রাজ্যের প্রথম করোনা রোগী আমলাপুত্রের ওয়ার্ড কলকাতার ১০৯ নম্বরে কোভিড পজিটিভের সংখ্যা এক ধাক্কায় শুক্রবার পৌঁছে গেল ৩৬৪ জনে। তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হল, করোনা পজিটিভ রোগীদের মধ্যে ১৭/১৮ জন বসতিবাসী হলেও বাকিরা পাকা বাড়ি ও বহুতল আবাসনের সম্পন্ন বাসিন্দা। সংক্রমিতের পাঁচজন করোনায় মারা গিয়েছেন। ওয়ার্ডের শুধুমাত্র একটি বহুতল আবাসনেই ৪০ জনের বেশি কোভিডে আক্রান্ত। এই সংক্রমিতরা সকলেই আনন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালের নানা বিভাগের কর্মী।
যাদবপুরের ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে সংক্রমিতের তালিকায় মাত্র ৯৪ জন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা থাকলেও বাকিরা সকলেই বহিরাগত। অন্য রোগীরা হয় ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন, নয়তো পেয়িং গেস্ট। ওয়ার্ডে যে পাঁচজন মারা গিয়েছেন তাঁর মধ্যে দু’জন স্থায়ী বাসিন্দা, বাকি তিনজন বহিরাগত। সংক্রমিতের একাংশ ঠিকানা হিসাবে গেস্ট হাউজে দেওয়ায় কোভিড-মানচিত্রে গুরুত্ব পেয়েছে ১০৯ ওয়ার্ডের সংক্রমণ। এদিনও নয়জন রোগীর সন্ধান মিলেছে। উদ্বিগ্ন স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ নির্দেশে আজ, শনিবার র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের শিবির বসেছে মুকুন্দপুরে। এককভাবে শহরের একটি মাত্র ওয়ার্ডে সংক্রমিতের নিরিখে ১০৯ নম্বরে রেকর্ড হলেও পাশে যাদবপুরেরই ১০১ ওয়ার্ডে ২০৯ জন, ১১০ ওয়ার্ডে ৬৬ জন, ১০০ নম্বরে ১৩৮ জন এদিন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্যভবন জানিয়েছে। ১০১ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত জানান, “ওয়ার্ডের ৯৯ জন সুস্থ হয়ে ফিরেছেন, মারা গিয়েছেন ৭ জন। কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা আটটি।”
[আরও পড়ুন: খাস কলকাতায় করোনা পরীক্ষার নামে প্রতারণা, পুলিশের জালে ৩ অভিযুক্ত]
রাজ্যের কোভিড মানচিত্রে চিকিৎসামহল ও স্বাস্থ্যভবনের কাছে বহুলচর্চিত এবং সংক্রমণে এককভাবে রেকর্ড করা ওয়ার্ডটি ইএম বাইপাসের দু’পাশে। ৯.২ বর্গ কিলোমিটার ওয়ার্ডে প্রায় ৭৭ হাজার স্থায়ী বাসিন্দা থাকলেও বসবাস করা জনসংখ্যা প্রায় দু’লক্ষ। স্থানীয় হাসপাতাল, নার্সিংহোম এবং নানা সংস্থার কর্মীরা এলাকার বহু পাকাবাড়ি ও বহুতলে ভাড়া থাকেন। তবে শহরের দক্ষিণ-পূর্বের এই ওয়ার্ডে শহিদ স্মৃতি, ভগৎসিং, বিকাশ গুহ-র মতো ১৭টি বসতিতে ১৭ হাজার গরিব মানুষও রয়েছেন। উপহার, পূর্বালোক, অভিদ্বিপ্তা, এসবি টাওয়ারের মতো ৫২টি বহুতল আবাসনও রয়েছে এই ওয়ার্ডে। গত ২২ মার্চ শনাক্ত হওয়া রাজ্যের প্রথম করোনা রোগী নবান্নের আমলাপুত্রও ‘উপহার’ আবাসনেরই বাসিন্দা। পুরসভার তথ্য, প্রথম করোনা রোগীর বহুতল আবাসনেই এখনও পর্যন্ত ২২ জন সংক্রমিত হয়েছেন। সংক্রমণে পাল্লা দিচ্ছে অন্য বহুতলগুলিও। ৪০ জন সংক্রমিত নিয়ে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে মুকুন্দপুরের বহুতল এসবি টাওয়ার।
[আরও পড়ুন: মেডিকায় করোনা পজিটিভ অন্তঃসত্ত্বার প্রসবের খরচ ১০ লক্ষ টাকা! ফাঁস ভাইরাল মেসেজের সত্যতা]
করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বৃহস্পতিবার পুরসভার কো-অর্ডিনেটরদের যে বিশেষ বৈঠক হয় সেখানে স্বয়ং স্বরাষ্ট্রসচিব এই ১০৯ নম্বরে সর্বাধিক সংক্রমণের কারণ জানতে চান। ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “বেসরকারি হাসপাতাল-হাব হওয়ার কারণে নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীর পরিবারের সদস্যরা বসবাস করায় তাঁদের মারফত এলাকায় করোনা সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে।” তবে যে সমস্ত বাড়িতে আক্রান্ত হাসপাতালকর্মীরা আছেন সেখানে সংক্রমিতদের বাবহার্য সামগ্রী ও বর্জ্য সংগ্রহের জন্য হলুদ রঙের প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে, নিয়মিত স্যানিটাইজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর।
[আরও পড়ুন: করোনা রোগীর ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে লিখতে হবে ‘নেগেটিভ’, নিরাপত্তার খাতিরে নির্দেশ নবান্নর]
The post রাজ্যের প্রথম করোনায় আক্রান্তের ওয়ার্ডেই ৩৬৪ জন সংক্রমিত! উদ্বিগ্ন খোদ স্বরাষ্ট্রসচিব appeared first on Sangbad Pratidin.