সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পুলিশের পর এবার নিশানায় বনদপ্তরের কর্তারা। রেঞ্জ আধিকারিক খুনের হুমকি দিয়ে ‘মাওবাদী’ পোস্টার মিলল পুরুলিয়ায় (Purulia)। বাঘমুন্ডি রেঞ্জ কার্যালয়ের দেওয়ালেই বৃহস্পতিবার সাতসকালে হিন্দি ভাষায় সাদা কাগজের উপর লাল কালিতে লেখা এই পোস্টার উদ্ধার করে পুলিশ। কয়েকদিন আগে ঝালদা-কোটশিলা এলাকায় মাওবাদী পোস্টার মিলেছিল। এবার পাঁচ দিনের মাথায় যেভাবে সরকারি আধিকারিককে নিশানা করে ‘মাওবাদী’ (Maoist) নাম দিয়ে পোস্টার মিলল, তাতে ফের আতঙ্কের ছবি পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে।
উদ্ধার হওয়া পোস্টারে বাঘমুন্ডি রেঞ্জ আধিকারিক আলমগির হককে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানানো হয়েছে, দশদিনের মধ্যে বাঘমুন্ডি না ছাড়লে তাঁর ‘লাশ’ পাওয়া যাবে ড্যামের জলে। সেইসঙ্গে বিকাল পাঁচটা থেকে সকাল ছ’টা পর্যন্ত অফিস থেকে না বেরনোর ফতোয়াও জারি করেছে ‘মাওবাদী’রা! পোস্টারের এই বয়ান দেখে মাথায় হাত পুলিশ থেকে বনদপ্তর। তবে হিন্দিতে লেখা এই মাওবাদী পোস্টার নিয়ে যথেষ্ট বিভ্রান্তি রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে। তবে দিন পাঁচেক আগে উদ্ধার হওয়া ঝালদা–কোটশিলার মত এই মাও পোস্টারকে অবশ্য একেবারেই হালকা ভাবে নিচ্ছে না পুলিশ। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো বলেন, “হিন্দিতে লেখা একটি পোস্টার পাওয়া গিয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।” তবে বাঘমুন্ডির লিংক রোড এলাকা থেকেও এদিন আরেকটি ‘মাওবাদী’ পোস্টার উদ্ধার হয় যেটিতে পুলিশকে নিশানা করা হয়।
[আরও পড়ুন: পয়লা বৈশাখেও স্বস্তি নেই, বাংলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ৬৭৬৯]
কয়েক মাস আগে থেকেই পুরুলিয়ায় একের পর এক উদ্ধার হওয়া ‘মাওবাদী’ পোস্টারে সরকারি প্রকল্পের বেনিয়মের কথা লেখা ছিল। এবার সরকারি আধিকারিককেই হুমকি দিয়ে পোস্টার মেলায় চাপে পড়ে গিয়েছে পুলিশ। এই জেলায় অতীতেও বনদপ্তরের ডিএফওকে নিশানা করে মাওবাদীরা
প্রেস বিবৃতি দিয়েছিল। কিন্তু এভাবে সরাসরি পোস্টারে খুনের হুমকিতে আতঙ্কিত জেলার বনকর্মী থেকে আধিকারিকরা। পুরুলিয়া বিভাগের নতুন ডিএফও দেবাশিস শর্মা বলেন, “বিষয়টি আমরা পুলিশকে জানিয়েছি। বিভাগীয় ভাবেও এই ঘটনার তদন্ত হচ্ছে।” পোস্টারে লেখা, শুকনো কাঠ মহিলারা জঙ্গল থেকে আনতে গেলে তাদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। অথচ গাড়ির পর গাড়ি কাঠ পাচার হয়ে যাচ্ছে। গত দশ বছর আগে বাঘমুন্ডি রেঞ্জের এমন হাল ছিল না বলে পোস্টারে সমালোচনাও করেছে ‘মাওবাদীরা’! এই বিষয়ে রেঞ্জার আলমগির হক বলেন, “এই পোস্টার ‘মাওবাদী’দের নয়।’’ তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: ‘চোর-ডাকাতরা আগে জেলে যেত, এখন বিজেপিতে যায়’, কটাক্ষ অভিষেকের]
আসলে, পুরুলিয়ার জঙ্গলে কাঠ চুরি পুরোপুরি রুখে দেওয়া গিয়েছে। তাই কেউ বা কারা নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এই কাজ করেছে বলে অনুমান পুলিশের। তবে অতীতেও জঙ্গলে পড়ে থাকা শুকনো কাঠ যাতে মানুষজন নিতে পারেন, তাদের কোনও বাধা না দেওয়া হয় এই বিষয়ে সরব হয়েছিল মাওবাদীরা। পুরুলিয়ায় যেভাবে একের পর এক ‘মাওবাদী’ নাম দিয়ে পোস্টার উদ্ধার হচ্ছে, তাতে চাপে জেলা পুলিশ।