shono
Advertisement

‘আমার হৃদয়ে মোহনবাগান’, বেঙ্গালুরুর সেই ঝলমলে রাতের স্মৃতিচারণে সনি

ফেরান্দোর মোহনবাগানের প্রশংসায় হাইতিয়ান ম্যাজিশিয়ান।
Posted: 03:29 PM Mar 15, 2023Updated: 02:48 PM Mar 16, 2023

কৃশানু মজুমদার: সেদিন গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা ছিল কলকাতার। আনন্দনগরী থেকে প্রায় দু’ হাজার কিলোমিটার দূরের বেঙ্গালুরুতে সেদিন বৃষ্টি আর বৃষ্টি। নব্বই মিনিটের মরিয়া লড়াইয়ের শেষে মোহনবাগান (Mohun Bagan) সমর্থকদের আনন্দাশ্রু বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়েছিল কান্তিরাভায়। ১৩ বছরের শাপমুক্তি ঘটেছিল ২০১৫ সালের ৩১ মে।

Advertisement

দেখতে দেখতে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। আরও একবার ভারতসেরা হওয়ার সুযোগ মোহনবাগানের সামনে। গোটা দেশকে সবুজ-মেরুন রংয়ে রাঙিয়ে দেওয়ার হাতছানি ফেরান্দো-ব্রিগেডের সামনে। খেতাব জয়ের মাঝে সেই বেঙ্গালুরু। ফুটবলপাগলদের স্মৃতিতে আট বছর আগের এক সন্ধে ফেরারই কথা। বাগানের একসময়ের প্রাণভোমরা সনি নর্ডিও (Sony Norde) কি নস্ট্যালজিক হয়ে পড়ছেন না? সুদূর মালয়েশিয়া থেকে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে হাইতিয়ান ম্যাজিশিয়ান বললেন, ”ইতিহাস একবার লেখা হয়ে গেলে তা মোছা সম্ভব নয়। আমরা সেদিন ইতিহাস তৈরি করেছিলাম।”

[আরও পড়ুন: অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রীর নাম করে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ, গ্রেপ্তার IPL ক্রিকেটার!]

বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) ঘরের মাঠে সেদিন সব অর্থেই রূপকথা লিখেছিলেন সনিরা। রেফারির শেষ বাঁশির পরে ফেন্সিংয়ে টাঙানো একশো ফুটের সবুজ-মেরুন পতাকাটা শরীরে জড়িয়ে নিতে চেয়েছিলেন সনি। তা না পারায় ঘামে জ্যাবজেবে ভিজে জার্সিটাই ছুঁড়ে দিয়েছিলেন গ্যালারিতে। উন্মাদের মতো মাঠে ছুটোছুটি করছিলেন সবুজ-মেরুনের অন্য সৈনিকরা। সাফল্যের জন্য তৃষ্ণার্ত ছিলেন সবাই। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল মাঠে। সনি বলছিলেন, ”আমার সবটাই মনে আছে। চোখের সামনে ভাসছে মুহূর্তগুলো। শুধু আমি কেন! সব প্লেয়ারদেরই মনে থাকার কথা ওই রাতটা।” হাইতিয়ান ম্যাজিশিয়ান ও মোহনবাগানের রোম্যান্সের কাহিনি যেন মান্না দে-র সেই বিখ্যাত গান, ‘হৃদয়ে লেখো নাম, সে নাম রয়ে যাবে’।আইএসএল সেমিফাইনালের দ্বিতীয় সাক্ষাতে হায়দরাবাদকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ফাইনালের ছাড়পত্র জোগাড় করে ফেরান্দোর মোহনবাগান। সুনীল ছেত্রী-রয় কৃষ্ণর বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ম্যাচটায় স্নায়ুর যুদ্ধ রয়েছে। রয়েছে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার। দুই কোচের মগজাস্ত্রের লড়াইও দেখা যাবে।

আট বছর আগের পটভূমি ছিল অন্যরকম। জিতলে চ্যাম্পিয়ন। ড্র করলেও। এই অবস্থায় সনিরা খেলতে নেমেছিলেন। বিরতির আগে গোল হজম করেছিল মোহনবাগান। বেঙ্গালুরু কঠিন প্রতিপক্ষ। আগের বারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন! কান্তিরাভায় পিছিয়ে থাকা মানে অনন্ত চাপ। সনির কর্নার থেকে বেলো রাজ্জাক হেডে বিষ ঢাললেন। সমতা ফিরে এল ম্যাচে। খেলার বয়স তখন ৮৭ মিনিট। সনি বলছেন, ”বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ম্যাচ সবসময়েই কঠিন। ২০১৪-১৫ মরশুমে বেঙ্গালুরু খুবই কঠিন প্রতিপক্ষ ছিল। সত্যি কথা বলতে কী ভারতীয় ফুটবল সেই সময়ে খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ছিল। আর ওদের ঘরের মাঠে গিয়ে খেলা তো রীতিমতো কঠিন ব্যাপার ছিল।” 

