রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: মোহনবাগান (Mohun Bagan) এবং ইস্টবেঙ্গল আলাদা লিগে খেলায় ফুটবল মাঠে ঘটি-বাঙালের যুদ্ধ না হওয়ার হতাশা বাংলাজুড়ে। কিন্তু করোনার সৌজন্যে মাস্কের ময়দানে দাপিয়ে খেলছে সবুজ-মেরুন এবং লাল-হলুদ। শুধু ইস্ট-মোহন কেন! হই হই করে পথঘাট ছেয়ে ফেলেছে ব্রাজিলের হলুদ-সবুজ, আর্জেন্টিনার নীল-সাদা, হল্যান্ডের কমলা, ইংল্যান্ডের লাল-নীল রঙচ্ছটাও। পিছিয়ে নেই লিভারপুল, বায়ার্ন মিউনিখ, বার্সেলোনা (FC Barcelona), রিয়ালও। সব মিলিয়ে ফুটবল অন্তপ্রাণ বাঙালি প্রাণরক্ষার মাস্কেও জড়িয়ে নিয়েছে প্রিয় দলের জার্সিকে।
করোনা আটকাতে মুখে মাস্ক পরতে হবে, একথা আজ পাঁচ বছরের শিশুও জেনে গিয়েছে। কিন্তু রক্ত যখন বাঙালির, তখন ফুটবলকে বাদ দেওয়া যায় কী ভাবে? তাই সামাজিক দূরত্বের নিষেধে মাঠে বল না গড়ালেও ইস্ট-মোহন, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা বা লিভারপুল-বার্সেলোনারা বাংলার পথ-ঘাট, বাজারে আছে বহাল তবিয়তেই! যুক্তিটাও জব্বর শক্তপোক্ত!মাস্ক যখন পরতেই হবে, তখন তার রং নিজের প্রিয় দলের রঙের সঙ্গে মেলাব না কেন মশাই?
[আরও পড়ুন: করোনা আবহে বিয়ের সাজে ‘মিস ম্যাচ’? বেনারসি বা শেওয়ানির সঙ্গে বর-কনে পাবেন ‘ম্যাচিং মাস্ক’]
এমনিতে শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও বছরভর তাবৎ বঙ্গজাতি বিভক্ত থাকে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) এই দুই শিবিরে। বিশ্বকাপ এলে রাতারাতি শিবিরের সাইনবোর্ড পালটে যায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায়। ইউরোপীয় লিগে রাতে কেউ বার্সেলোনা, তো কেউ বায়ার্ন মিউনিখ। কেউ আবার জুভেন্তাস বা ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেড। মাঠের সে লড়াইয়ে সরগরম থাকে পাড়ার রক বা কলেজের ক্যান্টিন। এখন তার রেশ মাস্কের বাজারেও। অভিজাত বাজার কিংবা পাড়ার দোকান, সর্বত্রই সদর্পে ঝুলছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের জার্সির রঙে মেলানো মাস্ক। চাহিদাও তুঙ্গে। দোকানিদের কথায়, আমবাঙালির কাছে এখন ইস্টবেঙ্গলের থেকে সদ্য আই লিগ জিতে আইএসএল-এ পা রাখতে চলা সবুজ-মেরুন মাস্কের বিক্রির চাহিদা বেশি। একইভাবে ব্রাজিল পিছনে ফেলেছে আর্জেন্টিনাকে।
[আরও পড়ুন: ১৫ জুন খুলছে না মোহনবাগান তাঁবু, করোনা আবহে সিদ্ধান্ত বদল কর্তাদের]
দোকানিরা বলছেন, প্রচলিত মেডিক্যাল মাস্ক বা ওষুধের দোকানে বিক্রি হওয়া খেলো সিন্থেটিক মেটিরিয়ালে তৈরি মাস্কের তুলনায় মোটা কাপড়ের এই বিশেষ জার্সিরঙা মাস্কগুলি সস্তায় পুষ্টিকর। হাওড়ার মনসাতলায় এক বিক্রেতা মিঠুন ঘোষ জানালেন, ৩০ টাকা দামের এই মাস্কগুলি ভালই বিক্রি হচ্ছে। তাঁর কথায়, ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান জার্সির রঙের মাস্কের চাহিদা সব থেকে বেশি। আবার কিছুটা হলেও আর্জেন্টিনার থেকে ব্রাজিলের মাস্ক বেশি বিক্রি হচ্ছে। বালটিকুরির মোহনবাগান অন্তপ্রাণ কাল্টু দাস জানাচ্ছেন, তাঁদের পাড়ার ক্লাবের পক্ষ থেকে সদস্যদের জন্য মোহনবাগান মাস্কের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। আর্জেন্টিনার অন্ধ সমর্থক বেলগাছিয়ার সৌমিত্র মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ব্রাজিলের মাস্ক সেরকম কেউ কিনছেই না। মেসির ছবি দেওয়া নীল-সাদা আর্জেন্টিনার মাস্কই বেশিরভাগের পছন্দ।
করোনার জেরে জীবনের অঙ্গ হয়ে ওঠা মাস্ক এখন ফ্যাশন স্টেটমেন্টও বটে। ফুটবল থেকে প্রেম, হয়তো আগামীতে কবিতাও! সুকুমার রায় লিখেছিলেন, ‘গোঁফের আমি, গোঁফের তুমি, গোঁফ দিয়ে যায় চেনা’। করোনা-পরবর্তী দুনিয়ায় সেই সুর টেনেই হয়তো বলতে হবে-‘মাস্ক দিয়ে যায় চেনা।’
The post মাস্ক দিয়ে যায় চেনা! হাওড়ার মাস্কের বাজারে তুমুল লড়াই মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের appeared first on Sangbad Pratidin.