নব্যেন্দু হাজরা: যে দূরত্ব যেতে ভাড়া ছিল আড়াই হাজার, সেখানেই এখন সাড়ে তিন। তিন হাজারি ভাড়া হয়েছে চার-সাড়ে চার হাজার টাকা। ড্রাইভারদের পরিষ্কার কথা, দরদাম চলবে না। কারণ ভাড়া ঠিক করেছে সিন্ডিকেট। উত্তরবঙ্গের যে কোনও পর্যটনস্থলের গাড়িই সিন্ডিকেটের দখলে। যেমন খুশি ভাড়া। অথচ সেই ভাড়াতেই গাড়ি নিতে হচ্ছে পর্যটকদের। কারণ, উপায় নেই। বাইরের গাড়ির সেখান থেকে পর্যটক তোলা নিষিদ্ধ।
গরমে তেতেপুড়ে দক্ষিণবঙ্গ। তাই সাময়িক স্বস্তি পেতে মানুষ ছুটছেন পাহাড়ে। প্রায় মাস দুয়েক ধরেই উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনে টিকিট নেই। স্পেশাল ট্রেন দিয়েও ভিড় সামলানো যাচ্ছে না। গরমের ছুটি পড়ার পর তো থিকথিক করছে পাহাড়। কোথাও ঘর নেই। শৈলশহর থেকে গ্যাংটক, কোলাখাম, ডুয়ার্সের বিভিন্ন জয়গাঁ, লাভা, লোলেগাঁও, কালিম্পং, কার্শিয়াং, লেপচাজগৎ, তাকদা–অধিকাংশ হোটেল, হোম স্টে হাউসফুল। মাস দুয়েক আগে যাঁরা ঘর বুক করেছেন, তাঁরাই পেয়েছেন। বাকিদের ট্যুর ক্যানসেল করতে হয়েছে। রাতে দার্জিলিংয়ের ম্যাল দেখে মনে হচ্ছে, যেন পুজোর ঠাকুর দেখতে ভিড় জমেছে দেশপ্রিয় পার্কে। আর সেই পর্যটকদেরই পকেটে টান লাগাচ্ছে গাড়ি।
[আরও পড়ুন: এভারেস্ট জয়ের ৭০ তম বর্ষপূর্তিতে ট্রেকারদের জন্য খুলল রোমাঞ্চকর পাহাড়ি রাস্তা]
বেশিরভাগ হোটেলেই গাড়ির রেটচার্ট পৌঁছে দিয়েছে সিন্ডিকেট। ভাড়া নিতে হবে সেখান থেকেই। পর্যটকদের দাবি, হয় ঘণ্টা পিছু নতুবা কিলোমিটার পিছু ভাড়া হোক। এখানকার ভাড়ার কোনও মাথা-মুন্ডু নেই। পর্যটকরা যেতে বাধ্য, এটা ধরে নিয়েই কার্যত জুলুমবাজি চালাচ্ছে তারা। সরকারের উচিত বিষয়টি একটু দেখা। না হলে মানুষ গাড়ি ভাড়ার আতঙ্কে পাহাড়ে আসতে ভয় পাবেন।
উত্তরবঙ্গে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের দাবি, এখানকার গাড়ির ভাড়াও কলকাতার ট্যাক্সি বা অ্যাপ ক্যাবের মতো নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। না হলে বেলাগাম গাড়িভাড়ার কারণে বহু পর্যটক মুখ ফেরাবেন পাহাড় থেকে। কারণ অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারও সারা বছর ধরে টাকা জমিয়ে বছরে একবার পাহাড় অথবা সমুদ্রে বেড়াতে যান। কিন্তু যেভাবে গাড়িভাড়া বেড়েছে, তাতে পাহাড়ে এসে তাঁদের ঘোরাটাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন এনজেপি থেকে দার্জিলিং ৩৫০০ টাকা, লাভা ৪০০০, লাভা থেকে দার্জিলিং ৪৫০০, এনজিপি থেকে সুনতালিখোলা ৩৫০০ টাকা, সুনতালিখোলা থেকে আলিপুরদুয়ার ৫০০০, লাভা থেকে রিশপ, ছাঙ্গি ফলস, চা বাগান ৪৪০০ টাকা। স্থানীয় লোকেদেরও দাবি, এত টাকা ভাড়া কিছুমাস আগেও ছিল না। তখন পর্যটকরা চালকদের সঙ্গে দরদামও করতে পারতেন। কিন্তু এখন সেসব অতীত। সিন্ডিকেটের ঠিক করে দেওয়া রেটচার্ট অনুযায়ীই দিতে হয় ভাড়া।