কথায় বলে, কোনও কিছুই ফেলা যায় না। একদম ঠিক। ফেলে দেওয়া ইলেকট্রিকের তার, ব্যাটারি দিয়েও দিব্যি আলো জ্বালানো যায়। আর তৈরি করা যায় নতুন নতুন ইলেকট্রনিক গ্যাজেট। যা সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত দামি হয়ে ওঠে। তবে এর মাধ্যমে নতুন ধরনের আয়ের পথও বের হয়। এমনই পথ দেখালেন বারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ইলেকট্রনিক সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রিয়দর্শী মজুমদার ও অধ্যাপক সন্দীপ দে। কী বলছেন দু’জন?
যেসব ছাত্রছাত্রী ইলেকট্রনিক্স অনার্স বা ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছে আর ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা বা চাকরির দিকে না গিয়ে ইলেকট্রনিক্স-নির্ভর কিন্তু কম বিনিয়োগের কোনও ব্যবসা করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তাদের নতুন আয়ের পথ দেখাচ্ছে ‘ইলেকট্রনিক বর্জ্যশিল্প’, অপরটি ‘এল.ই.ডি. লাইটিংশিল্প’। ইলেকট্রনিক্স-নির্ভর এই ব্যবসাগুলিতে আসতে হলে ইলেক্ট্রনিক্সের ধারণার সঙ্গে শিল্পক্ষেত্রে দক্ষতা প্রয়োজন।
ইলেকট্রনিক বর্জ্য এখন নতুন দিশা: ভাঙা ও বাতিল ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের অংশবিশেষ, টুকরো-টাকরা, ভাঙা ও পুরনো ব্যাটারি, ক্যাসেট, ফ্লপি, সিডি, পুরনো রেডিও, টিভি, বাতিল তার, পুরনো কম্পিউটারের মাদার বোর্ড এই সবই এককথায় ইলেকট্রনিক বর্জ্যের মধ্যে পরে। ভারতও এই ইলেকট্রনিক বর্জ্যগুলিকে নিয়ে চিন্তিত। ইলেকট্রনিক বর্জ্যগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এদেরকে পুনরায় ব্যবহার করার উপযোগী করে তোলা জরুরি, এই পদ্ধতিকে বলে রিসাইক্লিং। এই পদ্ধতিতে বাতিল জিনিসগুলি থেকে সোনা, রুপো, তামা, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম এইসব ধাতু নিষ্কাশন করা হয় বা যে যন্ত্রাংশগুলি এখনও কাজ করছে বা খারাপ হয়ে থাকলেও সহজে সারিয়ে তোলা সম্ভব সেগুলোকে মেরামত করা হয়। আর ইলেকট্রনিক বর্জ্যের অক্ষতিকর অংশগুলি দিয়ে অনেক সুন্দর আর্ট-ক্র্যাফট তৈরি করা হচ্ছে। সোজা ব্যাপার হল, একাধারে যেমন এই বর্জ্যগুলি দিয়ে নতুন নতুন গ্যাজেট তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে, ঘরে কিংবা অফিসে সাজানোর নানা ধরনের হস্তশিল্প দিব্যি তৈরি হচ্ছে এই ইলেকট্রনিক বর্জ্য দিয়ে। আসলে, ইলেকট্রনিক্স নিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্সের বিষয়ে জানা কর্মীরা এখন কাজ শেষে ফেলে দেওয়া ইলেকট্রনিক্সের নানা জিনিসকে সাজিয়ে-গুছিয়ে দিব্যি নতুন রূপ দিচ্ছে। যা সত্যিই প্রশংসার।
[আরও পড়ুন: ফাগুনের আবেশে রাঙিয়ে তুলুন নিজের বাড়ি, কোন ঘরে কোন রং ভাল মানাবে জানেন?]
শিখতেও সাহায্য করছে: স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের এই সকল বর্জ্য দিয়ে কেমন করে নতুন নতুন জিনিস তৈরি করা যায়, সে দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষক ও অধ্যাপকরা নিজেদের উদ্যোগে ছাত্রছাত্রীদের নতুন নতুন মডেল তৈরি করতে সাহায্য করতে পারেন। এটা একাধারে যেমন আয়ের নতুন পথ খুলে দেবে, তেমনই ইলেকট্রনিক বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের দিকেও এগিয়ে যাওয়া যাবে।
সুযোগ আছে প্রচুর: ইলেক্ট্রনিক্সের যেসব ছাত্রছাত্রীর হাতের কাজের ঝোঁক আছে, তারা নিজেরাই অথবা কোনও আর্টিস্টকে সঙ্গে নিয়ে স্বল্প বিনিয়োগে ইলেক্ট্রনিক বর্জ্যশিল্প সংক্রান্ত ব্যবসাকে নিজেদের পেশা হিসাবে বেছে নিতেই পারে। ইলেকট্রনিক বর্জ্য দিয়ে দুর্দান্ত আর্ট-ক্র্যাফট বানিয়ে সেগুলি বাড়ি থেকেই অনলাইনে তুলে ধরতে পারে। ই-কমার্সের সূচনা ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন সারা পৃথিবী হাতের মুঠোয়। একটা সত্যিকারের দোকানের মাধ্যমে যেখানে শুধুই স্থানীয় কিছু ক্রেতা পাওয়া যায়, সেখানে ইন্টারনেটভিত্তিক দোকানের মাধ্যমে অসংখ্য ক্রেতা পাওয়া আজ আর কল্পনা নয়। এখন তো প্রচুর ই-কমার্স সার্ভিস প্রোভাইডার সংস্থার মধ্যে থেকে নিজের প্রোডাক্ট/সার্ভিসের ধরন ও গুণমান অনুযায়ী শুধু সঠিক বিকল্পটি বেছে নেওয়ার অপেক্ষা।
তাই, ইলেকট্রনিক্সের ছাত্রছাত্রীদের বলব, ইলেকট্রনিক বর্জ্য দিয়ে নতুন শিল্পের দিকে আগ্রহ থাকলে, এখন থেকেই ‘ইউনিক আইডিয়া’ বের করে ফেল।