সুস্থ শরীর তথা শারীরিক সৌষ্ঠব বাড়ানো বা বজায় রাখার জন্য বহু উপায় অবলম্বন করা হয়, অপরপক্ষে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর পড়ে না বললেই চলে। এটা মনে রাখা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ যে শরীরী সৌন্দর্যের পাশাপাশি, সামগ্রিকভাবে সুষ্ঠু ও সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবন গড়ে তুলতে মানসিক স্বাস্থ্যের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। বলছেন আঁখি গুপ্তা (সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলর, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এক্সপার্ট)
আমরা শুনে থাকি যে, জীবনের প্রতিক্ষেত্রে আমাদের ইতিবাচক মনোভাব রাখা উচিত, কিন্তু কীভাবে সেটি সম্ভব সেই বিষয়টি আড়ালেই চর্চার বাইরে থেকে যায়। ইতিবাচক থাকতে গেলে, মানসিক শান্তি এবং স্থৈর্য্য অত্যন্ত দরকারি। নাগরিক জীবনযাত্রা চাপমুক্ত হবে এমনটা অসম্ভব হলেও, চাপকে নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক এবং অসম্ভব নয়। মানসিক চাপ ও উৎকন্ঠা নানান শারীরিক সমস্যার কারণও বটে।
গবেষকরা পরীক্ষার মাধ্যমে দেখেছেন যে, দাঁতে ক্যালসিয়ামের ক্রমে অভাব, পেপটিক আলসার যাকে আমরা পাকস্থলীর ক্ষত বলে জানি, হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ, করোনারি হৃদরোগ (সি.এইচ.ডি), কোলাইটিস বা মলাশয় প্রদাহ এবং মাইগ্রেন বা আধকপালে প্রভৃতির কারণ হল অত্যধিক মানসিক চাপ। অফিস, মিটিং, ফাইলের স্তুপ, কাজের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়ার চূড়ান্ত চাপে আমরা নিজের পিছনে সময় ব্যয় করতে ভুলে যাই, পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কগুলি এমনকি নিজের খাওয়া-দাওয়ার প্রতিও ভ্রূক্ষেপ করি না। সবকিছুর মধ্যে, সবকিছু সত্ত্বেও প্রত্যহ নিজের জন্য সময় বের করা বিশেষ প্রয়োজন। প্রতিদিনের ইঁদুরদৌড়ের পর স্বল্প সময়ের বেড়ানো, খানিক বিনোদন, নিদেনপক্ষে পরিবারের সাথে সময় কাটানো, ছোট ছোট ব্যাপারে খুশি হওয়া, ইত্যাদি করে উঠতে পারা কঠিন হলেও তা কাজ করে অমোঘ মন্ত্রের মতো।
[জানেন, নির্দিষ্ট কিছু খাবার খেলে কেন হয় অ্যালার্জি?]
একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অন্য কাউকে ভাল কিছু করতে দেখলে মানুষের মনে জায়গা করে নিচ্ছে তীব্র ঈর্ষা, হীনমন্যতা ও মানসিক ক্লেশ। সামাজিক প্রতিপত্তি তৈরি, জীবনযাপনের ধরন ইত্যাদিতে অন্যের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে আমরা ভিতর থেকে ফুরিয়ে যাচ্ছি আর আমাদের খুশি, আনন্দ সব তলানিতে গিয়ে ঠেকছে, আমাদের অবিলম্বে সেসব বন্ধ করা উচিত যা আমাদের অস্বস্তির কারণ। এগুলি আমাদের চাপকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে, অজান্তেই মনকে করে তোলে ভারাক্রান্ত। চূড়ান্ত উৎকর্ষতা ও যথার্থতার খোঁজে বিহ্বল হওয়া অর্থহীন। এগুলির অনুপস্থিতিতেও জীবনকে সুন্দর করে তোলা সম্ভব। দুঃখের ব্যাপার হল, কম বেশি আমরা সবাই ইতিবাচক উক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে থাকি, কিন্তু যখন ব্যক্তিগত দৈনন্দিন জীবনে সেগুলি মেনে চলার বা পালন করার অবকাশ আসে, আমরা সেখানে পিছিয়ে পড়ি।
[রেড মিট খাচ্ছেন? কী মারাত্মক বিপদের মুখে পড়বেন জানেন?]
উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে সমস্যা আরও ঘনীভূত হওয়ার আগেই, ভুক্তভোগী কোনও কাছের মানুষের সাথে তার সমস্যা ভাগ করে নিতে পারে বা কাউন্সিলরের সাহায্য নিতে পারে। জীবন কখনওই আমাদের চাহিদা একশো শতাংশ পূরণ করবে না, চাওয়া ও পাওয়ার মাঝের ফারাক সবর্দা থাকবে, তবুও যা যেটুকু আছে, সেই বিন্দুর মধ্যে দিয়ে সিন্ধু খুঁজে আদতে সুখী হওয়াও একটা শিল্প আর সেই শিল্পরীতি শিখে নেওয়ার সময় এসেছে।
পরামর্শের জন্য ফোন করুন- ৮৯৬১৪৭৬২৬৮
The post দৈনন্দিন ব্যস্ততার মধ্যে মন ভাল রাখার পাসওয়ার্ড কী? appeared first on Sangbad Pratidin.