অর্ণব আইচ: গঞ্জিকা সেবন করলে মনে আসবে সাহস। কোনও শিশুকে খুন তথা নরবলি দিতে একবারও ভাববে না সে। তাই তান্ত্রিক গুরুর নির্দেশে গাঁজা খেয়েই নাবালিকাকে নৃশংসভাবে খুন করে অলোক কুমার। তদন্ত শুরু করে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে। নাবালিকার দেহ নিয়ে ওই তান্ত্রিক (Tantrik) শবসাধনা করার ছক কষেছিল কি না তা খতিয়ে দেখছেন লালবাজারে গোয়েন্দারা। এর আগেও অভিযুক্ত অলোক কুমারের বিরুদ্ধে কোনও অপরাধের রেকর্ড আছে কি না, তা জানতে বিহার পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন লালবাজারের (Lalbazar) কর্তারা। এদিকে, এই ঘটনায় জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন ডিজিপি ও মুখ্যসচিবকে নোটিস পাঠানো হতে পারে।
পুলিশ জানিয়েছে, তিলজলার (Tiljala)যে বহুতলের ফ্ল্যাট থেকে নাবালিকার দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেই ফ্ল্যাটের ভিতর থেকেই উদ্ধার হয় বেশ কয়েক প্যাকেট গাঁজা ও ছিলিম। এই বিষয়টি নিয়ে যখন অভিযুক্ত অলোক কুমারকে প্রশ্ন করা হয়, তখন সে জানায় যে, নিমতলা ঘাটের ওই তান্ত্রিককে সে গুরু বলে মানতে শুরু করেছিল। যখন নরবলির কথা বলা হয়, প্রথমে একটু ঘাবড়ে যায় অলোক। কীভাবে খুন করবে, সেই উত্তরে তান্ত্রিক তাকে গাঁজা (Marijuana) খাওয়ার পরামর্শ দেয়। নিমতলা ঘাটের কাছে দু’জন মিলে গঞ্জিকা সেবনও করে।
[আরও পড়ুন: ‘আমি মিলির জন্য সুপারিশ করেছি’, বাম আমলের ‘স্বজনপোষণ’ নিয়ে বিস্ফোরক প্রাক্তন বামনেতা]
এরপর তান্ত্রিক ও অলোক মিলে খুনের ছক তৈরি করে। প্রচণ্ড গাঁজার নেশা করলে তার যে বলি দিতে কোনও অসুবিধা হবে না, সেটাই অলোককে বোঝায় ওই তান্ত্রিক। ওই নাবালিকাকে বলির জন্য শনাক্ত করার পর অলোক তান্ত্রিককে জানিয়েছিল যে, সাধারণত ওই বহুতলের অনেক বাসিন্দা দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন। সকাল আটটার আগে গেঞ্জি কারখানার কোনও কর্মী আসেননি, তাই ওই সময় শিশুটিকে সিঁড়ি দিয়ে মুখ চেপে নিয়ে গেলেও কেউ টের পাবেন না। আর বাস্তবে তা-ই হয়েছিল। অলোক স্বীকার করে যে, সে শিশুটিকে ঘরে ঢুকিয়েই দরজা বন্ধ করে দেয়। হাত দিয়ে তার মুখ বন্ধ করাই ছিল। ওই অবস্থায় হাতুড়ি নিয়ে এসে তার মাথায় মারে। ফলে বেশি চিৎকার করতে পারেনি মেয়েটি। সম্ভবত সেই কারণে কোনও প্রতিবেশীও টের পাননি যে, এত বড় ঘটনা হয়ে গিয়েছে তারই পাশের ফ্ল্যাটে। অলোকের পাশের ফ্ল্যাটের এক বাসিন্দার দাবি, তাঁরা কোনও শব্দ পাননি।
[আরও পড়ুন: ফের প্যান-আধার সংযুক্তিকরণের সময়সীমা বাড়ছে? নয়া সিদ্ধান্তের পথে কেন্দ্র]
এদিকে, অলোকের স্ত্রী সন্তান ধারণের জন্য নাবালিকার নখ, চুল, দাঁত ও কানের অংশ উপড়ে নিলেও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, তান্ত্রিক তাকে দেহটি রেখে দিতে বলে। অভিযুক্তকে বোঝায় যে, দেহটি সহজে পচবে না। কারণ সে ‘কালাজাদু’র সাহায্যে দূর থেকে মন্ত্র উচ্চারণ করেই দেহটি তাজা রাখবে। ওই দেহের উপর বসে তান্ত্রিক শবসাধনা করার পরিকল্পনা করেছিল বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ গোয়েন্দাদের।