বেঙ্গালুরু থেকে কাট টু কলকাতা ময়দান। সোনার ছেলেদের একবার দেখার জন্য, ছোঁয়ার জন্য শহরের সব রাজপথ এসে মিশেছিল মোহনবাগান নামের মন্দিরে। সনি-পিয়ের বোয়া-বেলো-শিল্টনরা বাস থেকে ক্লাবতাঁবুতে ঢুকতেই শুরু হয়ে যায় উৎসব। টাইমমেশিনের সাহায্য না নিয়ে সনি ফিরে যাচ্ছিলেন অতীতে। বলছিলেন, ”ম্যাচের আগে যতটা সম্ভব নিজেদের হালকা রাখার চেষ্টা করছিলাম। গান শুনছিলাম। কী করতে হবে ম্যাচে সেই নিয়ে নিরন্তর কথা বলছিলাম কোচের সঙ্গে। আমাদের পুরো ফোকাস ছিল ম্যাচে। ভুল যত কম করা যায় সেই দিকে নজর ছিল আমাদের।”

এবারের মেগা ফাইনালের আগে বাংলার খেলাধুলোর ছবিটা মোটেও ভাল নয়। সন্তোষ ট্রফিতে ভরাডুবি ঘটেছে। রনজি ট্রফি ফাইনালে নেমে নাস্তানাবুদ হয়ে হারতে হয়েছে সৌরাষ্ট্রের কাছে। মোহনবাগানের হাতে বাংলার ব্যাটন। বাংলার বিজয়কেতন ওড়ানোর দায়িত্ব পেত্রাতোস-হুগো বুমো-প্রীতম কোটালদের উপরে। মালয়েশিয়ার ক্লাব তেরেঙ্গানু এখন সনির নতুন ঠিকানা। নতুন ক্লাবে প্রতিষ্ঠার জন্য বদ্ধপরিকর সনি। শয়নে, স্বপনে, জাগরণে যাঁর ফুটবল সেই ম্যাজিশিয়ান বলছেন, ”আমি এখন খুবই ব্যস্ত। নতুন ক্লাবে সই করেছি। নিজের কেরিয়ার নিয়ে বেশি ফোকাসড। তবে মোহনবাগান আমার হৃদয়ে থাকবে চিরকাল। দারুণ সময় কাটিয়েছি মোহনবাগানে। ইদানীং, মোহনবাগানের খেলাও খুব একটা দেখা হয় না আর। তবে মোহনবাগানের বেশ কয়েকটি ম্যাচের হাইলাইটস দেখেছি। আর তাতেই বুঝতে পেরেছি এই দলটা খুবই শক্তিশালী। ভাল দল না হলে ফাইনালে পৌঁছনো সম্ভব নয়। ছেলেরা কঠিন পরিশ্রম করেছে তার ফলও পেয়েছে।”

শনিবারের ফাইনালের কেন্দ্র গোয়া। সমুদ্রে ঘেরা গোয়াতেও ইতিহাস লিখেছিল মোহনবাগান। সালিয়ুর হেডে চার্চিল ব্রাদার্সকে হারিয়ে ভারতসেরা হয়েছিল মোহনবাগান। এবার স্প্যানিশ কোচ ফেরান্দো স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। সনি কি সেই ফাইনাল দেখবেন? পুরনো স্মৃতিতে কি ভাসবেন? সনি বলছেন, ”ফাইনাল আমার পক্ষে দেখা সম্ভব হবে না। ফাইনাল যখন শুরু হবে, তখন মালয়েশিয়ায় রাত। পরের দিন আবার ট্রেনিং রয়েছে। তবে আমি ফাইনালের হাইলাইটস দেখবো।”

শনিবার জিতলে সাফল্যের চুড়োয় পৌঁছবে মোহনবাগান। একসময়ে সনির ম্যাজিকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছিল সবুজ-মেরুন। তবুও কি তুলনার পরীক্ষায় বসতে হয়নি তাঁকে? পূর্বসূরি ব্যারেটো-ওডাফার সঙ্গে তুলনা এসেছিল। তুলনা এসেছিল পূর্বসূরিদের দলের সঙ্গে সনির দলের।

আচ্ছা যদি এমন হতো, সনির মোহনবাগান আর ফেরান্দোর দলের টক্কর হতো মাঠে? কে ফুল ফোটাতেন? সনি বলছেন, ”আমার সময়ে মোহনবাগান ছিল ভারতের সেরা দল। সময় এখন বদলে গিয়েছে। আমার সময়ের মোহনবাগান আর এখনকার মোহনবাগানের মধ্যে অনেক পার্থক্য। এখন অনেক কিছুর সুবিধা আছে। আইএসএলের জন্য প্রতিটি দলের পরিকাঠামোও বেশ ভাল। তবে আমি এখনও বিশ্বাস করি ২০১৪-১৫ মরশুমের মোহনবাগান দারুণ শক্তিশালী এক দল ছিল।”

আট বছর আগের বেঙ্গালুরুতে ছিল আলো আর আলো। সনিদের বিজয়গাথা দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দক্ষিণের শহরে হাজির হয়েছিলেন সবুজ-মেরুন সমর্থকরা। আগামী শনিবার বিশালাকায় পতাকা হাতে, সবুজ-মেরুন জার্সি আর আবিরে সেজে গোয়ায় উপস্থিত থাকবেন মোহনবাগান সমর্থকরা। তাঁদের সমষ্টিগত ডেসিবেলে বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ঝরবে প্রীতমদের। আকাশ বাতাস মুখরিত হবে ‘জয় মোহনবাগান’ ধ্বনিতে। সনির সময়েও এরকমই ধ্বনি উঠত, বাতাসে মিশে থাকত সবুজ-মেরুন আবিরের গন্ধ। আরও একবার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ হাজির।

[আরও পড়ুন: ‘এরা কারা যারা ওর সমালোচনা করে?’, কোহলি রানে ফিরতেই নিন্দুকদের তোপ পাক তারকার]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement